টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে বানভাসি লাখো মানুষ

জুলাই ৩১, ২০১৫

Volaঢাকা জার্নাল (চট্টগ্রাম): টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদী-খালের পানি বেড়ে চট্টগ্রামের ১৩ উপজেলার অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।  পানিতে ডুবেছে ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসলি জমি ও চিংড়িঘের। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।  অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে বানভাসিদের।  উপজেলাগুলোতে আভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তরের পতেঙ্গা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।  গত সাতদিনে চট্টগ্রামে ৯৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৭টায় জোয়ার শুরু হয়েছে।  ভাটা শুরু দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে।  সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে জোয়ার পুনরায় শুরু হবে।

টানা বর্ষণ ও জোয়ারের উপচে পড়া পানিতে সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ন ছাড়া সব কটি ইউনিয়ন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।  শঙ্খ ও ডলু নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে অর্ধশতাধিক বসত ঘর।  বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে আরো শতাধিক বসত ঘর।  কয়েকলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।  মৎসখামার পানিতে ডুবে গেছে।  কোন কোন এলাকায় বানভাসি লোকজন সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

বাজালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সিকদার জানান,‘সোমবার ও মঙ্গলবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় পানি কমতে শুরু করেছিল। বুধবার থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় আবারও পানি বাড়তে শুরু করে।  অনেক গ্রাম পানির নিচে ডুবে আছে।  এসব এলাকার লোকজন সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।’

এছাড়া উপজেলার আমিলাইষ, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, সোনাকানিয়া, ছদাহা, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন কেঁওচিয়া, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, নলুয়া, খাগরিয়া, ও চরতি সাতকানিয়া পৌর এলাকার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে আছে।

প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, চাম্বল, শেখেরখিল, গন্ডামারা, পুঁইছড়ি, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, গুনাগরি, কাথারিয়া, বৈলছড়িসহ ১৪টি ইউনিয়ন ও বাঁশখালী পৌরসভার কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।  পানিতে ডুবে গেছে মাঠ-ঘাট।  পুকুর ও খামার ডুবে মাছ ভেসে গেছে।

লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি, পদুয়া, পশ্চিম আমিরাবাদ, বড়হাতিয়া, সুখছড়ি, জলিলনগর এলাকায় বিভিন্ন খালে পানি বেড়ে গিয়ে আশপাশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।  বাড়িতে পানি ঢুকে কয়েকটি মাটির ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।  তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।  পাড়গুলোর কোন কোন অংশ ধ্বসে পড়েছে।

চন্দনাইশ উপজেলার পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।  চন্দনাইশ পৌরসভা, বৈলতলী, বরমা, বরকল, সাতবাড়িয়া, জোয়ারা, হাশিমপুর ও কাঞ্চনাবাদের আংশিক, দোহাজারী, ধোপাছড়ি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

এসব এলাকার আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  এছাড়া পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার দোহাজারী, দক্ষিণ হাশিমপুর, বড়পাড়া ও পাঠানীপুল এলাকা।

শ্রাবণের অঝোর ধারায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন, খরনা, কচুয়াই, বড়লিয়া, জঙ্গলখাইন, আশিয়া, কাশিয়াইশ, জুলধা, বড়উঠান, চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, শিকলবাহা, কোলাগাঁও, কুসুমপুরা, কেলিশহর, ধলঘাট, হাবিলাসদ্বীপ, দক্ষিভূর্ষি, হাঈদগাও ইউনিয়ন এলাকার লোকজন।

পানিতে ডুবেছে সুচক্রদন্ডী, ওয়াপদা রোড়ের প্রেস ক্লাব সড়ক, গুয়াদন্ডী, খাস্তগীরপাড়া, গার্লস স্কুল, খলিলুর কলেজ, মহিলা বিদ্যালয়, রামকৃঞ্ঝ মিশন, পোষ্ট অফিস, পাইকপাড়া এলাকা। বিভিন্ন ফসলি জমি ডুবে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের জুলধা, ডাঙ্গারচর ও বড় উঠান ইউনিয়নের বড় উঠান, দৌলতপুর ও শাহমীরপুর এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।  গ্রামীণ সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের শান্তির হাট, সাদীনগর, হাসনাবাদ, তাঁরাখো, ধুইল্যাছড়ি, নতুন পাড়া, কাঞ্চনহাট, বেদুয়া গ্রামের লোকজন।  এছাড়া ভুজপুর ইউনিয়নের আমতলী, পশ্চিম কৈইয়া, কোর্টবাড়িয়া, পূর্ব ভূজপুর, পাগলী ছড়ি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে আছে।

উপজেলার হালদা নদী, সর্ত্তা খাল, ধুরুং খাল, গজারিয়া খাল, বারমাসিয়া খাল, লেলাং খাল ও ফটিকছড়ি খালের পানি উপচে পড়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

হাটহাজারী উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাও পানিতে ডুবে আছে।  উপজেলার পূর্ব ফরহাদাবাদ, পূর্ব ধলই, এনায়েতপুর, গুমানমর্দ্দন, মির্জাপুর, চারিয়া রুদ্রপুর, মিরেরখীল, মোহাম্মদপুর, কাজিরখীল, নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী, মোজাফ্‌ফরপুর, জাফরাবাদ, রহিমপুর, ইছাপুর, পূর্বমেখল, ভবানীপুর, গড়দুয়ারা, উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শা, শিকারপুর, বুড়িশ্চর বাথুয়া, খন্দকিয়া এলাকার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে আছে।

এছাড়া আনোয়ারা, বোয়ালখালী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার অধিকাংশ নিচু এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।  পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বেশকটি গ্রাম।  পানি বন্দী হয়ে আছে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। ভেসে গেছে মৎস ও ক্ষেত খামার।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ৩১, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.