রাজধানীর যানজট-জলজট ফুরোবে কবে? =আহসান হাবীব লাবলু

আগস্ট ২৯, ২০১৫

 

bbbbbদিনের পর দিন অসহনীয় যানজট জলজট বেড়েই চলেছে; অথচ সরকার এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারে নাই। দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনার আছে কি না তাও আমরা ঢাকাবাসীরা জানি না। রাস্তাঘাট অপ্রতুল- একথা বলে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটি এ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্লজ্জভাবে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি এবং বিচারবিহীন অবস্থাও চলছে। এর প্রতিফলন সমাজের নারী, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও নানা বিকৃতির মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই আইন ভঙ্গের

প্রবণতা চলছ্। রাস্তায় বেরোলেই দেখা যাচ্ছে নোংরা ফুটপাতে ভাঙ্গা অথবা নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তার যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করা রয়েছে; অলি-গলির মধ্যেও যানজট।
অনেক কসরত করে বাসে উঠবেন বা লাইনে দাড়িয়ে অনেকক্ষণ পর বাস আসলে জায়গাও হয়তো পেলেন বসার।

কিন্তু বসতে পারছেন না কারণ সিটগুলো গাদাগাদি করে বসানো হয়েছে এরপর প্রধান সড়ক অর্থাৎ যেগুলো অফিস আদালত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়মুখী সেই সব রাস্তা পেরুতেই উঠতেই আপনার ১ থেকে ১/২ ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। আর যদি ম্যাজিস্ট্র্যাট বা মোবাইল কোর্ট পেয়ে বসে তাহলে আরও কিছু সময় নষ্ট কাগজ ঠিক থাকলেই হলো। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েছে কিনা সিটগুলো নিয়ম মত আছে কিনা দেখার নাই, এরপর ট্রাফিক পুলিশ ৩/৪ জন আছেন এই সংখ্যা ও পর্যাপ্ত নয় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে। এরপর আর ও ১ ঘন্টা ১/২ ঘন্টা পর আপনি হয়তো কর্মস্থলে পৌছবেন।

ফিরবার পথে একই অবস্থা। এখন প্রশ্ন হলো একজন মানুষের প্রতিদিন ৫/৬ ঘন্টা যদি রাস্তায় থাকে তাহলে সে অফিসে কতক্ষণ কাজ করতে পারে বা তার মানসিক অবস্থাই বা কি হয়। এর প্রভাব ব্যক্তিজীবন সমাজ জীবনে কি পরিণতি ডেকে আনতে পারে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো কি তা নিয়ে ভাবে? এগুলো নিয়ে টেলিভিশনে দৈনিক পত্রিকাগুলোতে এমনকি বাসের যাত্রীদের মধ্যে হরদমই টক শো চলছে তবে শো আর শেষ হচ্ছে না। একদিন নিশ্চয়ই শো শেষ হবে এবং বিদ্রোহ হবে। হতেই হবে কারণ শাহবাগে, পল্টনে, মৌচাকে-মালিবাগে, মগবাজারে, মহাখালি, বালরামটর, বিজয় সরনী, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত. মিরপুর ১০ নং থেকে বিজয় সরনী মো. পুর থেকে কলাবাগন সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত কোন জায়গায় পর্যাপ্ত ট্র্যাফিক পুলিশ নাই এবং ব্যবস্থাপনার চরম অবহেলা মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও মনে করে অপ্রতুল রাস্তার অন্যতম সঙ্কটের পাশাপাশি ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বড় সঙ্কট।

