প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনা

জুলাই ১, ২০১৫

COPAঢাকা জার্নাল: কোপা আমেরিকার ৪৪তম আসরের সেমিফাইনালের হাইভোল্টেজ ম্যাচে মাঠে নেমেছিল গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা আর টুর্নামেন্টের গত আসরের রানার্সআপ প্যারাগুয়ে। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে কোপার শিরোপা জেতা আর্জেন্টিনা ৬-১ গোলের ব্যবধানে প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে ১৫তম শিরোপা জিততে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে।

চিলির এস্তাদিয়ো মিউনিসিপ্যালে প্রথমার্ধে মার্কোস রোহো আর পাস্তোরের গোলে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টাইনদের বিপক্ষে ব্যবধান কমায় প্যারাগুয়ের লুকাস বারিওস। দ্বিতীয়ার্ধে ডি মারিয়ার জোড়া গোল, আগুয়েরো এবং হিগুয়েনের একটি করে গোলে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে দেয় আর্জেন্টাইনরা। ফাইনালে স্বাগতিক চিলির বিপক্ষে লড়তে হবে মেসি বাহিনীকে।

দীর্ঘ ২২ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে মাঠে নামা জেরার্দো মার্তিনোর শিষ্যরা গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে এই প্যারাগুয়েতে বাধা পায়। ২-২ গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয় রামোন ডিয়াজের শিষ্যদের সঙ্গে।

খেলার ১৫ মিনিটের মাথায় লিড নেয় আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ের ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে মেসির নেওয়া বাঁ-পায়ের বাঁকানো ফ্রি-কিক থেকে বল পান ব্রাজিল বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম গোল করা আর্জেন্টিনার লেফট-ব্যাক মার্কোস রোহো। মেসির অ্যাসিস্ট থেকে জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গোলটি করতে রোহো সুযোগ নষ্ট করেন নি। কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করার দায়মোচন করেন রোহো, আর মেসি বাহিনী এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।

২১ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের সুযোগ এসেছিল ১৪ বারের কোপা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার। মেসির ক্রস থেকে প্যারাগুয়ের ডি-বক্সে থাকা পাস্তোরে বল পেয়েছিলেন। জোরালো শটও নিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক ভিল্লারের দৃঢ়তায় এ যাত্রা গোল পান নি পিএসজির মিডফিল্ডার পাস্তোরে।

২৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করে কোপা আমেরিকার আসরে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ২৩ ম্যাচে না হারা আর্জেন্টাইনরা। মেসির অ্যাসিস্ট থেকে দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন সেই পাস্তোরে। ২৬ বছর বয়সী অ্যাটাকিং এ মিডফিল্ডার মেসির বাড়ানো বলে মাটি কামড়ানো শটে গোল করলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে এর আগে ৪৭ ম্যাচ জেতা আর্জেন্টিনা।

দুই গোল করেও ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে গোলক্ষুধা যেন বাড়তে থাকে মার্টিনো শিষ্যদের। প্যারাগুয়ের ডিফেন্সকে ব্যস্ত রাখে মেসি-পাস্তোরে-আগুয়েরো-ডি মারিয়ারা।

তবে, বারবার উপরে উঠে আাসা আর্জেন্টিনার ডিফেন্সকে ফাঁকা পেয়ে খেলার ৪৩ মিনিটে ব্যবধার কমানোর সুযোগ নেয় প্যারাগুয়ে। ব্রুনো ভালদেজের হেড থেকে বাড়ানো বলে টপ-ডি থেকে আর্জেন্টাইনদের গোলবার লক্ষ্য করে জোরালো শট নেন বারিওস। তাতেই সফল হয় চলতি আসরে ব্রাজিলকে হারিয়ে দেওয়া প্যারাগুয়ে। আর্জেন্টিনার গোলবারের নিচে দায়িত্ব পালন করা রোমেরোর গ্লাভস ছুঁয়ে বল জালে জড়ায়। শুরুর একাদশে মাঠে না নামলেও দলের সেরা তারকা সান্তা ক্রুজ পায়ে আঘাত পাওয়ায় ম্যাচের ৩০ মিনিটে তার বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার বারিওস।

