দুর্গোৎসবের আনন্দে মাতবে গোটা দেশ

অক্টোবর ১০, ২০১৫

18আর ক’দিন পরই শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দে মাতবে গোটা দেশ। এই উৎসবের আনন্দময় প্রস্তুতিই এখন দেশজুড়ে। মন্দির-মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা নির্মাণ, প্যান্ডেল-মঞ্চ স্থাপন, সাজসজ্জাসহ সেই প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়েও গেছে। সবখানেই সাজ-সাজ রব। এভাবেই ঢাকা মহানগরের ২২৫টিসহ দেশের প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার পূজামণ্ডপে এখন সাড়ম্বরে চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবের সূচনা ঘটবে ১৯ অক্টোবর। চলবে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। ১২ অক্টোবর দুর্গাদেবীর আবাহন তথা মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবীর আরাধনা। এর এক সপ্তাহ পর ১৯ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য আগের দিন ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনধ্বনি অনুরণিত হতে শুরু করবে। ২০ অক্টোবর মহাসপ্তমী এবং ২১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা। সনাতন পঞ্জিকা মতে এবার ২২ অক্টোবর একই দিনে মহানবমী ও বিজয়া দশমী পড়ায় ওই দিন দর্পণ বিসর্জন হবে। তবে সারাদেশে ২৩ অক্টোবরই বিজয়া শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত

নেওয়া হয়েছে। আবার বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে ২৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জন হওয়ায় রামকৃষ্ণ মিশন পূজামণ্ডপসহ অনেক মন্দির ও পূজামণ্ডপ এই সময়সূচিই অনুসরণ করছে। এ হিসাবে বরাবরের মতো এবারও পাঁচদিনজুড়েই চলবে উৎসবের নানা আয়োজন।

সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। আর বিদায় নেবেন (গমন) দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাবে এবার সারাদেশে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার ম পে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সরকারি হিসাবে অবশ্য ২৮ হাজার ৩৪৫টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির হিসাবে এবার ঢাকা মহানগরীর পূজাম পের সংখ্যা ২২৫, যা গতবারের তুলনায় ৫টি বেশি।

 

রাজধানীর বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চোখে পড়েছে। কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের দুর্গোৎসবকে ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বরাবরের মতো এবারও মন্দির মিলনায়তনের বারান্দায় খোলা শেডের নিচে নির্মাণ হচ্ছে প্রতিমা। আর মন্দিরের সামনের মাঠজুড়ে প্যান্ডেল স্থাপন ও মন্দিরের সাজসজ্জার কাজও শুরু হবে কয়েক দিনের মধ্যেই। এই মণ্ডপের প্রতিমা নির্মাণের দায়িত্ব যথারীতি প্রখ্যাত প্রতিমাশিল্পী সুকুমার পালের ওপরই বর্তেছে। রাষ্ট্রপতির পদকপ্রাপ্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এই প্রতিমাশিল্পী ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে মাঝখানের চার বছর বাদ দিয়ে এখানকার প্রতিমা তৈরি করে আসছেন।
পূরান ঢাকার মন্দির-মণ্ডপগুলোতে এখন থেকেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এই এলাকায় উৎসাহ-উদ্দীপনায় চলছে পূজার প্রস্তুতি। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি রোড, বাংলাবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপ-মন্দিরগুলোতে পূজাকে ঘিরে ব্যস্ততাও চোখে পড়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ী, রাজারবাগের বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির এবং মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরসহ অন্যান্য পূজামণ্ডপে আনন্দমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে বাঙালির শারদীয় উৎসবের নির্বিঘ্ন আয়োজন সারতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়ও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিও দুর্গোৎসবকে ব্যাপক উৎসবমুখর করে তুলতে প্রতিদিনই প্রস্তুতিমূলক সভা করছে। গতকাল শুক্রবার সব পূজাম প এবং পূজা কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের বর্ধিত সভায়ও এ নিয়ে নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ সমকালকে বলেছেন, শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল হিন্দু সল্ফপ্রদায় নয়, গোটা বাঙালিরই সার্বজনীন উৎসব। উৎসবটিকে সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.