ফেসবুক, গুগল বন্ধের পরামর্শ পরিকল্পনামন্ত্রীর

জুলাই ২, ২০১৫

kamal_1_photoঢাকা জার্নাল: ফেসবুক, গুগল ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের পরামর্শ দিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

শিক্ষার্থী অসন্তোষ এবং বিভিন্ন সময় তাদের আন্দোলন প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ কে এম নূর উন নবীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এ পরামর্শ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) রাজধানীর শেরে বাংলানগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০) দলিলের খাতভিত্তিক আলোচনা। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

সভায় উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ফারজানা আলম বলেন, কিছু হলেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। কথায় কথায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা লাগিয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গাছ কাটলেও তারা আন্দোলন করেন। পুকুর লিজ দিতে গেলে তারা বলেন, অতিথি পাখি আসবে না।

তাকে সমর্থন করে বেগম রোকেয়া রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, আমরাও অনেক সমস্যায় জর্জরিত। কারণে-অকারণে ছেলেরা আমাদের কার্যালয়ে, অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।

তাদের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী ফেসুবক, গুগলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এগুলোই সমস্যার মূল কারণ। এগুলো বন্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে। আমরা সবাই জানি, চীনে কোনো ধরনের ফেসবুক ও গুগল নেই।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক  ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগমসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয় নির্বাহ নিজস্ব খাত থেকেই করা উচিত। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পকিস্তানে ৫০ শতাংশ খরচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব খাত থেকে করে থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের এখানে তা ৮ থেকে ৯ শতাংশ। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি খরচে মধ্যপ্রাচ্যের উপযোগী ট্রেডকোর্স চালু করার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

তবে তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আয় করবে কিভাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপক্ক গাছ কাটতে গেলে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করেন। পুকুর লিজ দিতে গেলে সবাই বলেন- পাখি আসবে না।

বিষয়টি নিয়ে প্রাক্তন উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, অন্যান্য খাতে  যে অনুপাতে বরাদ্দ হয় শিক্ষাখাতে তা হয় না। সারাদেশে এগারো হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জরাজীর্ণ। তিনি বলেন, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে জিডিপি’র ৪ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. খালেদা একরাম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা সুবিধা এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের প্রযোজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। এটা উচিত নয়। উদাহরণ হিসেবে এই উপাচার্য বলেন, আপনি যদি রূপপুর পারমাণবিক চুল্লিতে হ্যান্ডসাম ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা এবং গবেষণা ল্যাবরেটরি না তৈরি করেন তবে আশানুরূপ ফল পাবেন না। স্কিল ডেভেলপমেন্টের গুরুত্ব আমাদেরকে দিতেই হবে। তবেই বেকারত্ব কমবে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণত ডিগ্রি পাসের নিচে এখন আর কেউ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে  প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন না। এর সুফল আমরা পাবো। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

তিনি  বলেন, এখন সময় এসেছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা ঘোষণা করার। টেন্ডারকে কেন্দ্র করে দেশে একটা দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থার মাধ্যমে এ চক্রকে রোধ করা উচিত। তাহলে যেকোনো টার্গেটই অর্জন করা সম্ভব হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন বলেন, গত তিন দশকে ৪ থেকে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি ছিল অদক্ষ জনশক্তি। কিন্তু প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৮ শতাংশে নিতে চাইলে দক্ষ জনশক্তির ভূমিকা প্রাধান্য পাবে। সেই সঙ্গে জনসাধারণের খর্বাকৃতি যাতে কমে আসে সে পরিকল্পনা নিতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্যে খর্বাকৃতি কমাতেই হবে।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার মানবসম্পদ উন্নয়নে ক্রীড়া ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি নৈতিকতা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাথে যা দেশের দুর্নীতি কমাতে সাহায্য করবে।

ফেসবুক ও গুগল প্রসঙ্গে বীরেন শিকদার বলেন, মাথাব্যথা হলেই মাথা কেটে ফেলা যায় না। এ ক্ষেত্রে কিছু সময় ধৈর্য ধরলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম সব কিছুতেই একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে।

বিশিষ্ট উন্নয়নকর্মী শিখা রিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবক্ষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষকদের মধ্যে যৌন হয়রানি করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যা খুবই অনৈতিক। মেয়েদের নিরাপদ শিক্ষা নিশ্চিত না করতে পারলে  নারীর ক্ষমতায়ন টেকসই হবে না।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সামাজিক অবক্ষয় রোধ ও মূল্যবোধ শুধুমাত্র স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের মধ্যে দিয়ে ধরে রাখা সম্ভব নয়। একে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সবার মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে।

ঢাকা  জার্নাল, জুলাই ০২, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.