মোদি মুখ খুললেন, না খুললেই ভালো করতেন

অক্টোবর ১১, ২০১৫

19
পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মৈত্রীয় দেবী তার ‘ন হন্যতে’ উপন্যাসে গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে তার স্বামীর একটি মজার যুক্তি তুলে ধরেছিলেন- প্রাণী যখন হত্যা করব; বড়টাই করব। দশটা পাঠা বা ছাগল বধের চেয়ে একটা গরু বধ অনেক ভালো। অনুপাতে দুইটা সমান। এতে অন্তত নয়টা প্রাণী বেঁচে যায়।

ব্রিটিশ ভারতে ‘বিফ ইটারস অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি গরুর মাংসখোরদের সংগঠন ছিল। সংস্কারবাদী ওই হিন্দু যুবকেরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই গরুর মাংস খেতেন। সবারই জানা কথা তাদের মাথা থেকেই ভারতে নবজাগরণের সূচনা হয়।

এখনো কেরালাসহ অনেক জায়গায় হিন্দুরা মুসলমানদের মতোই গরুর মাংস খায়। সেসব রাজ্যে গরুর মাংস কেনা-বেচাও প্রকাশ্যেই ঘটছে।

এতো গেলো এ সময়ের কথা। এবার পুরনো কথায় আসা যাক। বেদের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের আদি বাসিন্দারা গরুর মাংস খেতেন; ঋষি থেকে শুরু করে বর্ণহিন্দুরাও এর বাইওে ছিলেন না। তবে পরবর্তী সময়ে গরুর মাংস খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, কৃষিভিত্তিক ভারত-সমাজে কৃষি-কাজ প্রধানত গরুর ওপর নির্ভরশীল ছিল। গরু খেয়ে সাফ করে দিলে কৃষির তা হলে বারোটা বাজবে। আল-বেরুনির ভারততত্ত্বেও এই মতের সমর্থন মেলে।

তবে আল-বেরুনি আরেকটি কথা জানিয়েছেন; উষ্ণ আবহাওয়ার দেশ ভারতে গরুর মাংস ছিল গুরুপাচ্য। এতে অনেকের বিশেষত ঋষিদের হজমে গণ্ডগোল দেখা দিত। এতে তাদের ধর্মে-কর্মেও বিঘ্ন ঘটত। ফলে তারাই গরুর মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ করে দেন। অন্য অনেকের মতোই আল-বেরুনির ধারণাও ছিল অনুমাননির্ভর ও শোনা কথার ওপর ভর করে। এটা সত্যি হলে মহিষের মাংসও একইভাবে নিষিদ্ধ করা হতো। মহিষও গরুর মতো কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মহিষের মাংস গরুর মাংসের মতোই গুরুপাচ্য। অথচ মহিষবলি ছিল প্রাচীন ভারতের সবেচেয়ে পবিত্রতম প্রথা; এখনো তাই। বলি দেওয়া মহিষের মাংসকে উচ্চবর্ণের হিন্দুসহ অনেকেই মহাপ্রসাদা মনে করেন। যারা কখনো মাংস ছুয়েও দেখেননি, তারাও বলি দেওয়া মহিষের মাংস মহাপ্রসাদ মনে করে একটু চেকে দেখেন। এতে নাকি পুণ্য হয়।

গরুর মাংস নিষিদ্ধ হওয়ার একটি নতুন তথ্য হাজির করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ভাষাতত্ত্বের পণ্ডিত কলিম খান ও তার সহকর্মী রবি চক্রবর্তী। কলিম খানের আবিষ্কৃত ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি দিয়ে প্রাচীন ভারত-সমাজের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হচ্ছে। তো তারা জানাচ্ছেন, ‘গো’ একটি অতি প্রাচীন সংস্কৃত শব্দ এবং শব্দটি বিভিন্ন আকারে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় উপস্থিত আছে। গমন করা বা যাওয়া অর্থে ‘গো’- আবার পৃথিবী, সূর্য, গবাদী পশু ইত্যাদি অনেক অর্থে শব্দটি সংস্কৃতিতে আছে। আবার যেহেতু পণ্য বা কমোডিটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, সেহেতু পণ্য অর্থেও ‘গো’ শব্দটি যুক্তিযুক্ত। বৌদ্ধ গ্রন্থগুলোর সাক্ষ অনুযায়ী বুদ্ধের নীতি ও আদর্শ প্রচারে বণিকশ্রেণি বা পণ্যবাদীদের গৌরবময় ভূমিকা ছিল। ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে ভারতে এক সময় বৌদ্ধমতের পরাজয় ও ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে।

