ভারতের সান্ত্বনার জয়, সিরিজ বাংলাদেশের

জুন ২৫, ২০১৫

cricketঢাকা জার্নাল: আরেকটি ‘বাংলাওয়াশ’ এর স্বপ্ন নিয়ে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে, তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে আশা জাগিয়েও হেরে গেল টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৯ রানে আর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে জয়ের পর সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে ৭৭ রানে হারল টাইগাররা।

শেষ ম্যাচে জয়ের মধ্য দিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডেতে পূর্ণ শক্তির ভারত একমাত্র জয় নিয়ে দেশে ফিরবে।

বাংলাদেশ সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪৭ ওভার ব্যাট করে ২৪০ রান সংগ্রহ করে।

এর আগে ভারতের ছুঁড়ে দেওয়া ৩১৮ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় দ্বিতীয় ওভারে কুলকার্নির বলে এলবি’র ফাঁদে পড়েন তামিম ইকবাল। আউট হওয়ার আগে মাত্র ৫ রান করেন তিনি।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে ফেরেন ব্যাটে ঝড় তোলা সৌম্য সরকার। দলীয় দশম ওভারে ৩৪ বলে ব্যক্তিগত ৪০ রান করে কুলকার্নির বলে অশ্বিনের তালুবন্দি হন সৌম্য। আউট হওয়ার আগে ভারতের বোলারদের সাতবার মাঠের বাইরে পাঠান। যার মধ্যে দুটি ছক্কার মার ছিল।

দলীয় ৬২ রানের মাথায় সৌম্য সরকারকে হারানোর পর ব্যাটিংয়ে আসেন টাইগারদের ‘রান মেশিন’ খ্যাত মুশফিকুর রহিম। তামিম, সৌম্যর পর বিদায় নেন তিনি। লিটনকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন ১৫২ ওয়ানডে খেলা মুশফিক। তবে, দলীয় ১৯তম ওভারে রায়নার একটি লাফিয়ে উঠা বলে উইকেটের পেছনে ধোনির গ্লাভসবন্দি হন টাইগারদের ব্যাটিং স্তম্ভ। আউট হওয়ার আগে মুশফিক ৩০ বলে ২৪ রান করেন।

এরপর সাকিবের সঙ্গে বড় জুটি গড়ার আগেই ফিরে যান লিটন কুমার। ৫০ বলে তিন চারে ৩৪ রান করা লিটন আকসার প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়ে দলীয় ১১৮ রানের মাথায় টাইগারদের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন।

দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান রায়নার বলে কুলকার্নির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে স্বাগতিকদের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন। ২৭তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ২১ বলে ২০ রান করেন সাকিব।

দলীয় ১৪৮ রানের মাথায় টাইগারদের পঞ্চম উইকেটের পতনে ব্যাটিং ক্রিজের দায়িত্ব নেন সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেন। টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর এ দু’জন ৪৯ রানের (৩৮ বলে) জুটি গড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তবে, ৩৩তম ওভারে বিন্নির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ৪৩ রান করা সাব্বির। আউট হওয়ার আগে ৩৮ বল মোকাবেলা করে ছয়টি চার হাঁকান সাব্বির।

সাব্বিরের বিদায়ে নাসির হোসেনকে সঙ্গ দিতে নামেন টাইগার দলপতি মাশরাফি। তবে, অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। দলীয় ২০৫ রানের মাথায় অধিনায়কের বিদায়ে স্বাগতিকদের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে।

ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো খেলতে থাকা নাসিরও অবশেষে বিদায় নেন। ব্যক্তিগত ৩২ রান করে অশ্বিনের বলে রাইডুর হাতে ক্যাচ দেন তিনি।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শিখর ধাওয়ান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, আম্বাতি রাইডু আর সুরেশ রায়নার ব্যাটে ভর করে সফরকারীরা নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৭ রান সংগ্রহ করে।

টাইগারদের বোলিং সূচনা করতে আসেন ক্রিকেট বিশ্বের বোলিং চমক মুস্তাফিজুর রহমান। আর ভারতের ব্যাটিং উদ্বোধনের দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট হাতে নামেন রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান।

জয় নিয়ে দেশে ফিরতে মরিয়া সফরকারীদের ব্যাটিং লাইনআপে যথারীতি আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজের করা দলীয় সপ্তম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন রোহিত শর্মা। প্রথম দুই ওয়ানডেতেও মুস্তাফিজের বোলিং তোপে রোহিত আউট হয়েছিলেন। আউট হওয়ার আগে রোহিত ২৯ বলে দুই চার আর এক ছয়ে ২৯ রান করেন।

দলীয় ২০তম ওভারে আক্রমণে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার অসাধারণ ঘূর্ণিতে আউট হন ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভ বিরাট কোহলি। নিজের প্রথম ওভারে এসেই বাজিমাত করেন সাকিব। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে কোহলি করেন ৩৫ বলে ২৫ রান।

‘হোয়াইটওয়াশ’ এড়াতে লড়তে থাকা ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে ফেরান মাশরাফি। দলীয় ২৭তম ওভারে মাশরাফির বলে নাসির হোসেনের তালুবন্দি হন ধাওয়ান। আউট হওয়ার আগে তিনি ৭৫ রান করেন। টাইগারদের অন্যতম ফিল্ডারে পরিণত হওয়া নাসির দারুণ ভাবে ধাওয়ানের ক্যাচটি লুফে নেন। ধোনির সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি গড়া ধাওয়ান ৭৩ বলে দশটি চার হাঁকান।

৪১তম ওভারে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিতে চেয়েছিলেন আরাফাত সানি। ব্যক্তিগত ৩৪ রানের মাথায় সানির হাতে জীবন ফিরে পান রাইডু।

দলীয় ১৫৮ রানে টপঅর্ডারের তিন উইকেট খুঁইয়ে ফেলা সফরকারীরা ‘বাংলাওয়াশ’ এড়াতে দলের সংগ্রহ বাড়িয়ে নিতে থাকে। ৪৪তম ওভারে মাশরাফির শিকারে সাজঘরে ফেরেন ব্যক্তিগত ৪৪ রান করা আম্বাতি রাইডু। ধোনির সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে ৯৩ রানের জুটি গড়েন রাইডু। আউট হওয়ার আগে ৪৯ বল মোকাবেলা করেন তিনি।

এরপর মাশরাফির তৃতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ধোনি। দলীয় ৪৬তম ওভারে আক্রমণে এসে টাইগার দলপতি ব্যক্তিগত ৬৯ রান করা টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ককে মুস্তাফিজের তালুবন্দি করেন। আউট হওয়ার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৯তম অর্ধশতক হাঁকান ধোনি। ৭৭ বল মোকাবেলা করে ছয় চার আর একটি ছক্কা হাঁকান ভারত অধিনায়ক।

শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে সুরেশ রায়না ২১ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন। রায়নাকে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ।

টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন মাশরাফি। দুটি পান মুস্তাফিজ আর একটি উইকেট নেন সাকিব।

ঢাকা জার্নাল, ২৪ জুন ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.