সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা দেনা নিয়েও ডোন্টকেয়ার ডিপিডিসি

আগস্ট ৩১, ২০১৫

bidঢাকা : বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পাওনা টাকা দিচ্ছে না ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। কোম্পানিটির কাছে পূর্বের পাওনাসহ বর্তমানে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা পাবে পিডিবি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানতে চাইছে না রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ডিপিডিসি।

পিডিবি ডিপিডিসির কাছে যে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা পাবে এর মধ্যে ২ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা ডেসার (কোম্পানিটির পূর্ব নাম) আমলের পাওনা । এ পাওনা  মূলধনে রূপান্তর করে পিডিবিকে সমান সংখ্যক শেয়ার প্রদানের নির্দেশ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু ডিপিডিসি বোর্ড বিষয়টি নাকোচ করে কিস্তিতে পাওনা পরিশোধ করার আগ্রহ জানিয়ে পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে। তবে পিডিবি ডিপিডিসির প্রস্তাবে রাজি না হয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিপিডিসিকে অনুরোধ করেছে।

এছাড়াও বিদ্যুৎ বিক্রির টাকা বাবদ নতুন করে ডিপিডিসির কাছে আরো ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দেনা হয়েছে পিডিবির।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার চাইছে ডিপিডিসির শেয়ার যেন সরকারের হাতেই থাকে। এজন্য তাদের দেনাকে মূলধনে রূপান্তর করে সেই শেয়ার পিডিবিকে দিতে বলা হয়েছে।

গত ২ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোখলেসুর রহমান আকন্দ স্বাক্ষরিত চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত ডিপিডিসিকে জানানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ডিপিডিসি প্রতিনিধিকে নিয়ে পিডিবির সদস্য (অর্থ) সঙ্গে আলোচনা করে পাওনা সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ পিডিবির পাওনা ইক্যুইটিতে (মূলধন) রূপান্তর করতে একটি প্রস্তাবনা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোম্পানি বোর্ডে তুলবে। এসব বিষয়ে অগ্রগতি বিদ্যুৎ বিভাগকে জানাতে হবে।

সূত্র জানায়, পাওনা ইক্যুইটি রূপান্তরের বিষয়টি ডিপিডিসির বোর্ড অনুমোদন করেনি বলে পিডিবিকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে এই অর্থ তারা কিস্তিতে পরিশোধ করতে চায়।

এ বিষয়ে পিডিবির সদস্য (অর্থ) আজিজুল ইসলাম বলেন, ডিপিডিসি মন্ত্রণালয়ের আদেশ মানতে চাইছে না। আমরা তাদের প্রস্তাবে সম্মত নই। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত ১২ আগস্ট ডিপিডিসি চিঠি দেয়া হয়েছে।

পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার চাইছে ডিপিডিসির শেয়ার সাধারণ ক্রেতাদের কাছে না ছেড়ে নিজেদের হাতে রাখতে। কিন্তু ডিপিডিসি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চায়।  এটা তাদের জন্য লাভজনক। তিনি বলেন,  এই পাওনা সব টাকাই বিদ্যুৎ বিক্রির টাকা। এভাবে এক কোম্পানির কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা পড়ে থাকলে আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নজরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে বিষয়টি ডিপিডিসির পরিচালক (অর্থ) মো. গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি তাই বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।’

সূত্র জানায়, ঢাকার বিতরণ কোম্পানির মধ্যে ডিপিডিসির গ্রাহক সংখ্যা বেশি। কোম্পানিটি দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ২০ ভাগের বেশি বিতরণ করে থাকে। তাদরে আর্থিক অবস্থাও ভালো । চলতি অর্থ বছরে অন্তত ২০০ কোটি টাকা লাভ করবে। নতুন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে কোম্পানিটি আরও ১০০ কোট টাকার মতো অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করবে।  আগামী মাস থেকে ডিপিডিসির বিদ্যুতের দাম  প্রতি ইউনিটে ১৮ পয়সা করে বাড়ছে। অন্যদিকে পিডিবি এখনও আর্থিক লোকসানে আছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অথোরিটি বা ডেসা নামের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। ঢাকা মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের  ১৯৯১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ডেসার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় । ১৯৯৮ সালে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি বা ডেসকো নামের আরেকটি  সংস্থা গঠন করে ডেসার আওতাধীন কিছু এলাকার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয় । পরবর্তীতে  ২০০৫ সালে ডেসাকে বিলুপ্ত করে গঠন করা হয় ডিপিডিসি। ডিপিডিসি কার্যকর হয় ২০০৭ সাল থেকে।

প্রতিষ্ঠার সময় ঢাকা মহানগরী ও এর আশে-পাশের ৭ হাজার ৪৭৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ডিপিডিসির আওতাভুক্ত ছিল। তবে পরবর্তীকালে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে মহানগরীসংলগ্ন এলাকাগুলোর দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং ঢাকা মহানগরীর কিছু এলাকার দায়িত্ব ডেসকোকে ছেড়ে দেয়ায় বর্তমানে ডিপিডিসির আওতাভুক্ত এলাকা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.