এটা ঘটে হর্ষবর্ধনের রাজত্বের ঠিক পরপরই। এই সময়েই চতুর্বর্ণাশ্রম প্রথা, বেদপাঠে শূদ্রের অধিকার হরণ এবং কালাপানি পারের ওপর জোরালো নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এই যুগেই গো-মাংস ভক্ষণ বা পণ্যবাদীতা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ধর্মের কলে এই গো-মাংস বা পণ্য পদবাচ্যটি কেবল একটি মাত্র প্রাণীতে এসে ঠেকল। আর সব ঠিক থাকলেও ধর্মের বিধানে নিষিদ্ধ হয়ে গেল গো-মাংস ভক্ষণ।

কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী বিস্তৃত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও যুক্তি দিয়ে তাদের স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করেছেন; সেই বিস্তৃত ব্যাখ্যায় যাওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। এখানে কেবল সামান্য সূত্র ধরার চেষ্টা। এই দুজনের ব্যাখ্যা অবশ্য অ্যাকাডেমিক পণ্ডিতরা হজম করতে পারেননি; আবার ফেলে দিচ্ছেন না। তারা নিশ্চয়ই আরো খোঁজাখুঁজি করছেন, তা করতে থাকুক। সে আরেক গবেষণা। এবার মোদির কথায় আসা যাক।


ভারতের কথাবাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে মুখ খুলনে। তবে তিনি মুখ না খুললেই ভালো করতেন। গত বৃহস্পতিবার বিহারের রাজ্যসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদি সেখানে দুটি সমাবেশে ভাষণ দেন। তার ওই ভাষণে আতঙ্কিত হওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে। তিনি মূল সমস্যা এড়িয়ে গিয়ে হিন্দু-মুসলমানদের সবক দিয়ে বললেন, নিজেরা নিজেরা লড়াই না করে তাদের উচিত দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এ তো চমৎকার কথা; কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পঞ্চপাণ্ডবদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যুধিষ্ঠিরের মতোই তিনি ছলচাতুরির আশ্রয় নিলেন। কৌরবপক্ষের জীবিত বীর অশ্বত্থামাকে মৃত্যু ঘোষণা দিয়ে কৌরবদের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছিলেন যুথিষ্ঠির। তিনি মিথ্যা বলেননি। ধর্মপুত্র হিসেবে তাকে মিথ্যা বলতে মানা। কিন্তু যুধিষ্ঠির যা বললেন, সত্যের আড়ালে মহামিথ্যা লুকিয়ে ছিল।

আসলে মারা গিয়েছিল অশ্বত্থামা নামে একটি ঘোড়া। অশ্বত্থামার মৃত্যুর ঘোষণা দিলেন চড়াগলায়; আস্তে করে বললেন, ওটা মানুষ না; ঘোড়া। ভারতের এ কালের ‘সত্যবাদী যুথিষ্ঠির’ নরেন্দ্র মোদি চড়াগলায় হিন্দু-মুসলিমকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিলেও গো-কাণ্ড নিয়ে যে ভারত বহু জাতিসত্তার মূল্যবোধ হারাতে বসেছে, সে বিষয়ে তিনি নীরব রইলেন।গরুর মাংস খাওয়ার গুজবে উত্তর প্রদেশের বিসারা গ্রামের ইখলাক হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন ভারতজুড়ে তোলপাড় চলছে। ভারতরাজ ইন্দ্র মহাশয় তখন নীরব ভূমিকা নেওয়ায় উচিত মনে করেছিলেন। তার নীরবতা নিয়ে চারপাশ থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের উত্থান এবং মোদির ওই নীরবতার প্রতিবাদে জবাহরলাল নেহেরুর ভাগিনী নয়নতারা সেহগাল তার সাহিত্য আকাদেমি পদক ফিরিয়ে দিয়েছেন। এর পরদিনই আরেক লেখক মনোজ বাজপেয়ী একই কারণে তারও সাহিত্য আকাদেমি পদক ফিরিয়ে দেন। জীবন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে তিনি এই পদক ফিরিয়ে দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী একটা বাচাল। কেন তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বলছে না, বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা হবে।

