অভিজিতের হত্যা মৌলবাদীদের বাড়বাড়ন্ত

মার্চ ৭, ২০১৫

Avjitমনটা ভালো নেই। ভালো থাকার কথাও না। লেখক সহযোদ্ধা অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে, খবরটা জানার পর কোনো মানুষের ভালো থাকার কথা নয়। শেষদিন বইমেলায় মানুষের ভিড় কিছুটা হয়েছে, আনুপাতিক হারে নয়। মানুষের মনের মধ্যে উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করলাম। একটি শোক সবার মধ্যে কাজ করছে।

আজ যখন ওখান দিয়ে আসছিলাম, যে স্থানটিতে অভিজিতকে হত্যা করা হয়েছে, পুলিশ স্থানটিকে সংরক্ষিত করে রেখেছে। সেখান থেকে চোখ-কান বন্ধ করে চলে এসেছি। আমার ভেতরে স্বত্তাটাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছি। কেউ কেউ ঘটনাস্থলকে মোবাইলে তুলে রাখছে। হয়তো বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে দেখাবে। এর মধ্যেও মানুষ উৎসব খুঁজে নেয়।

অভিজিতকে যখন মারা হচ্ছে, কিংবা তার শরীর থেকে রক্তে বেয়ে টিএসসির ফুটপাথ গড়িয়ে সড়ক ভিজে উঠছে, কিংবা তার স্ত্রী আরেক লেখক বন্যা আহমেদ একটি আঙ্গুল উড়ে যাওয়ার ব্যথায় কাতর অবস্থায় হাহাজারি করছে, চিৎকার করেছে অভিজিতকে বাঁচাতে, সাড়া দেয়নি কেউ, কেউ এগিয়ে আসেনি, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি, বন্যা আহমেদের প্রলাপ উপভোগ করেছি, ছবি তুলেছি, সেই ছবি ফেসবুকেও দিয়েছি।

প্রাণী জগতের অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ জন্য আমরা ভীষণ মন খারাপ করি। অনেকে বিলুপ্তির পথে। আমরা তাদের সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। অথচ আমরা জানি না; আমাদের চোখের আড়ালেই বিলুপ্ত হয়ে গেল ‘মানুষ’। এক সময় এখানে কিছু মানুষ বসবাস করত। তারা চুল আঁচড়াত, গান গাইত। নৌকা বাইত। হারিয়ে গেছে তারা অমানুষের অতলে!!!!

অভিজিতের স্ত্রী নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে এ সময়ে দেশে আসতে চায়নি, সমস্ত মমত্ববোধ ঢেলে ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিত অনেকটা জোর করে দেশে এসেছে। বইমেলায় ছিল প্রতিদিন, এ প্রাণের মেলায় তার দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে। বই দুটোর মধ্যে একটি মীজান রহমানের সাথে শূন্য থেকে মহাবিশ্ব, অন্যটি হচ্ছে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো : এক রবি বিদেশিনীর খোঁজে। মেলায় সবার সাথে প্রাণখুলে আড্ডা দিয়েছে। ছবি তুলেছে।

আমাদের অভিজিত এখন নেই, বিশ্বাস করতে পারছি না : অভিজিত আর ফেসবুকে লিখবে না, মুক্তমনায় লিখবে না!!
এই কোন সভ্যতায় আমরা বাস করছি, এ কোন্ বোধে প্রগতির কথা বলছি আমি। ধৃক্কার জানাই নিজেকেই। একের পর এক মুক্তচিন্তা, মুক্ত ভাবনার পূজারিদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এরা কারা? গুটি কয়েক সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা তার আগে থেকে শুরু হওয়া প্রগতিবাদীদের যে হত্যাকাণ্ড চলছে, তা-তো থামছেই না। স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে, সংখ্যাধিক্য হয়ে এখনও আমরা উঠে দাঁড়াতে পারিনি, ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি সুস্থির রাষ্ট্র কাঠামোয়। এ প্রশ্নের একটি মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন।

