সোয়ান শ্রমিক আন্দোলন, শাহবাগে ৩ আগস্ট সংহতি সমাবেশ

জুলাই ৩১, ২০১৫

Swanঢাকা জার্নাল:তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস প্রদান, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বে-আইনীভাবে বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে আগামী ৩ আগস্ট সোমবার সংহতি সমাবেশ সংহতি সমাবেশ করবে সোয়ান গর্মেন্ট শ্রমিকরা। আর আগামী বৃহস্পতিবারের (৬ আগস্ট)মধ্যে পাওনা পরিশোধ না করলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন শ্রমিকরা।  

আন্দোলনরত সোয়ান গার্মেন্ট শ্রমিকদের লাগাতার অবস্থানের বিশতম দিন শুক্রবার (৩১ জুলাই)আন্দোলনৈর ২০ তম দিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৃষ্টিতে ভিজে শ্রমিকরা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ব্যানারে গত ১২ জুলাই থেকে টানা এ কর্মসুীচ পালন করছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের কার্যকরি সভাপতি সাদেকুর রহমান শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।

Minoti 1সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শ্রমিক নেতা শহীদুল্লাহ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মাহাবুব আলম, আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সাইফুল্লাহ আল মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু, এম এ শাহীন, জালাল হাওলাদার, মঞ্জুর মঈন, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদিন, মোজাম্মেল হোসেন মামুন, আসমা আক্তার, নুরুল ইসলাম, আব্দুস সালাম বাবুল, শাহজাহান, শফিকুল ইসলাম, সোয়ান গার্মেন্টের নেতা শেখ ফরিদ, জাকির হোসেন, মোর্শেদা আক্তার প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল, টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারশনের সভাপতি আবুল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমিন।

লিখিত বক্তব্যে শ্রমিকরা বলেন, চার মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস, বে-আইনীভাবে বন্ধকৃত কারখানা খুলে দেয়া এবং শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১২ জুলাই হইতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। গত এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ থেকে বেতন বাকি রেখে বে-আইনীভাবে কারখানা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

কারখানা খুলে দেয়া ও বকেয়া বেতন বোনাস এর জন্য প্রধানমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী, বিজিএমইএ সহ সংশ্লিষ্ট সকল অফিসে লিখিত আবেদন জানিয়েছি। কেউই আমাদের সমস্যার সমাধান করেনি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস সকল জায়গায় ধর্না দিয়েছি। ঘেরাও করেছি। বিজিএমইএ অফিসে পুলিশ দিয়ে আমাদের পেটানো হয়েছে। অন্যত্র চাকুরী নেয়ার চেষ্টা করে কিছু শ্রমিক চাকুরী পেলেও অধিকাংশ শ্রমিক বেকার।

Minotiসেংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় গত চার মাস যাবৎ চাকুরী হারা হয়ে অর্থের অভাবে সহস্রাধিক শ্রমিক না খেয়ে মরতে বসেছে। বাড়ী ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ীওয়ালা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এখন থাকার জায়গা নাই, খাওয়ার উপায় নাই। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে বাঁচার তাগিদে ঈদের দিন সহ আজ ২০ দিন যাবৎ জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

শ্রম মন্ত্রণালয় আমাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষে ১টি কমিটি করে চুপ চাপ বসে ছিল। এদিকে ইসলামী ব্যাংক আমাদের কোম্পানীর সাথে ৩০ বছর যাবৎ ব্যবসা করেছে। কোম্পানীর সম্পদ মর্টগেজ নিয়েছে। এখন তা আত্মসাৎ করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

গত ৩০ বছরে আমাদের শ্রমে-ঘামে শত শত কোটি টাকা মুনাফা করে এখন ইসলামী ব্যাংক আমাদের পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে উদ্যোগ না নিয়ে উল্টা শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সরকার, গার্মেন্ট মালিক, ইসলামী ব্যাংক ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা কেউই সোয়ান গার্মেন্টের শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বিবেচনায় নিয়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেনি। ফলে আন্দোলন-সংগ্রাম বাধ্য হয়েছি। অবস্থানের পাশাপাশি মিছিল ও ঘেরাও কর্মসূচী পালন করেছি। আন্দোলনের চাপে গতকাল ইসলামী ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে শ্রমিকদের ১ মাসের বেতনের সমান সহায়তা শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিজিএমইএ অফিস থেকে দেয়া হবে মর্মে কল-কারখানা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আমরা এই সিদ্ধান্তের লিখিত আদেশ প্রদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংবাদপত্র মাধ্যম জানতে পেরেছি যে বৃহস্পতিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সোয়ান গার্মেন্টের নারী শ্রমিকদেরকে মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন হতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রমিক কর্মচারীকে মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে প্রদানের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। কারখানা চালু সহ মৌলিক দাবি আদায় হয়নি। ফলে আমাদের আন্দোলন চলছে, আন্দোলন চলবে। শুধুমাত্র অবস্থান কর্মসূচি পরিবর্তন করে নিন্মোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করছি।

Minoti 5কর্মসূচিঃ আগামীকাল ১ আগস্ট হইতে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বৃহত্তর উত্তরা, গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, নারায়নগঞ্জ, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ি, রামপুরা, বাড্ডা ও মিরপুরসহ সকল গার্মেন্ট শিল্পাঞ্চলে সোয়ান গার্মেন্ট আন্দোলন সংহতি সভা ও প্রচারপত্র বিলি করা হবে।

আগামী ৩ আগস্ট বিকেল ৪ টায় শাহবাগে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

আগামী ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিন্মোক্ত দাবি মেনে না নিলে সারাদেশের সকল গার্মেন্ট শ্রমিকদের সংগঠিত করে ঐক্যবদ্ধভাবে তীব্র সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

 

 

Salimশ্রমিকদের দাবি

১। বকেয়া-বেতন ও ঈদ বোনাস প্রদান করতে হবে।

২। বন্ধ কারখানা চালু করতে হবে।

৩। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৪। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডন থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রমিক কর্মচারীকে মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করতে হবে।

 

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ৩১, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.