তারেককে ৪ মার্চ আদালতে হাজির করার নির্দেশ

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫

tareqঢাকা জার্নাল: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুই দুর্নীতি মামলার আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পরবর্তী ধার্য দিন আগামী ৪ মার্চ হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে এ আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালত।

রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদের অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ আদেশ দেন বিচারক। কোনো আসামি না থাকায় প্রথম সাক্ষীকে আসামিপক্ষের জেরা বাতিল করে আগামী ৪ মার্চ দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ মামলার আসামি তারেক রহমানকে হাজির করানোর আবেদন জানান। তিনি বলেন, অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে চিকিৎসার কথা বলে জামিন নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন তারেক রহমান। এখন তিনি সুস্থ আছেন বলে আমরা জেনেছি। তাই মামলার বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে তাকে আদালতে হাজির করানো প্রয়োজন।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে আগামী ধার্য তারিখে (৪ মার্চ) অবশ্যই তারেক রহমানকে হাজির করানোর আদেশ দেন আদালত।

এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের দুই দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ৩ আসামির জামিন বাতিল ও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সাক্ষ্য শুরুর আদেশ দেন আদালত। অন্য দুই আসামি হচ্ছেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

এরপর বেলা ১০টা ৫০ মিনিট থেকে ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত সাক্ষ্য দেওয়া শেষ করেন হারুন-অর রশিদ, যিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী ও প্রথম সাক্ষী।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে আইনজীবীদের মাধ্যমে দু’টি সময়ের আবেদন জানান। বেলা পৌনে এগারটার দিকে এসব আবেদনের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে দুই আবেদন নামঞ্জুর করে তার এবং দীর্ঘদিন আদালতে হাজির না হওয়ায় অন্য দু’জনের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

আদালত তার আদেশে বলেন, গত ধার্য তারিখে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বুধবার তাকে অবশ্যই হাজির করাবেন বলে জানিয়েছিলেন। জামিনদাররা সে কথা না রাখেননি। এছাড়া মামলা দু’টির ৬৩টি ধার্য তারিখে তিনি মাত্র ৭ বার আদালতে হাজির হয়েছেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে যাননি খালেদা জিয়া। তারা দুই কারণে দু’টি সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন।

অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাহীনতায় অনুপস্থিতির কারণে একটি আবেদন জানানো হয়। অন্যদিকে গত ৭ জানুয়ারি বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। তাই ওই আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য আরেকটি আবেদন জানানো হয়।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি সর্বশেষ ধার্য তারিখেও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুর কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন জানান খালেদা জিয়া। এ সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ছিল নতুন বিচারকের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রথম দিন। সেদিন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বকশিবাজার এলাকায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে এমপি ছবি বিশ্বাসসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। বিএনপির কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও আওয়ামী লীগের নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেন।

প্রথম দিনের বিবেচনায় খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে ২৪ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ৭ জানুয়ারি ধার্য করেছিলেন নতুন বিচারক। ৭ জানুয়ারি আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পুনরায় ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হলেও খালেদার আইনজীবীদের আবেদনে ফের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়।

গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ। এরপর থেকে নানা কারণ দেখিয়ে সময়ের আবেদন জানানোর মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে নেন খালেদা জিয়া। ফলে প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হতে সময় লেগেছে দীর্ঘ পাঁচ মাস।

খালেদা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

তাদের মধ্যে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে ছিলেন।

মামলার অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন।

অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ মোট ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

মামলাটির অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

এ মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

গত বছরের ১৯ মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.