ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি
আগস্ট ২৬, ২০১৫ ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি
‘ফুলবাড়ীর খনি দেখিয়ে এশিয়া এনার্জি লন্ডনে শেয়ার ব্যবসা করছে’
ফুলবাড়ী দিবস উপলক্ষে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ঢাকায় আয়োজিত সমাবেশে ২৬ আগস্ট ২০০৬ ইং দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আন্দোলনে শহীদ তরিকুল, আল-আমীন, সালেহীন-এর স্মৃতি প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করেছেন। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, এ চুক্তির ১ নং দফায় ছিল এশিয়া এনার্জিকে বিতাড়ণ করা হবে এবং দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে না। এই দফা বাস্তবায়ন করা হয় নি। বরং এশিয়া এনার্জি নাম পরিবর্তন করে জিএমএম নামে ফুলবাড়ীর খনি দেখিয়ে লন্ডনের শেয়ার বাজারে ব্যবসা করছে। আর ঐ শেয়ার ব্যবসার একাংশ ছড়িয়ে দেশে দালাল মন্ত্রী, সাংবাদিক, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, কনসালট্যান্ট তৈরি করছে। নেতৃবৃন্দ ঐ সব অপশক্তির অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, ফুলবাড়ীর জনগণ দেশের সম্পদ লুটপাটের যে কোন চক্রান্ত রুখে দাঁড়াবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চুক্তি অনুযায়ী হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি দাড় করানো হয়নি।
আজ ২৬ আগস্ট সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পথ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটি’র আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সংগঠক নূর মোহাম্মদ ও জাতীয় কমিটির সংগঠক, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। এসময় খালেকুজ্জামান, প্রকৌশলী বিডি রহমত উল্লাহ, অধ্যাপক এম এম আকাশ, ড. শামসুল আলম, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, সাইফুল হক, বজলুর রশীদ ফিরোজ, আব্দুস সাত্তার, ফিরোজ আহমেদ, মানস নন্দী, কিশোর রায়, শহিদুল ইসলাম সবুজ, মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন, মিহির বিশ্বাস, আলমগীর কবির, মীর মোফাজ্জেল মোস্তাক, মাসুদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জনসভায় ফুলবাড়ী সহ ৬ থানার মানুষদের অভিনন্দন জানিয়ে ফুলবাড়ীর চুক্তির প্রতি পূর্ণ সংহতি জানিয়ে ক্ষমতায় গেলে চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন। অথচ এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি, কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতীয় সম্পদ লুটপাটে যে কোন দেশি-বিদেশি চক্রান্ত রুখে দাঁড়িয়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এজন্য জাতীয় সম্পদের উপর শতভাগ জনগণের মালিকানা, খনিজ সম্পদ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে শতভাগ দেশের কাজে লাগানো এবং জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের জন্য সামগ্রিক উদ্যোগই কেবল জনস্বার্থে দেশের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। এজন্য জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।
উল্লেখ্য দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ ওই অঞ্চলের ৫ লক্ষাধিক মানুষ উচ্ছেদ, আবাদী জমি, পানি, পরিবেশ ধ্বংস করে, মাত্র ৬ শতাংশ রয়ালিটির বিনিময়ে অনভিজ্ঞ কোম্পানীকে পুরো খনির মালিকানা দেওয়া ও কয়লা বিদেশে রপ্তানীর চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐ অঞ্চলের মানুষসহ দেশবাসী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। উত্তাল আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে বিনা উস্কানীতে গুলি করে তিনজনকে হত্যা ও শতাধিক মানুষকে আহত করা হয়। ২৬ আগস্ট হত্যাকা-ের পর ঐ অঞ্চল জনগণের দখলে চলে যায়, গণঅভ্যূত্থান সংগঠিত হয়। ৩০ আগস্ট তৎকালীন সরকার জাতীয় কমিটির সাথে ৬ দফা চুক্তি করতে বাধ্য হয়।
ফুলবাড়ী দিবসে সকাল থেকে ফুলবাড়ীতে সভা-সমাবেশ, শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা ধরনের কর্মসূচি চলছে।
ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ২৬, ২০১৫