এর কয়েকদিন আগে ভারতের প্রেস কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মার্কে-ু কাটজু মোদি ও তার সভাসদদের উদ্দেশ্য করে আরো কঠিন কথা বলেছেন। ঠোঁটকাটা হিসেবে মার্কে-ু কাটজু বরাবরই সুপরিচিত। এবার তিনি বললেন, আমি গরুর মাংস খাই এবং গরুকে মা মনে করি না; এটি কুকুর ও ঘোড়ার মতোই একটি প্রাণী। নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের হিন্দুরা নিয়মিতই গরুর মাংস খায়। পার তো তাদের গিয়ে বন্ধ করো। এই পর্যন্ত বলে থেমে থাকেননি তিনি, আরেকটু বাড়িয়ে বললেন, ভারতের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই বদমাশ, নিচ, চোর ও লুটেরা। এদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। শনিবার (৩ অক্টোবর) সকালে বারানসির এলবিএস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই তিনি এমন বক্তব্য দিলেন।

পাল্টা বক্ত্য বিজেপি-আরএসএস নেতাদের দিক থেকেও কম আসছে না। তাদের গলা ছিল একশ বিশ ডেসিমেল চড়া। সমাজবাদী দলের নেতা লালু প্রসাদ যাদব ইখলাক-কাণ্ডে প্রতিবাদ জানালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তার কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, যাদবের সময় উত্তর প্রদেশ জঙ্গলরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। এরপর বিহারের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে এ রাজ্যে গো-হত্যা নিষিদ্ধ করা হবে। বিজেপির সংসদ সদস্য সাক্ষী মহারাজ আরেকটি এগিয়ে বলেছেন, গো-মাতা রক্ষা করতে তিনি মরতে যেমন প্রস্তুত, মারতেও প্রস্তুত।

এসব গলাবাজির পর ধারণা করা হচ্ছিল নরেন্দ্র মোদি একটি গঠনমূলক বক্তব্য দিয়ে সংকট মোচনে এগিয়ে আসবেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুর্খাজি যেখানে বলেছেন, ভারতীয় সভ্যতার আসল মূল্যবোধ, সহনশীলতা, বৈচিত্র্য ও বহুত্বের ঐতিহ্যকে কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না, সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিলেন তার উল্টো অবস্থান। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে দেশটির সুশীল সমাজের লোকজন যখন ভারতের বর্তমান এ অবস্থা নিয়ে হতাশ, এবং মোদির মৌনব্রত পালন নিয়ে বিরক্ত, তখন মোদি গত বৃহস্পতিবার বিহারে নির্বাচনী ভাষণে তার নীরবতা ভাঙলেন। ওই ভাষণে তিনি লালু প্রসাদ যাদবের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ‘হিন্দুরাও গরুর মাংস খায়’- লালু প্রসাদের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোদি বলেন, ওই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি যাদব সম্প্রদায়কে অপমান করেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, যাদবরা কি গরু খায়? এটা কি যাবদ ও বিহারের জন্য অপমান নয়?

মোদির ওই ভাষণ আগুনে ঘি ঢালার মতো। তিনি লালু প্রসাদের বিরুদ্ধে যাদব সম্প্রদায়কে উস্কে দিতে চাইলেন। যাদবরা গরু খায় কি না খায়, সেটা বড় প্রশ্ন না। বড় প্রশ্ন ছিল অনেক হিন্দুই গরু খায়; কিন্তু খড়্গটা মুসলমানদের ওপর কেন? আর গরুর মাংস রপ্তানিতে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় অস্থানে রয়েছে। যদিও তাদের দাবি তারা মহিষের মাংস রপ্তানি করে থাকে। সেটা তেজারতির ব্যাপার। ধর্ম আর তেজারতি এক সঙ্গে যায় না। বরং এখন তেজারতিই সবচেয়ে বড় ধর্ম। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ গরুর চামড়া রপ্তানি হয় ভারতে। এই চামড়া দিয়ে কেবল বাহারি ব্যাগ বা পোশাকই তৈরি হয় না; জুতাও তৈরি হয়। জুতা আবিষ্কারের পর থেকে ভারতের কেউ জুতা পরেনি এমন পরিসংখ্যান কারো জানা নেই।

