অভিজিৎ হত্যার জট না খুলতেই আরেক ব্লগার খুন

মার্চ ৩১, ২০১৫

babu blogerঢাকা জার্নাল: মাস পেরুলেও লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার জট খোলেনি এখনো। মামলার তদন্ত নিয়ে অনেকটাই অন্ধকারে পুলিশ। এরই মধ্যে খুন হলেন ওয়াশিকুর রহমান বাবু নামে আরেক ব্লগার।

সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে রাজধানীর বেগুনবাড়ি এলাকার দীপিকার মোড়ে ব্লগার ওয়াশিকুরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহ ঘটনাস্থল থেকে ইতোমধ্যে দুই মাদ্রসা শিক্ষার্থীকে আটক ও তিনটি চাপাতি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, হামলার ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে জিকুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম নামে দু’জন আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে তিনটি চাপাতি।

তিনি আরও জানান, আটকদের মধ্যে জিকরুল্লাহ চট্টগ্রামের হাটহাজারি ও আরিফ মিরপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র।

২৭ বছর বয়সী ওয়াশিকুরের বাবার নাম টিপু সুলতান, গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। তিনি রাজধানীর বেগুনবাড়ি এলাকায় থাকতেন। বেসকরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত ওয়াশিকুর নিয়মিত ব্লগে লেখালেখি করতেন বলে জানায় পুলিশ।

একমাস অতিবাহিত হলেও অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের এখনো কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সন্দেহভাজন একজনকে আটক ও অন্য একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়া তদন্তে আর কোনো অগ্রগতির খবর দিতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে খুন হলেন আরেক ব্লগার।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় খুন হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বন্যাও হন মারাত্মক আহত।

মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর মার্কিন সরকার এ হত্যাকাণ্ড তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব করে। সরকার রাজি হলে এফবিআই’র কয়েকজন সদস্য হত্যাকাণ্ডের স্থানসহ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এফবিআই সদস্যরা সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কোনো প্রকার কথা বলেননি।

গত ২ মার্চ ফেসবুকে অভিজৎ রায়কে হত্যার হুমকি দিয়ে আসা সাবেক ছাত্র শিবির নেতা ফারাবি শফিউর রহমানকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে র‌্যাব।

এরপর অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. অজয় রায় এ হত্যাকাণ্ডে বুয়েটের একজন শিক্ষককে সন্দেহ করেন। গত ২৪ মার্চ ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী নামে বুয়েটের ওই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে অভিজিৎকে যারা যারা হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, তাদের ১০ জনের একটি তালিকা পুলিশের হাতে রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

তবে অভিজিত হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিগোষ্ঠীকে সন্দেহ করে আসছিল পুলিশ। এফবিআই সদস্যরাও পুলিশকে এ সন্দেহের কথা জানিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানায় পুলিশ।

এছাড়া বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড তদন্তে আর কোনো তথ্য জানাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এর মধ্যেই প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হলেন আরেক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু।

এদিকে ব্লগার হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।

সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের হাতে বিজ্ঞানি ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায় নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর একমাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার খুনিদের গ্রেফতারে কোনো অগ্রগতিই নেই। বিচারহীনতার এই নির্লজ্জ সংস্কৃতির মধ্যে আজ খুন হলেন আরেকজন প্রগতিশীল ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু।

ওয়াশিকুরের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ হিসেবে সোমবার বিকেল ৫টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল করার কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ৩০, ২০১৫।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.