সত্যিকারের তিন মৎসকন্যা! (ভিডিও সহ)

এপ্রিল ৭, ২০১৫

fi_2_716686033ডিজনি প্রিন্সেস মৎস্যকন্যা এরিয়েলের গল্প তো আমাদের সবারই খুব প্রিয়। নীল সমুদ্রের গভীরে সারাক্ষণ ঘুড়ে বেড়াতো সে। কখনও সঙ্গী ছিল নীল তিমি, কখনও লাল কাঁকড়ার সঙ্গে খুনসুটি। আবার দেখা যাচ্ছে, হিংস্র হাঙরের তাড়া খেয়ে সাগরতলে ডুবে যাওয়া জাহাজের কামরায় লুকোচ্ছে মৎস্যকন্যা। 

মৎসকন্যার গল্প পড়ে কল্পনার জগতে নিজেকে সমুদ্রে সাঁতরাতে দেখেছে কমবেশি সব মেয়েরাই। মোহনীয় কল্পনার তাড়না মানুষকে যে দূর দূরান্তে নিয়ে যেতে পারে, তার প্রমাণ পৃথিবী বরাবরই পেয়েছে। কল্পনার শক্তি এতটাই বেশি যে, তা স্বপ্নকে সত্যি করে দিতে পারে এক নিমিষেই। 

এবারের গল্প তাদের নিয়ে, যারা নিজেদের মৎসকন্যা হয়ে ওঠার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। সত্যিকারের মৎসকন্যা হয়ে ওঠার স্বপ্ন নিয়েই বেড়ে উঠেছেন ক্যাজি মাহিনা, এমিলি কিট ও মারমেইড ম্যালিসা। বিশ্বের তিনটি বিচ্ছিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা হয়েও এ তিনকন্যার স্বপ্ন একটাই, সাগরতলে মৎসকন্যা হয়ে ঘুড়ে বেড়ানো। 

fi_5_490650834ক্যাজি মাহিনা 
বহির্বিশ্বে ক্যাজি রিয়েল লাইফ মারমেইড নামে পরিচিত। ৩৭ বছর বয়সী ক্যাজি মাহিনা বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের দক্ষিণ উপকূলে। ছোটবেলা থেকেই ক্যাজি ভালোবাসতেন সমুদ্রকে। সমুদ্রের বিভিন্ন প্রাণী ও তাদের জীবন ক্যাজিকে খুব মুগ্ধ করতো। বরাবরই ভালো সাঁতারু ছিলেন তিনি। খুব সহজেই কয়েক মিনিটের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ রাখতে পারেন। ছোটবেলায় নিজের পা দু’টোকে এক সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে সমুদ্রে সাঁতার কাটতেন। ভাবতেন, তিনিই লিটল মারমেইড। 

২০০৫ সালে ক্যাজি ডলফিনের সঙ্গে সাঁতার কাটার আমন্ত্রণ পান। সেসময় তিনি রূপালি রঙের কৃত্রিম লেজ পরে সাঁতার কাটতেন। এ প্রতিযোগিতাটিই পরবর্তীতে তাকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ভ্রমণের উৎসাহ যোগায়। 

ভ্রমণ শেষে অস্ট্রেলিয়া ফিরে ক্যাজি সিদ্ধান্ত নেন, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি তার জন্য লেজ তৈরি করবেন। সিলিকন ও আঠা দিয়ে তৈরি এ লেজ যেন দেখতে বাস্তব লাগে সেভাবেই নকশা করা হবে। ক্যাজির এ লেজ তৈরিতে সময় লেগেছিল প্রায় একবছর। 

একইসঙ্গে তিনি মাহিনা মারমেইড নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন যা সমুদ্রে সাঁতার কাটার উপকরণ হিসেবে শিশুদের জন্য ফ্লিপার ও বয়স্কদের জন্য মারফিন তৈরি করে। ক্যাজি এখন বেশির ভাগ সময়ই কাটান সমুদ্র রক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজে। তিনি তার লেজ তৈরির কাজকে সমুদ্রের সঙ্গে মানুষের সংযোগ হিসেবেই দেখেন। 

fi_bg_958216614সমুদ্রের বড় বড় হিংস্র প্রাণীরাও তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ক্যাজি যখন ছয় মাসের অন্তঃসত্বা, তখন নিউজিল্যান্ডের একটি অ্যাকুয়ারিয়ামে তাকে হাঙরের সঙ্গে সাঁতার কাটার আহ্বান জানানো হয়। শুধু তাই নয়, তখন ছিল খুব ঠাণ্ডা আর অ্যাকুয়ারিয়ামের পানি ছিল ঘোলাটে। কিন্তু ক্যাজি সে আহ্বানে বেশ উৎসাহী ছিলেন। 

