বঙ্গবন্ধু হত্যা : নিজ ভূমিকার ব্যাখ্যা দিলেন সফিউল্লাহ

সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫

sopসাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারি নাই। এ ব্যর্থতা নিয়ে আমি এতগুলো বছর চলছি-ফিরছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি যে, এ হত্যার পেছনে কারা আছে।’

সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন কে এম সফিউল্লাহ। জেলা পরিষদ প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ঢাকা বিভাগীয় সেক্টর কমান্ডার ফোরামের মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল ইসলাম ভূইয়াসহ অন্যরা।

সফিউল্লাহ বলেন, ‘কেউ কেউ আমাকে অনেক রকম কথা বলে। আমি তো একজন মানুষ। আমাকে বলে জামিল [কর্নেল শাফায়াত জামিল] যদি যেতে পারে, আমি যেতে পারলাম না কেন? জামিল গিয়ে কী করেছে? সে গিয়ে তো গুলি খেয়ে মারা গেছে। আমি মরলে কি তারা খুশি হতো? আমি গেলে তো ওই একই অবস্থা হতো। আমার কাছে যদি শক্তি না থাকে, একা গিয়ে তো কোনো লাভ হতো না। এজন্য যেতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা।’

সফিউল্লাহ আরো বলেন, ‘অনেকে বলেন যে বঙ্গবন্ধু আমাকে টেলিফোন করেছিলেন এবং আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। আমি অনীহা প্রকাশ করেছি। আমি যখন কয়েকবার বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোন করে না পাই, তখন আমার টেলিফোনটা আমার ওয়াইফের [স্ত্রীর] হাতে দিয়ে বলেছি তুমি ফোন করতে থাক। সে করছিল। একপর্যায়ে আমি টেলিফোনটা নিলাম। ততক্ষণে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় পার হয়ে গেছে। আমি টেলিফোনটা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফোন করতেই পেয়ে গেছি।

উনি আমার গলার আওয়াজ শুনে বলে উঠলেন, সফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালরে বোধহয় মেরে ফেলছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও। আমি তখন উনাকে এতটুকুই বলছিলাম স্যার আই এম ডুয়িং সামথিং। অলরেডি আমি শাফায়াত জামিলকে নির্দেশ দিয়েছি। ক্যান ইউ গেট আউট অব দি হাউস? উনি কিছু বললেন না। আমার মনে হলো, বোধহয় উনার সঙ্গে কেউ ছিল। টেলিফোনটা উনি টেবিলের ওপর রেখেছেন আমি শব্দ পেলাম। তাঁর প্রায় ২০-৩০ সেকেন্ড পরে আমি কিছু গুলির আওয়াজ পাই। আমার যতটুকু মনে হয়, সেটাই বোধ হয় বঙ্গবন্ধুর লাস্ট [শেষ]।’

বক্তৃতার একপর্যায়ের সফিউল্লাহ বলেন, ‘কারো প্রশ্ন থাকলে করুন আমি উত্তর দিতে রাজি আছি। আমি ঘুমাতে গেলে ঘুমাতে পারি না। আমার কাছে বঙ্গবন্ধুর মুখটা ফুটে ওঠে।’

এ সময় দর্শকসারি থেকে একটি চিরকুট আসে। চিরকুটটি দর্শকদের দেখিয়ে সফিউল্লাহ বলেন, ‘আমার কাছে একটা প্রশ্ন এসেছে। “আপনি কি মনে করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে তাঁর পরিবারের এমন কারো যোগাযোগ ছিল, যারা এখন আপনাকে অভিযুক্ত করছে?” আমার নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমি কারো নাম নিতে রাজি নই। তদন্ত হোক। সে বিচারে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। এর আগে কোনো কিছু বলব না।’

দর্শকদের আরো একটি প্রশ্নের উত্তরে সফিউল্লাহ বলেন, ‘আমি কেন বেঁচে আছি? আমি যদি চলে যেতাম তাহলে আমি একজন নরকী হতাম। আপনারা যদি মনে করেন আমাকে হত্যা করলে আপনারা খুশি হবেন, করেন। আমি বুক পেতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকব।’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.