সামগ্রিক বিবেচনায় রাষ্ট্র তার মেধাবী সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে এইভাবে-নৃশংসভাবে হত্যা করতে চেয়েছিল, সেই-সময় বেঁচে গেছেন তিনি। অধ্যাপক ইউনুস, ব্লগার রাজীব হায়দার, অধ্যাপক শফিউল আলম, ব্লগার আশরাফুল আলম নিহত হয়েছেন অভিজিত, হুমায়ুন আজাদের মতো। আমরা পারিনি, এখনও হুমাযুন আজাদ হত্যার বিচার করতে পারিনি, কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির আমরা দেখাতে পারছি না। মৌলবাদী ধর্মতন্ত্রের দাসত্ব আমাদের ভেতর বসে গেছে। অভিজিতের হত্যাকাণ্ড শুধু মর্মান্তিক না, একটি রাষ্ট্রের জনগণের জীবন কতটা অনিরাপদ, তা অনুধাবন করছি কেবল।

অভিজিৎ রায় নাস্তিক ছিলেন কি ছিলেন না, সেই অযৌক্তিক প্রশ্নে আমি যাবো না। এইটা তার ব্যক্তি অভিমতের বিষয়। এই অভিমতে আমার সমর্থন থাকতে পারে কী-পারে না, তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কোনো কোনো বিষয়ে আমার দ্বিমত থাকতেই পারে। সেইটা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেছেন কি করেননি, সেই প্রশ্নেও যাবো না। এইসব হচ্ছে অতি ভাবাবেগ নির্ভর কথাবার্তা। তবে কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করবো। আমার মনে হয়, তার আগে এই স্বীকৃতি দেয়া উচিত অভিজিৎ রায় একজন মানুষ, সৎ ও নির্ভীক মানুষই তিনি। তার মৃত্যু মুক্তবুদ্ধি চর্চায় তাকে আরো বেশি সুন্দর করেছে, অবিসংবাদিত করেছে।

পাকিস্তানের একজন মানুষ, যার চিন্তায় ও আচরণে ইসলামের বিন্দুমাত্র স্পর্শ ছিল না। বরং ছিল চূড়ান্ত বৈপরীত্য। সেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হলেন ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানের ‘জাতির জনক’। ইতিহাসবিদ অমলেন্দু তার একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘উপনিবেশিক আমলে বিখ্যাত মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদ মওলানা আজাদ ইসলাম ধর্মতত্ত্ব নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। মহাত্মা গান্ধী সেজন্য জিন্নাহকে বলেছিলেন, আপনি ইসলাম সম্পর্কে যে কথা বলেছেন সেটা প্রকৃত ইসলাম নয়। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য আমি মৌলানা আজাদকে পাঠাতে পারি আপনার কাছে। জিন্নাহ কখনোই তাকে ডাকেননি। তার সঙ্গে ইসলাম নিয়ে, ইসলামের ঐতিহ্য নিয়ে, ইসলামের ধর্ম-নির্ভর আধ্যাত্মিকতা নিয়ে নৈতিকতা নিয়ে কখনও আলোচনা করেননি।’ কেবল উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য তারা ইসলামের নাম নেন, ইসলামকে ব্যবহার করেন। এজন্যই ইসলাম তাদের কাছে প্রয়োজনীয়, মোটেও অনুসরণীয় নয়। ইসলামের নীতিবোধের এক পয়সার মূল্য তাদের কাছে নেই।

মওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি, যিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারত ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনের, তিনি ১৯১৭-র অক্টোবর বিপ্লবের সংবাদে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেন, এবং ১৯২১ সালে লেনিনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে যান। মওলানা হযরত মোহানি তো বিপ্লবের পরে শুধু বামপন্থি আদর্শকেই গ্রহণ করেননি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতেও যোগদান করেছিলেন।

দুইটি বিষয় এখানে উপস্থাপিত হয়েছে, সচেতনভাবে উপস্থাপন করেছি। প্রথমতঃ, ধর্মকে পুঁজি করে স্রেফ একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা, প্রকৃত কল্যাণমুখী না হয়ে সে রাষ্ট্রটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। দ্বিতীয়তঃ, একটি সমাজ যে কেবল সমাজ বিপ্লবের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব, প্রকৃত ধর্মবেত্তা ও ধর্মানুসারীদের তা অনেকটাই পরিষ্কার, মওলানা ওবায়দুল্লাহ কিংবা হয়রত মোহানীর উদাহরণই যথেষ্ট।

