আমদানি করা গম যাচ্ছে টিআর কাবিখায়!

জুলাই ১, ২০১৫

Gamঢাকা জার্নাল : ব্রাজিল থেকে আমদানি করা নিম্নমানের গম প্রত্যাখ্যান  করেছেন আটা-ময়দা মিলের মালিকরা। খাদ্য বিভাগ এ গম মিলারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। মিল মালিকরা খাওয়ার অনুপযোগী এসব গম নিতে রাজি হচ্ছেন না। এ কারণে খুলনায় খোলাবাজারে (ওএমএস) আটা বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে জিআর, টিআর এবং কাবিখা প্রকল্পে এসব নিম্নমানের গম চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে, জেলার দশ গুদামে মজুদকৃত গমের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হলেও ফলাফল পাওয়া যায়নি।

খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ব্রাজিল থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়। এসবের মধ্যে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন বরিশাল ও বৃহত্তর ফরিদপুরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলাতেও এসব গম পাঠানো হয়। খুলনা নগরীর মহেশ্বরপাশা কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামে ১৩ হাজার ১৮৭ মেট্রিক টন, বয়রা কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামে ৮ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন, ডুমুরিয়া উপজেলা গুদামে ১০৭ মেট্রিক টন, দাকোপে ২০১ মেট্রিক টন, পাইকগাছায় ১৯৯ মেট্রিক টন, তেরখাদায় ১৩৬ মেট্রিক টন, বটিয়াঘাটায় ৯৮ মেট্রিক টন, ফুলতলায় ২০২ মেট্রিক টন, কয়রায় ১২২ মেট্রিক টন এবং রূপসা উপজেলা খাদ্যগুদামে এক মেট্রিক টন গম মজুত করা হয়।

ব্রাজিলের নিম্নমানের এসব গম না নেওয়ার কারণ হিসেবে মিল মালিকরা বলছেন, ভালো গমে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ আটা এবং ২৫ থেকে ৩০ ভাগ ভুসি থাকে। কিন্তু ব্রাজিল থেকে আমদানি করা এসব গমে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ আটা এবং ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ভুসি। ফলে এসব গম থেকে আটা উৎপাদন করে লোকসানের বোঝা টানতে চান না তারা। এ কারণে খুলনার ২৬টি মিলের মালিক এসব গম প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে গুদাম খালি করতে খাদ্য কর্মকর্তারা এ গমের সিংহভাগ জিআর, টিআর, কাবিখা ও ভিজিডিসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দিয়েছেন। কিছু পুলিশ ও আনসারদের মধ্যেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গম প্রত্যাখ্যানের কথা স্বীকার করে খুলনা আটা-ময়দা মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘এ গমের মান খুবই খারাপ। খাওয়ার অনুপযোগী। এ গম থেকে আটা করা হলে মিল মালিকরা লোকসানের মুখে পড়বেন। এ কারণে ২৬টি মিলের বিপরীতে ৪০ থেকে ১০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ থাকলেও কেউ তুলছেন না। খাদ্য কর্মকর্তারা গম নিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানালেও তা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ব্রাজিলের নিম্নমানের গমের দাম প্রতি কেজি সাড়ে ১৯ টাকা, ভারতীয় ভালো মানের সাদা গমও প্রতি কেজি সাড়ে ১৯ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তাই একই দামে খারাপ গম কেউ নিতে চায় না।’

আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মো. নূরুল ইসলাম জানান, আমদানিকৃত গমের মধ্যে খুলনার দুটি গুদামে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন গম মজুত করা হয়, যা ইতিমধ্যে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বণ্টন করা হয়েছে। বর্তমানে জেটিতে ফ্রান্স থেকে আমদানিকৃত ২০ হাজার মেট্রিক টন গম খালাসের অপেক্ষায় আছে। আমদানিকৃত গমের একটি বড় অংশ টিআর, কাবিখা, ভিজিডিসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স থেকে আনা গম খালাস হলে মিল মালিকদের দেওয়া হবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেলিমুল আযম জানান, সোমবার পর্যন্ত খুলনা জেলার বিভিন্ন গুদামে ব্রাজিল থেকে আনা গমের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন।

মিল মালিকরা গম না নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেলিমুল আযম। রমজান মাসে আটা বিক্রি কমে গেছে, এ দাবি করে তিনি বলেন, ‘গম নিতে মিল মালিকদের তেমন চাপ দেওয়া হচ্ছে না।’

অপরদিকে, জেলার ১০টি গুদামে মজুতকৃত গমের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হলেও ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ১, ২০১৫।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.