মারমেইড ম্যালিসা
তার নামই মারমেইড ম্যালিসা। বসবাস ফ্লোরিডার সেন্ট অগাস্টিনে। ছোটবেলা থেকেই ম্যালিসার স্বপ্ন জুড়ে ছিল শুধুই সমুদ্র। সমুদ্রের নিচে অনায়‍াসেই তিনি নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখতে পারেন টানা পাঁচ মিনিট! সমুদ্রের নিচে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও তিনি সমুদ্র ও জলজীব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার কাজে নিয়োজিত। 

তার এ উদ্যোগের স্লোগান, সামুদ্রিক প্রাণীরা পৌরাণিক গল্পে পরিণত হওয়ার আগেই চলো আমরা সমুদ্র বাঁচাই। 

তিনি পানির নিচে বিভিন্ন পারফরমেন্সের মাধ্যমে সমুদ্রকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন। ম্যালিসার  ‘মারমেইড ম্যালিসা এলএলসি অ্যাকুয়াটিক কোম্পানি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে সমুদ্রতলে মারমেইড ও মারমেনদের মতো চলাফেরা করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। টানা নয় বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি ম্যালিসার মতো শত শত মারমেইডদের এ স্বপ্ন পূরণের সেবা দিয়ে আসছে। 

তিনি পানির নিচে বিভিন্ন পারফরমেন্সের মাধ্যমে সমুদ্রকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন। ম্যালিসার  ‘মারমেইড ম্যালিসা এলএলসি অ্যাকুয়াটিক কোম্পানি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে সমুদ্রতলে মারমেইড ও মারমেনদের মতো চলাফেরা করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। টানা নয় বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি ম্যালিসার মতো শত শত মারমেইডদের এ স্বপ্ন পূরণের সেবা দিয়ে আসছে। 

এমিলি কিট   
এমিলি কিট ব্রিটেনের প্রথম পেশাদার মারমেইড। মাত্র ঊনিশ বছর বয়সী এমিলি পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নেমে পড়েছেন স্বপ্ন পূরণে। পুরোনো সুইম কস্টিউম কেটে নিজের জন্য মারমেইডের লেজ বানিয়েছেন তিনি। সবুজ ও নীল রঙের এ লেজের দৈর্ঘ্য ছয় ফুট। মূলত লিটল মারমেইড এরিয়েলের লেজের সঙ্গে মিল রেখেই এটা করেছেন তিনি। কর্নওয়ালবাসী এমিলি নিজেকে পুরো মারমেইডের রূপ দেওয়ার জন্য চুলের রঙও বদলে লাল করেছেন। এমিলি বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বাচ্চাদের পার্টিতে মডেলিং করেন। পাশাপাশি তিনি সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রকল্পের সঙ্গেও জড়িত। 

এমিলির স্বপ্ন ছিল পরীদের মতো আকাশে উড়ে বেড়ানোর। কিন্তু এখন তার কাছে পানিতে মারমেইড হয়ে থাকাটাই বেশি বাস্তসম্মত মনে হয়। 

এ নিয়ে তার ভাষ্য, আমি মৎসকন্যা ছাড়া নিজেকে অন্য কোনো পেশায় দেখার কথা ভাবতেই পারি না! 

এমিলির কাছে সমুদ্রের সব প্রাণীই পরম আত্মীয়। আর তাই তিনি বাচ্চাদের সমুদ্র বিষয়ক সতেচতনতা সৃষ্টি করতে চান। 

এমিলি জানান, আমি চাই আমার সমুদ্রে বসবাসরত প্রাণী বন্ধুরা ভালো থাকুক। আর এজন্য চাই, মানুষের সচেতনতা।  

 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.