‘জালিয়াতি’র তথ্য প্রকাশ করবেন বিসিএস বঞ্চিতরা
অক্টোবর ১১, ২০১৫ ঢাকা: ৩৪তম বিসিএসে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কিছু ক্যাডার পদে মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বঞ্চিতরা। শিগগিরই এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন নন-ক্যাডার পদে মনোনয়নপ্রাপ্তরা।
আর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) বলছে, তাদের এ দাবি ভিত্তিহীন। পিএসসিতে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
মেধাবীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে মেধা ও প্রাধিকার কোটা আলাদা করে আবারও চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দাবিতে নন-ক্যাডার পদপ্রাপ্তরা প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
ক্যাডার বঞ্চিত একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন, পিএসসির ‘কতিপয়’ কর্মকর্তার যোগসাজোশে অনেক ক্যাডার পদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পদ থাকলেও ক্যাডার পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। পিএসসির ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। অতীতে কোনো বিসিএস নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠেনি।
গত ২৯ আগস্ট ৩৪তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পিএসসি, যাতে ক্যাডার পদে দুই হাজার ১৫৯ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। আর নন-ক্যাডার পদে মনোনয়ন পান ছয় হাজার ৫৮৪ জন।
প্রার্থীদের অভিযোগ, কোটা এবং প্রাধিকার পদ আলাদা না করায় বঞ্চিত হয়েছেন মেধাবীরা। ক্যাডার পদের ৪০৪টি পদ শূন্য রাখা হয়েছে।বিগত বছরগুলোতে এমন শূন্য রাখা হতো না।
তারা আরও অভিযোগ করেন, প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ ধরে নিলে ২১ জনকে সুপারিশ করতে হয়, অথচ তিন জনকে নিয়ে বাকিদের নন-ক্যাডারে রাখা হয়েছে।
পিএসসি কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের কথা বললেও প্রার্থীদের দাবি, মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও জেলা কোটা থাকা সত্ত্বেও তাতে সুপারিশ করা হয়নি।
উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, গণিতে শূন্য পদ ৪৭, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় একজনকেও না পাওয়া গেলে ৩৩ জনকে সুপারিশ করতে হয়। কিন্তু সুপারিশ পেয়েছেন ২৫ জন।
মেধা তালিকা প্রকাশ না করা হলেও যিনি প্রথম হয়েছেন, পিএসসি সদস্যদের ফোন করে তার স্থান জানতে পারাটা স্বজনপ্রীতির মধ্যে পড়ে বলেও দাবি করেন তারা।
বঞ্চিতরা দাবি করেন, একই অফিসের ২১ জন ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেয়েছেন।
প্রার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় রাজাকারের ছেলে-নাতনিরা ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেয়েছেন।
ক্যাডার পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য পিএসসির কর্মকর্তারা ‘নাম উল্লেখ করে সরাসরি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের’ও পরামর্শ দিয়েছেন। এমন অডিও তাদের কাছে রয়েছে জানিয়েছেন। তারা বলেন, তাও প্রকাশ করা হবে।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের্ একজন কর্মকর্তার সন্তান প্রথম দফায় লিখিত পরীক্ষার ফলের তালিকায় নাম না থাকলেও দ্বিতীয় দফায় প্রকাশের পর তিনি প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন বলে দাবি তাদের।
তারা আরও অভিযোগ করেন, ফল প্রকাশের আগেই পররাষ্ট্র ক্যাডারের প্রথম হওয়া প্রার্থী জানতে পেরেছে তার ফল ‘পজেটিভ’।
নন-ক্যাডার পদের প্রার্থীরা বলেন, মেধা তালিকা প্রকাশ না হলেও মেধাস্থান জানতে পারাটা স্বজনপ্রীতি।
ক্যাডার পদ প্রত্যাশীরা বলেন, একজন শিক্ষার্থীর সারা জীবনের স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়া। কিন্তু পদ থাকতেও পদ না পাওয়া এবং দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ফল প্রকাশ করায় তাদের সে স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে।
দীর্ঘ তিন বছের ধরে প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা ৩৪তম বিসিএসে এসব দুর্নীতির অভিযোগের ‘তথ্য-প্রমাণ’ নিয়ে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান তারা।
তবে প্রার্থীদের এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন পিএসসি চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ।
রোববার বলেন, এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
৪০৪টি পদ শূন্য রাখার প্রশ্নে তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ক্যাডার পদ দেওয়া হয়েছে। আমরা ক্রাইটেরিয়ার বাইরে কাউকে দিতে পারি না।
ক্যাডার বঞ্চিতরা রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে আগারগাঁও পিএসসি ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চাকরি প্রার্থীরা অংশ নেন।
আন্দোলনকারীদের দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ফল পুর্নবিবেচনারও কোনো সুযোগ নেই।
পিএসির একজন কর্মকর্তা জানান, ৩৪তম বিসিএসে উঠা বিভিন্ন প্রশ্ন উঠায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হতে পারে।
অক্টোবর ১১, ২০১৫