 

এই গেল তেজারতি বা বাণিজ্যের একটা দিক। হিন্দুত্ব গঙ্গায় ভেসে গেলেও বাণিজ্যকে তো আর ছাড়া যায় না, যেটা করেছিলেন প্রাচীন ঋষিরা।

অনেকের ধারণা ছিল গো-কাণ্ড নিয়ে ভারত-সমাজ যখন তার ঐক্য ও বৈচিত্র্য হারাতে বসেছে, তখন মোদি তার গঠনমূলক বক্তব্য দিয়ে এর একটা বিহিত করবেন। মোদির বক্তব্যের পর অনেকে নিশ্চয়ই হতাশ হয়েছেন; আতঙ্কিতও হয়েছেন সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে।

কিন্তু মোদি যা বললেন, সেটাই তার আদর্শ ও বিশ্বাস। বুঝতে হবে মোদি কোন মূলবোধ থেকে উঠে এসেছেন। এক সময়কার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) এ কর্মীর রাজনৈতিক উত্থানই সাম্প্রদায়িতক বিভেদ থেকেই। ওই বিভেদ জি-ইয়ে না রাখলে তার রাজনৈতিক কড়ি বলে তো কিছু থাকে না। গুজরাট নরমেধ যজ্ঞের রক্তের গন্ধ এখনো তার গায়ে লেগে আছে। ক্ষমতায় আসার পর মোদি অনেক বাগাড়ম্বর দেখিয়েছেন। কিন্তু তার ক্ষমতার অর্থবছর সময়ে ভারতে যে পরিমাণ কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, তা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

গুজরাত মডেল বা মেক ইন্ডিয়া এখন কেবল কথা সর্বস্ব হিসেইে প্রতীয়মান হচ্ছে। আর ললিত মোদিকে নিয়ে সুষমা স্বরাজ এবং আরো দুই নারীর কেলেঙ্কারি এখনো ভারতবাসীর হৃদয় থেকে মুছে যায়নি। জনগণের বিশাল প্রত্যাশা নিয়ে মোদি ক্ষমতায় আসলেও তার ছিটেফোটাও পূরণ করতে পারেনি। এ অবস্থায় পাঁচ বছর পর তার ক্ষমতার চেয়ারের পায়া অক্ষত থাকবে কিনা, তা নিয়ে মোদির কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট হচ্ছে। এখন ভোটের রাজনীতিতে মোদিও একটা অস্ত্রই অবশিষ্ট আছে, তা হলো সাম্প্রদায়িক বিভেদ উস্কে দেওয়া। ইখলাক হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তার সূচনা হচ্ছিল কেবল। আরেকটি বাবরি মসজিদ বা আরেকটি গুজরাত কাণ্ড ঘটাতে পারলে ভোটের রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদী মোদির রাস্তা মসৃণ হয়।

তবে আশার কথা হলো সাধারণ হিন্দুরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত। বাসারা গ্রামের অনেক হিন্দু ইখলাকের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছু উগ্র হিন্দুর জন্য তারা আর কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চান না। হিন্দুদের এই মনোভাব এখন উত্তর প্রদেশ ছেড়ে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে, তারা আর কোনো দাঙ্গার মতো ঘটনা চান না। কিন্তু মোদির চেলা-চামুণ্ডারা তো বসে থাকবে না। ওই অস্ত্র তারা ভেতরে ভেতরে শান দিচ্ছে। উত্তর প্রদেশে এক উগ্র হিন্দু যুবক বোরকা পড়ে মন্দিরে গরুর মাংস ছুড়ে পালানোর সময় ধরে পড়েছে। এতে শুধু ওই যুবকই ধরা পড়েনি; মুখোশ খুলে গেছে মোদি ও তার সঙ্গীদের হিন্দুত্ববাদী চরিত্রের। তারা সাম্প্রদায়িক বিভেদের অস্ত্র শান দিক। এখন ভরসা কেবল নিরীহ সাধারণ হিন্দুরা। তারাই রক্ষা করবে বহু মতের, বহু পথের ভারতভূমিকে। সেই শুভ বুদ্ধি তাদের জাগ্রত হচ্ছে।

লেখক : সাংবাদিক

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.