ধর্মতন্ত্রের মৌলবাদের স্বরূপ ও কার্যকলাপের মূল হোতা হচ্ছে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যজ্যবাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা অথবা পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে মৌলবাদের প্রাণভ্রোমরাটি নির্জিব হয়ে পড়তো। যারা এদেরকে ব্যবহার করছে, তারা কেউই প্রকৃত ইসলামবাদি নয়। আসল কথাটি হচ্ছে, কীভাবে ধর্ম এসেছে কখন, মানুষ সৃষ্টির আগে না পরে, প্রথমে এটা ভাবতে হবে। মানুষ এসেছে আগে। নৃশংসতাকে কোনো ধর্ম গ্রহণ করে না বলে জানি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি প্রবন্ধ ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ থেকে একটি স্তবক দিচ্ছি, : ‘ধর্ম বলে, মানুষকে যদি শ্রদ্ধা না কর তবে অপমানিত ও অপমানকারী কারো কল্যাণ হয় না। কিন্তু ধর্মতন্ত্র বলে, মানুষকে নির্দয়ভাবে অশ্রদ্ধা করিবার বিস্তারিত নিয়মাবলী যদি নিখুঁত করিয়া না মান তবে ধর্মভ্রষ্ট হইবে। ধর্ম বলে, জীবকে নিরর্থক কষ্ট দেয় যে সে আত্মাকেই হনন করে। কিন্তু ধর্মতন্ত্র বলে, যত অসহ্য কষ্টই হোক, বিধবা মেয়ের মুখে যে বাপ মা বিশেষ তিথিতে অন্নজল তুলিয়া দেয় সে পাপকে লালন করে। ধর্ম বলে, অনুশোচনা ও কল্যাণ কর্ম দ্বারা অন্তরে বাহিরে পাপের শোধন। কিন্তু ধর্মতন্ত্র বলে, গ্রহণের দিনে বিশেষ জলে ডুব দিলে, কেবল নিজের নয়, চোদ্দ পুরুষের পাপ উদ্ধার। ধর্ম বলে, যে মানুষ যথার্থ মানুষ সে যে ঘরেই জন্মাক পূজনীয়। ধর্মতন্ত্র বলে, যে মানুষ ব্রাক্ষণ সে যতো বড় অভাজনই হোক, মাথায় পা তুলিবার যোগ্য। অর্থাৎ মুক্তির মন্ত্র পড়ে ধর্ম আর দাসত্বের মন্ত্র পড়ে ধর্মতন্ত্র।’

রবীন্দ্রনাথ এখানে রিলিজিয়ন-এর প্রতিশব্দ রূপেই ‘ধর্মতন্ত্র’ শব্দটিকে বেছে নিয়েছেন। এই ধর্মতন্ত্র নিতান্তই সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িকতার ধারক-বাহক। যেকোনো সম্প্রদায়ে ধর্মতন্ত্রই নানা ধরনের সংকীর্ণ বিশ্বাস ও আচার-আনুগত্যের বৃত্তে আবদ্ধ। কিন্তু ‘ধর্ম’ মোটেই সেরকম নয়। ধর্ম দেশ-জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায়ের উর্ধ্বে সকল মানুষের মনুষ্যত্বকে ধারণ করে। কিন্তু সাথে সাথে একথাও বলতে হবে, পৃথিবীর সব ধর্মতন্ত্রেরই সৃষ্টি হয়েছিল ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয়ে ঘোষণা দিয়ে। প্রাচীন যুগের প্রতিটি ধর্মতন্ত্রই মনুষ্যত্ব-বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে উদ্ভূত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষ, সাধারণ জনগণের মৌলিক চাহিদা থেকেই পুরনো ধর্মতন্ত্র প্রতিবাদ উত্থিত হয়েছে ও নতুন নতুন ধর্মতন্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে।