কমিউনিস্ট পার্টি ঢাকা কমিটি থেকে অনেক দিন ধরেই আমরা বলে এসেছি আশু সমস্যা সমাধানে ঢাকা শহরে প্রায় ২০০টা ছোট ছোট ওভার পাস বা আন্ডার পাস করলে (২/৩ বৎসরের মধ্যে করা সম্ভব) ট্র্যাফিক ক্রসিং পয়েন্টগুলোতে যানজট অনেকাংশে কমতো। যা ফ্লাইওভার দিয়েও করা সম্ভব হবে না।
২০ বছরের জন্য (২০০৪-২০২৪) স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান করা হয়েছে। এর ভালো মন্দ দিক আলোচনা না করেই বলা যায় এটা শুরুতেই ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এতে বলা হয়েছিল ঢাকা শহরের জন্য একটি “একক কর্তৃপক্ষ” থাকবে। নির্বাচনে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে হঠাৎ করে ঢাকাকে দুইভাগ করা হলো। কিন্তু ঢাকা শহরের পয়:নিষ্কাশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে তার সামগ্রিক সমন্বয়ের জন্য একক কর্তৃপক্ষ চালু হলো না। উদ্দেশ্য যদি নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা না হয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকা হয় তাহলে নিজের বা দলীয় স্বাথের্র কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসবে না। নানান প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচিত (!) হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে যানজট সমস্যার সমাধানের বিষয়ে দুই মেয়র আত্মসমর্পণ করেছেন। ১০০ দিন হলো দুই মেয়র বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সমাধান করতে পারে নাই। উত্তরের মেয়র বলেছেন আর ৩ মাস লাগবে আর দক্ষিণের মেয়র বলেছেন একটা প্রজেক্ট পরীক্ষা করে দেখছি।

মেয়র সাহেবরা নিশ্চয়ই জানেন প্রতিদিন শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় ৪,৫০০ টন বর্জ্য নিষ্কাশিত হয়। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দুই মেয়রের কোন দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা নগরবাসী দেখছে না। আর বাগাড়ম্বর দেখি যে মেয়র সাহেবেরা অনেকের সাথে পরামর্শ করেছেন, অনেক আশাবাদ তৈরি করছেন।

মাতুয়াইল ডাম্পিং ষ্টেশনে এবং মহানগরের অন্যান্য এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৭৫ হাজার শিশু-কিশোর রি সাইক্লিং প্ল্যান্টের জন্য ৮০০ টন প্লাষ্টিক বর্জ্য টোকাই করে। অথচ পরিকল্পনা থাকলে সিটি কর্পোরেশন ডাম্পিং সেশনের সাথে রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট বসিয়ে জৈব সার এবং বিদ্যুৎসহ প্লাষ্টিক কাঁচামাল উৎপাদন করতে পারতো। সাথে সাথে এর একটা অংশ দিয়ে শিশু-কিশোরদের (এই পেশায় যুক্ত) শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারতো। অনেক দেশ বর্জ্য আমদানী করে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের জন্য। আমাদের এখানে সমন্বিত পরিকল্পনা থাকলে ডাম্পিং ষ্টেশনের সাথে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টেরও পরিকল্পনা নেয়া যেতো।

৪টা নদী ও প্রায় ৫০টা খালের নগরী ঢাকা অনেকগুলো প্লাবন ভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ খাল, নদীগুলো প্রায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে অল্প বৃষ্টিপাতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্লাবন ভূমিগুলো দখল করছে বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীন দলগুলোর লোকজন। যে খালগুলোর উপর দিয়ে বক্স কালভার্ট নির্মিত হয়েছে সেগুলো দিয়ে স্থল ভাগের উপরের পানি যেতে পারছে না এবং প্লাবন ভূমিতে পানি জমে থাকতে পারছে না। আর এ কারণেই ঢাকার অনেক অঞ্চলে বার বার সংস্কার করেও জলবদ্ধতা দূর করা যায় না।

ভবিষ্যতেও হবে না। নদী, খাল, পুন:খনন, প্লাবন ভূমি উদ্ধার, নদীর তীর দখলবাজদের হাত থেকে মুক্ত করে পানির অবাধ চলাচলের উপযোগী করে ঢাকা শহরের দীর্ঘস্থায়ী সামগ্রিক পরিকল্পনা পরিণতি ভয়াবহ হবে। প্রকৃতিকে বাধাগ্রস্ত করার কারণে পরে ঢাকা শহরকে একটি পরিত্যাক্ত নগরী ঘোষণা করতে হবে। ঢাকা শহরের এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এবং ঐতিহ্যবাহী এ শহরকে বাসযোগ্য করতে মানবিক চিন্তা সম্পন্ন ও প্রকৃতির সাথে সহ অবস্থানের নীতি নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.