সাকার আপিলের রায় বুধবার

জুলাই ২৯, ২০১৫

Saka 1ঢাকা জার্নাল: মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় আগামীকাল বুধবার।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ৭ জুলাই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে এ আদেশ দেয়।

বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

আদালতে আপিল শুনানির সাকা চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএসএম শাহজাহান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

৫ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত তিন কার্যদিবসে সাকা চৌধুরীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান। এর আগে প্রথমে আসামি পক্ষে গত ১৬ জুন শুনানি শুরু করে ৮ কার্যদিবস ট্রাইব্যুনালে দেওয়া রায়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-জেরা এবং রায় সংক্রান্ত অন্যান্য নথিপত্র (পেপারবুক) উপস্থাপন করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান।

এরপর গত ৩০ জুন এবং ১ ও ৭ জুলাই তিন কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মানবতাবিরোধী অপরাধে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ন্যায় ও অতি প্রয়োজন দাবি করে যুক্তি পেশ করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি বাহিনী ও নিজস্ব বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। একই দিনে চার স্থান পর্যন্ত তাণ্ডব চালানো হয়। ১৯৭১ এর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এসব অপরাধ হয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর বেশি হামলা করা হয়; যেন তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। এসব অপরাধের চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল এ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছে। এ দণ্ড বহাল রাখার আর্জি পেশ করে রাষ্ট্রপক্ষ।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেও সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করেন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পরপরই গত ১৬ জুন শুরু হয় আপিল বিভাগে আসা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে পঞ্চম আপিলের শুনানি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড রায়ের বিরুদ্ধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল আবেদনটি আপিল বিভাগে পঞ্চম আপিল মামলা। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদীন ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর এ আপিল দায়ের করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। আপিলে আসামীপক্ষের শুনানির বিপরীতে রায় বহাল রাখার পক্ষে আর্জি পেশ করে যুক্তি উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সাকা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নং অভিযোগের প্রতিটিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড। ২, ৪ ও ৭ নং অভিযোগের প্রতিটিতে তাকে ২০ বছর করে জেল এবং ১৭ ও ১৮ নং অভিযোগে তাকে ৫ বছর করে জেল দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল-১। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।

যে চারটি হত্যা-গণহত্যার দায়ে সাকাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- ৩ নম্বর অভিযোগ-অধ্যক্ষ নুতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, ৫-নম্বর অভিযোগ-রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যা, ৬ নম্বর অভিযোগ-রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০ জনেরও বেশী লোককে গণহত্যা এবং ৮ নম্বর অভিযোগ- চট্রগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যার অভিযোগে।

২-নম্বর অভিযোগ রাউজানের গহিরা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় গণহত্যা, ৪ নম্বর অভিযোগ জগৎমল্লপাড়ায় ৩২ জনকে গণহত্যা এবং ৭ নম্বর অভিযোগে রাউজানের সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যার অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়াও ১৭ নম্বর অভিযোগ- মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে নির্যাতন এবং ১৮ নম্বর অভিযোগে চান্দগাঁওয়ের সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে সাকা চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

সাকা চৌধুরীকে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে হরতালে গাড়ী পোড়ানো ও ভাংচুরের এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তের স্বার্থে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২৮, ২০১৫।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.