শাড়ি নাভীর নিচে না উপরে, তাতে আপনার কী?

এপ্রিল ১৮, ২০১৫

Free 1শামীমা মিতু : মেয়ে শাড়ি পড়েছে নাভীর নিচে, ব্লাউজের গলা বড় পিঠ খোলা। যখন খাবার খেতে গেল তখন নিচু হতেই ক্লিভেজ দেখা যাচ্ছিল। ঠিকই তো, এমন সাজ দিলে কোনো পুরুষের কি মাথা ঠিক থাকে? হ্যাঁ থাকে, বহু পুরুষের মাথা ঠিক থাকে বলেই এবারের বর্ষবরণের উৎসবে গুটি কয়েক হায়েনাকে শনাক্ত করা গেছে। সব পুরুষই ধর্ষক বা যৌন হয়রানিকারী নয় বলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মাত্র কিছুসংখ্যক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে!

কিছু কুলাঙ্গার যৌন হয়রানি করে বাকিরা মৌনতা দিয়ে সমর্থন যোগায়, এই সংখ্যাটাও কম নয়। পোশাকের দোহাই দিয়ে, ধর্মের দোহাই দিয়ে ভালো সংখ্যক পুরুষ কারবালার মাতম তুলেছেন, চিৎকার করে জানাতে চাচ্ছেন- ‘শাড়ির নীচে মেয়েটির নাভী আমার শিশ্নানুভুতিতে আঘাত হেনেছে।’ ‘খোলা পিঠ আমার শিশ্নানুভূতিতে আঘাত হেনেছে।’ ‘আমি কুত্তা তাই মাংস খাওয়া আমার অধিকার’ ‘আমি মাছি তাই খোলা মিষ্টিতে বসা আমার অধিকার।’

আমি বলি কি,  আপনার শিশ্নানুভুতি যদি সামলাতে না পারেন তাহলে বরং শিশ্নটাই কেটে ফেলুন।

পহেলা বৈশাখকে যারা বিধর্মী উৎসব মনে করে তাদের সাথে আমার কোনো কথা হতে পারে না। কথা বলবো তাদের সাথে যাদের মনে হচ্ছে বর্ষবরণের উৎসবে একটা মেয়েকে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে ফেলার মতো ভয়ংকর বর্বর ঘটনায় ‘মেয়েটার পোশাক ঠিক ছিল না’ দায়ী। শাড়ী নাভীর নিচে পরে মেয়েটি বড় অন্যায় করে ফেলেছে, ধর্মকে অবমাননা করেছে, অশ্লীলতা করেছে, আর আপনারা পুরুষরা ভরা রাস্তায় তাকে বিবস্ত্র করে ধর্মকে রক্ষা করেছেন, মেয়েটিকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন। সাবাশ মহা পুরুষেরা!!

মাছি কিংবা কুকুরের কোন দোষ নেই, দোষ হল মাংসের-মিষ্টির। মাংস বা মিষ্টি যদি নিজেদেরকে ঢেকে রাখত কয়েক খণ্ড, বিকট প্রকাণ্ড বস্ত্র দিয়ে, তাহলে তারা রক্ষা পেত। তাই নারীদেরকেও ঢেকে রাখতে হবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত। শরীরের এক ইঞ্চি জায়গা দেখা গেলেও ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানি বৈধ মনে হবে আপনার।

আমি বলি কি,  একটা মেয়ের সম্পূর্ণ অধিকার আছে স্বাধীনভাবে চলার। আপনার যদি রাস্তায় মেয়ে দেখলেই যৌনানুভূতি জাগে তাহলে মেয়েটির উপর ঝাঁপিয়ে না পড়ে বাসায় এসে হস্তমৈথুন করুন। বেশি উত্তেজিত হলে, পশ্চাৎদেশে ডিম ঢোকাতে পারেন কিংবা যদি বিকৃত কাম জাগে তবে কষ্ট করে নিজেই নিজের ভেতর প্রবেশ করতে পারেন (ইংরেজিতে যাকে বলে ফাক ইয়োরসেলফ)। আপনাকে কেউ বাধা দিবে না।

আপনি মাংসলোভী জানোয়ার হতে চান কিংবা নোংরা মাছি হতে চান- হতে পারেন। মাংসের কথা ভেবে যত ইচ্ছা লালা ফেলুন কিন্তু সেটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার অধিকার আপনার নেই।

আর আমরাও, নিজের কাজটি গুছিয়ে ঘরে গিয়ে, দরজা এঁটে নিজেদের বিছানায় স্রেফ সেঁধিয়ে যাই। তারপর ঝটপট চোখ বন্ধ। পাছে অন্ধকারে মুখ-মুখোশের দেখা হয়ে যায়! আর কতদিন এভাবে রঙিন কাঁচের আড়ালে, মুখোশ পরে, সমস্ত পরিস্থিতি এড়িয়ে, গা বাঁচিয়ে চলবো আমরা?

আপনি ভাবছেন, আমাদের ঘরে আগুন না লাগলেই হলো। অন্যরা আগুনে পুড়ে গেলে কী আর করব, ‘আহা – উহু’র আপডেট দেব ফেসবুকে, ট্যুইট করব নিজের ফিলিংস। ব্যস। খেল খতম, পয়সা হজম।

হাতে গোনা কয়েকটা ছেলে যৌন হয়রানি করেছে, প্রতিবাদী যদি এর চাইতেও কম মানুষ হয়, তাহলে মনে রাখবেন, আগামীতে আপনার মা, বোন, বউ, ভাগনীদের বিবস্ত্র করবে। রাস্তায় করবে, স্কুল কলেজের সামনে করবে, শেষে বাড়িতে ঢুকে করবে। এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আমাদের রাস্তায় নামা উচিত। যা যা করণীয়, তাই করা উচিত।

(লেখক: সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.