আল-কায়দার পরিকল্পনা ফাঁস

জুলাই ২, ২০১৫

Mahamudঢাকা জার্নাল : আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর রাজধানীতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদা শাখার (একিউআইএস) সদস্যদের।

বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টায় র‌্যাবের সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, আটককৃত একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা মাঈনুল ইসলাম, উপদেষ্টা মাওলানা জাফরসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে।

মুফতি মাহমুদ খান জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি মাঈনুল ইসলামের পরিকল্পনা ছিল বেশ কয়েকজনকে ছাড়িয়ে আনতে জেলখানা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার। সফল হতে পারলে একযোগে সারা দেশে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

তিনি জানান, র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী, প্রাক্তন হুজি নেতা মুফতি মাঈনুল ইসলাম ও উপদেষ্টা মাওলানা জাফর আমিনসহ মোট ১২ জনকে আটকের পর সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় তাদের।

তিনি বলেন, তাদের এসব পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি প্রদেশ ও দেশ নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করা। এজন্য তারা একিউআইএসের কার্যক্রম বাংলাদেশেও শুরু করে।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, তাদের পরিকল্পনা ছিল ঈদের পর রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা চালানো। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য ঢাকায় জড়ো হবে। এজন্য তারা রাজধানীর মিরপুরে একটি বাসাও ভাড়া নেয়। সেই বাসায় বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য মিলিত হতে বরিশাল ও খুলনা থেকে রওনা দেন বলে র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগে খবর আসে।
সেই গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ ব্যাটালিয়নের একটি দল বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর সদরঘাট থেকে একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা মাঈনুল ইসলাম ওরফে মাহিম ওরফে নানা ওরফে বদিউল (৩৫),  উপদেষ্টা মুফতি জাফর আমিন ওরফে সালমান (৩৪), সক্রিয় সদস্য মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম (২০), মো. মোশাররফ হোসেন (১৯), আব্দুল রহমান বেপারীকে (২৫) আটক করা হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একিউআইএস এর সক্রিয় সদস্য আল আমিন ওরফে ইব্রাহিম (২৮), মোজাহিদুল ইসলাম (৩১), আশরাফুল ইসলাম (২০), রবিউল ইসলাম (২৮) ও মো. হাবিব উল্লাহকে (২৬) আটক করা হয়।

পরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুর-১ এর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৮ নম্বর বর্ধনবাড়ির ভাড়া করা বাসায় অবস্থানকারী মো. শহিদুল ইসলাম (১২) ও আলতাফ হোসেনকে (২৬) আটক করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে সালফার এসিড, গন্ধক, সালফিউরিক এসিড, পটাশিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য, বিস্ফোরক ডিভাইস, বোমা তৈরি সরঞ্জামাদি, বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদ্রাস্ত্র, জিহাদি বই, মোবাইল, ব্যাংকের চেক উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, আল কায়েদার প্রধানের ভিডিও বার্তা ও আইএস জঙ্গিদের কার্যক্রম দেখে দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে।

হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মাওলানা মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবুল জান্দাল ব্রিটিশ হাই কমিশনের্ ওপর হামলার মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি জেল হাজতে থেকে মোবাইল ও চিঠির মাধ্যমে জেলের বাইরে আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ পূর্বক সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে ‘দাওয়াতে তাবলীগ’ নামে এবং পরবর্তীতে ‘৩১৩ বদরের সৈনিক’ নামে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা চালায়।

উপমহাদেশে আল-কায়েদার বিস্তারকে সামনে রেখে বাংলাদেশে সর্বাত্মক কার্যক্রম শুরু হলে তারা একিউআইএস- এ যোগদান করবে বলেই সংগঠনটির পরিকল্পনা ছিল।

এ ছাড়া হুজি সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিস্ক্রিয় নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করার চেষ্টাও চালিয়ে আসছিল। এজন্য তারা দাওয়াতে তাবলীগ গঠন করে। তিন স্তরে এই দাওয়াতে তাবলীগ কাজও শুরু করেছে বলে র্যা বের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়।

তিনি বলেন, তাদরে পরিকল্পনা ছিল হামলার উদ্দেশ্যে ঢাকায় সবাই একত্রিত হবে। এরপর ঢাকার বাইরে ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তুলবে। এজন্য তারা বগুড়ায় একটি মাদ্রাসার মাঠও নির্ধারণ করেছিল।

তিনি আরো জানান, ৩১৩ বদরের সৈনিক সংগঠনটির অর্থদাতা সৌদি আরব ও দুবাই থেকে ফিদাই মাওলা নামে ফেইসবুক ব্যবহারকারী রফিক নামের জনৈক ব্যক্তি। জাফর আমিন ওরফে সালমানের এই টাকা সংগঠনের কাছে পৌঁছে দিতো। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরো অভিযান চালানো হবে।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২, ২০১৫।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.