সহপাঠীকে অপহরণের পর খুন করল তিন কিশোর!

সেপ্টেম্বর ২, ২০১৫

সবাই কিশোর। এই বয়সেই পেয়ে বসে টাকার নেশায়। টেলিভিশনের ‘সিরিয়াল’ দেখে সেই টাকা কামানোর পরিকল্পনা। সে মোতাবেক, নিজেদেরই সহপাঠীকে অপহরণ ও খুন। এরপর তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি। তবে মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার আগেই র‌্যাবের হাতে ধরা। সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো লাশ।
নাটোরে ঘটেছে এ ঘটনা। জেলা শহরের আলাইপুর আশরাফুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র তানভির হোসেনের (১১) লাশ গতকাল মঙ্গলবার উদ্ধার হয়।

তার আগেই গ্রেপ্তার হয় তানভিরের দুই সহপাঠী হুসাইদ হোসেন (১৫), বাইজিদ হাসান (১৪) এবং তাদের সহযোগী নাঈম হোসেন (১৫)। তানভির, হুসাইদ ও বাইজিদ ওই মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করত।
নাটোর সদর থানার পুলিশ ও র‌্যাব-৫ জানায়, শহরের উত্তর বড়গাছা হাফরাস্তা এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে তানভির গত ২৫ আগস্ট রাতে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর বাবা সাইফুলের মুঠোফোনে কল আসে।

অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, তানভিরকে অপহরণ করা হয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে। সাইফুল মুক্তিপণ দিতে রাজিও হন। কিন্তু আগে ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি। তখন একজনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। তবে সাইফুল বুঝে ফেলেন, কণ্ঠটি তানভিরের নয়। এরপর তিনি ঘটনাটি র‌্যাবকে জানান।
র‌্যাব-৫-এর উপপরিদর্শক (গোয়েন্দা) আবদুর রশিদ বলেন, হুসাইদের এক মামার মুঠোফোনের সূত্র ধরে গত সোমবার সিংড়া উপজেলার জোড়মল্লিক গ্রামের হুসাইদকে আটক করা হয়। ওই মুঠোফোন থেকেই সর্বশেষ সাইফুলকে ফোন করেছিল অপহরণকারীরা। পরে আটক করা হয় বাগাতিপাড়া উপজেলার নওপাড়া গ্রামের বাইজিদকে। দুজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আটক হয় শহরের কালুরমোড়ের নাঈম। জিজ্ঞাসাবাদে তিনজন তানভিরকে খুন করে মাদ্রাসার পাশের আবুল কাশেমের বাড়ির পায়খানার কাঁচা সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে।
লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে আটক হুসাইদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলে, তারা ভারতীয় টিভি চ্যানেল সনিতে একটি সিরিয়াল দেখে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। গত ২১ আগস্ট বন্ধু নাঈমের দোকানে এ পরিকল্পনা হয়। এ জন্য তারা বেছে নেয় সহপাঠী তানভিরকে। কারণ সে বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। খুব সহজেই টাকা পাওয়া যাবে।
আটক বাইজিদ হাসান বলে, ঝামেলা এড়াতে তানভিরকে প্রথমেই খুন করার পরিকল্পনা করে তারা। সে মোতাবেক, ২৫ আগস্ট আসরের নামাজের পর নতুন মুঠোফোন দেখার কথা বলে তানভিরকে মাদ্রাসার পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রশি দিয়ে তাকে ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে তারা। তাতেও মৃত্যু না হলে গলায় ক্ষুর চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে বন্ধু নাঈমের দোকানে গিয়ে গায়ের রক্ত পরিষ্কার করে তারা মাদ্রাসায় ফেরে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে আটক তিনজন ও তানভিরের বাবা-মাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় র‌্যাব ও পুলিশ। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতেই সেপটিক ট্যাংক থেকে তানভিরের লাশ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে লাশ নাটোর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
তানভিরের বাবা সাইফুল জানান, তিনি ছোটখাটো ঠিকাদারি কাজ করেন। ২৫ আগস্ট তিনি ও তাঁর স্ত্রী মাদ্রাসায় গিয়ে ছেলেকে দুপুরের খাবার খাইয়ে এসেছিলেন।

সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় যান। রাতে খাবার দিতে গিয়ে তানভিরকে মাদ্রাসায় পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পরদিন বাড়ি ফেরেন তিনি। পরে মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কিন্তু অপহরণকারীরা তানভিরের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতে না পারায় তিনি তা দেননি।
পুরো ঘটনা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অভিযানে নেতৃত্বে দেওয়া র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তাঁরা তৎপরতা শুরু করেন। তবে অপহরণকারীদের অবস্থান নিশ্চিত হতে কিছুটা সময় চলে যায়। তিনজনকে আটকের পর তাঁরা জানতে পারেন, তানভিরকে ঘটনার পরপরই হত্যা করা হয়েছে।

সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.