প্রথমার্ধের বাকী সময়ে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে জায়ান্ট কিলার খ্যাত প্যারাগুয়ে। রামোন ডিয়াজের শিষ্যরা একাধিক শট নেন কঠিন চাপে এলোমেলো হয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনার জাল লক্ষ্য করে। তবে, বিরতির আগে আর কোনো গোলের দেখা মেলেনি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১৪ ম্যাচ জয়ী প্যারাগুয়ের।

বিরতির আগে আর্জেন্টাইনদের হয়ে মাঠে ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলেন জাবালেতা, অতামেন্ডি, ডেমিসেলিস, মার্কোস রোহো, পাস্তোরে, মাসচেরানো, বিগলিয়া, লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো আর অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। গোলবারের নিচে দায়িত্ব পালন করেন কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে কলম্বিয়াকে রুখে দেওয়া রোমেরো।

বিরতির পর নেমেই গোল করেন প্রথমার্ধে কিছুটা নিষ্প্রভ থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা ডি মারিয়া। ৪৭তম মিনিটে পাস্তোরের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করেন রিয়ালের সাবেক তারকা। আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে।

গোল খরায় থাকা বিশ্বসেরা আক্রমণভাগের আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচের ৫৩ মিনিটে আবারো গোল করেন ডি মারিয়া। প্যারাগুয়ের ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে মেসি বল বাড়িয়ে দেন গোলবারের ডানপাশে থাকা পাস্তোরেকে। পিএসজির তারকা শট নিলেও প্যারাগুয়ের গোলরক্ষক ভিল্লার তা রুখে দেন। তবে, ফিরতি বলে বামপায়ের শটে গোল করেন ডি মারিয়া। ৪-১ এ এগিয়ে যায় মার্টিনোর ছাত্ররা।

ম্যাচের ৬৯ মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে প্যারাগুয়ের ডি-বক্সে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন আর্জেন্টাইন দলপতি মেসি। ডিফেন্সে বাধা পেলেও চার খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে বার্সেলোনার সেরা অস্ত্র বল বাড়িয়ে দেন পাস্তোরেকে। পিএসজির তারকা বলে শট না নিয়ে মেসিকে লক্ষ্য করে বল বাড়িয়ে দেন। বার্সা তারকা প্রথম প্রচেষ্টায় শট নিতে না পারলেও পরক্ষণেই জাল লক্ষ্য করে শট নেন। কিন্তু প্যারাগুয়ের ভিল্লার মেসির শটটি রুখে দেন।

৭১ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে গোলের সুযোগ পেয়েছিল প্যারাগুয়ে। আর্জেন্টিনার ডি-বক্সের অল্প বাইরে থেকে ফ্রি-কিক নেন সাসেরেস। তবে, বল গোলবারের অনেক উপর দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলে ব্যবধান কমানো হয়নি জায়ান্ট কিলারদের।

৮০ মিনিটে দলের পঞ্চম গোলটি করেন আগুয়েরো। প্রথমার্ধে ডি মারিয়ার মতো ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার আগুয়েরোকেও নিষ্প্রভ দেখা যায়। তবে, দ্বিতীয়ার্ধে নিজের স্বরুপে ফিরতে থাকেন ইংলিশ প্রিমিয়ারের এ দুই তারকা। ডি মারিয়ার ডানদিক থেকে তুলে মারা বলে হেড করে গোলটি করেন আগুয়েরো। পরের মিনিটে মার্টিনো আগুয়েরোকে তুলে নিয়ে মাঠে নামার গঞ্জালো হিগুয়েনকে।

মাঠে নামার দুই মিনিটের মধ্যে (খেলার ৮৩ মিনিট) গোল করেন হিগুয়েন। এবারো গোলের যোগানদাতা মেসি। চারবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির বাড়ানো বল ক্লিয়ার করতে পারেনি প্যারাগুয়ের ডিফেন্ডাররা। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হিগুয়েন গোলবারে শট নেন। ফলে, ৬-১ এ এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

ম্যাচের বাকী সময়ে আর কোনো গোল না হলে প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠে মেসি বাহিনী।

ঢাকা জার্নাল, ০১ জুলাই ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.