উনিশ শতকে এই উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত মানুষদের মধ্যে মৌলবাদী ধর্মভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করার পরিবর্তে গ্রহণ করার ধারাটি অনেক বেশি জোরদার হয়ে উঠে। এই রকমটি ঘটে হিন্দুদের মধ্যেও, মুসলমানদের মধ্যেও। আগে ঘটে হিন্দুদের মধ্যে, মুসলমানদের মধ্যে পরে। এর প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়ায় বিলম্বে বিকশিত এবং অনগ্রসর ও দুর্বলতর মুসলিম মধ্যবিত্তের ভেতর ঘটে মুসলিম ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিপুল বিস্তার। ধূর্ত ইংরেজ শাসকদের বৈষম্যনীতি হিন্দু-মুসলমানদের বিভেদকে ক্রমেইও আর দুস্তর করে তুলতে থাকে। তারই পরিণতিতে এক পর্যায়ে শক্তি সঞ্চার করে বসে ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ নামক উদ্ভব ধারণাটি। এবং সে ধারণারই কাঁধে জন্ম নেয় ‘পাকিস্তান’ নামক অদ্ভূত রাষ্ট্রটি।

এ রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের মানুষদের অবশ্যি মোহভঙ্গ হয় অচিরে, অপরিমেয় রক্তের মূল্যে পাকিস্তানের বন্ধনও ছিন্ন করে, প্রতিষ্ঠা ঘটায় ধর্মনিরপেক্ষতার উজ্জীবিত স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বাঙালির এই স্বাধীন রাষ্ট্রটিও এ প্রত্যয়কে বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। পাকিস্তানি পশ্চাৎপদতা ও ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ তার ঘাড়ে ভর করে বসলো, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদি সংবিধানের প্রগতিশীল মূলনীতিগুলোকে আড়াল করে এর পুনঃপাকিস্তানিকরণের পথ খুলে দেয়া হলো, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদেরই ‘জিন্দাবাদ’ দেয়া হলো। সেই সাথে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছরের মাথায় মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনার ঘোষণা ঘোষিত হয়। মৌলবাদ ধর্মতন্ত্রী এখানে কতটা শক্ত মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা ঘোষণায় তা প্রমাণ করে। ’৭২ এর সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়বাদ ও সমাজতন্ত্র গৃহীত হয়েছিলো। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক আগেই ছেটে ফেলা হয়েছে। জাতীয়তাবাদের সাথে ধর্মের মিশ্রণ ঘটিয়ে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞাকেই বদলে ফেলা হয়েছে, সেই সাথে মৌলবাদ গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়া ও উৎসাহিত করেছে।

অভিজিতের হত্যা আজ সেই মৌলবাদীদের বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু চাপাতির আঘাতে জীবন দিয়ে অভিজিৎ চেতনার যে দীপশিখা জ্বেলে গেছে, তা কি কখনো নিভে যেতে পারে?

দুই.
আমার তরুণ সহযোদ্ধা হাবিব হাসিবুর রহমান রিফাতের একটি গল্প দিয়ে লেখাটি শেষ করছি। ‘‘আমার পূর্ব পুরুষ ওপার বাঙলা থেকে এসেছে। আমার বড় দাদা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক ছিলেন। পেশায় ছিলেন ডাক্তার। কিন্তু সারাদিন আফিমের নেশায় বুদ হয়ে থাকতেন আর বই পড়তেন। ডাক্তারিতে তার মন ছিল না। ’৪৭ এর দেশভাগের পরও অনেক সংগ্রাম করে না পেরে অবশেষে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। কিন্তু বড় দাদা আসেন নি। তিনি বলেছিলেন- ‘বেশ্যার দেশ পাকিস্তানে যাব না। বাংলাদেশ হলে ভেবে দেখতাম।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তার ছেলে এদেশে চলে আসেন। তিনিও এদেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি ছেলেকে একটি চিঠি পাঠালেন। চিঠিটির সারসংক্ষেপ ছিল এই :

‘‘বেশ্যার সন্তানেরা আজও বাংলাদেশে আছে।’’

হাবীব ইমন : কলাম লেখক, কবি, শিক্ষক, emonn.habib@gmail.com

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ৭, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.