মেয়র আইভীর দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

অক্টোবর ১১, ২০১৫

27ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটিতে পার্ক নির্মাণ, দোকান ও ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন করেছে একটি শক্তিশালী অনুসন্ধান টিম।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র  অনুসন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, অনুসন্ধানের পর দুদক শিগগিরই তার কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠাবে। প্রয়োজনীয় নথিপত্র হাতে পাওয়ার পর দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ শনিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বলেন, এ বিষয়ে সম্প্রতি আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি। যেহেতু এটা অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তাই উপসংহারে আসার আগে মন্তব্য করতে চাই না।
এদিকে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হলেও এখনও এ বিষয়ে অবগত নন বলে  জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

তিনি বলেন, দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়টি প্রথম শুনলাম। এ বিষয়ে এখনও আমি কিছুই জানি না। শামীম ওসমানই (সংসদ সদস্য) এসব করাচ্ছেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক মাধব রায়ের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি নাসিকের তিনটি বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ তুলে ধরেছে। এ তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-২ অধিশাখার উপসচিব কাজী আসাদুজ্জামান ও নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ছিদ্দিকুর রহমান।

এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার যেহেতু দুদকের, তাই রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটিকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ চিঠি পাঠায়।

চিঠির পর স্থানীয় সরকার বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রাথমিকভাবে যাছাই করে দুদক তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে। এ টিমে রয়েছেন-দুদকের উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, সহকারী পরিচালক শেখ আবদুছ সালাম এবং উপ-সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে মেয়রের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে জাতীয় সংসদে অভিযোগ তোলেন ওই জেলার সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। চলতি বছরের ৪ মার্চ জাতীয় সংসদের ৫ম অধিবেশনে তিনি এ বিষয়ে কয়েকটি লিখিত প্রশ্ন উপস্থাপন করেন। তার প্রশ্ন ও অভিযোগের সূত্র ধরেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ৬ এপ্রিল এ সংক্রান্ত তদন্ত টিম গঠন করে। গত আগস্ট মাসে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার বিভাগে জমা দেয়া হয়।

দুদক সূত্র জানায়, চলতি বছরের আগস্টে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি করপোরেশন শাখার উপসচিব সরোজ কুমার নাথের সই করা একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে দুদক সচিব মাকসুদুল হাসান খানের কাছে। চিঠিতে প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পার্ক নির্মাণসহ দোকান ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে তদন্তকারীরা এমন সব অনিয়মের সন্ধান পেয়েছেন, যাতে মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তাই অনিয়মের বিষয় দুদকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা তাদের স্ত্রীরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে পারেন না। অথচ ফতুল্লার পঞ্চবটীতে বিনোদন পার্ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জুলফিয়া ইন্টারন্যাশনালের দুজন অংশীদারের একজনের স্বামী চুক্তি সম্পাদনের সময় নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় (বর্তমানে সিটি করপোরেশন) এবং আরেকজনের স্বামী ঢাকা সিটি করপোরেশনে কর্মরত ছিলেন। স্বামীর তথ্য গোপন করে তারা তখন বাবার নাম ব্যবহার করেন। ব্যবসায়িক কোম্পানির অংশীদার হওয়ার জন্য কোনো অনুমতিও তারা নেননি। এরা হলেন কানিজ ফাতেমা ও লীজা আক্তার।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তির শর্ত লংঘন করে নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও পার্কটি সিটি কর্পোরেশনের কাছে বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জুলফিয়া ইন্টারন্যাশনাল। অথচ এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

কানিজ ফাতেমার স্বামী মো. অরুণ মোল্লা তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় কর্মরত ছিলেন। লীজা আক্তারের স্বামী শামসুল আলম কর্মরত ছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনে। জুলফিয়া ইন্টারন্যাশনালের অংশীদার বা পরিচালক লীজা আক্তার ও কানিজ ফাতেমাকে দিয়ে কোম্পানি করে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার আওতাধীন এলাকায় পার্কে অস্থায়ী স্টল নির্মাণের চুক্তি করে ৪০ থেকে ৫০টি স্থায়ী দোকান নির্মাণ করেন। বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জেনেও চেপে গেছে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন যে তথ্য দিয়েছে তাও সঠিক ছিল না বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা রয়েছে।

প্রতিবেদনে মেয়রের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন মার্কেটে দোকান ও ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে।  তদন্ত প্রতিবেদনের ৯.২ অনুচ্ছেদে পর্যালোচনা ও মন্তব্য অংশে বলা হয়েছে, চাষাঢ়া পৌর (সিটি) মার্কেটের ২য় তলার ৪ নং এবং ৫ নং দোকানটি জনৈক আবু সাইদের স্ত্রী আয়েশা বেগমের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। আবার শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের কথা উল্লেখ করে আরেকটি দোকান আবু সাইদকেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ এ সংক্রান্ত নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো ব্যক্তিকে বা তার পরিবারের সদস্যদের একটির বেশি দোকান বরাদ্দ দেয়া যাবে না।

অক্টোবর ১১, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.