হৃদরোগ: মেয়াদোত্তীর্ণ রিং পরাতে নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টের

জানুয়ারি ২৯, ২০১৫

High_Court_হৃদরোগ চিকিৎসায় মেয়াদোত্তীর্ণ রিং পরানো নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার(২৯ জানুয়ারি’২০১৫) বিচারপতি কাজী-রেজা উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করেন।

এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি দেশের সব হাসপাতালে মেয়াদ উত্তীর্ণ রিং পরানোর ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন আদালত।

রুলে হৃদরোগ চিকিৎসায় মেয়াদোত্তীর্ণ রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও রিং গ্রহণ এবং রোগীদের দেহে তা প্রতিস্থাপনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

৪ সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

২৮ জানুয়ারি’২০১৫ চ্যানেল ২৪ এর অনলাইনে ভার্সনে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ রিং পরিয়ে হৃদরোগ চিকিৎসার ভয়াবহ তথ্য’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করা হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। তিনি বলেন, পরবর্তী আদেশের জন্য ১ মার্চ দিন ধার‌্য করা হয়েছে।

চ্যানেল ২৪ এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ রিং পরিয়ে হৃদরোগের চিকিৎসার ভয়াবহ তথ্য মিলেছে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে। গত ৭ মাসে এমন বেশ কিছু রোগীর দেহে এই রিং পরানোর খবর পাওয়া গেছে।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসার পরেও রোগীরা এমনিতেই ঝুঁকিতে থাকেন। তার ওপর মেয়াদ পার হওয়া রিং পরানো হলে, এই ঝুঁকির মাত্রা আরো বাড়বে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই রিং রোগীদের তেমন কোন ক্ষতি করবে না।

হৃদপিণ্ড। মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গের কোনো ধমনি বন্ধ বা সংকুচিত হয়ে গেলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। যার চূড়ান্ত পরিণতি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু।

আধুনিক চিকিৎসায়, সংকুচিত ধমনীতে রিং বা স্টেন্ট পরিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়।

হৃদরোগ চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট। কম খরচে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেশ সুনাম রয়েছে রাজধানীর কলেজ গেট এলাকার এই হাসপাতালটির। কিন্তু এখানেই পরানো হচ্ছে মেয়াদ পার হওয়া রিং।

মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম সরদার। বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ জানুয়ারি ভর্তি হন এই হাসপাতালে। তাঁর হার্টে দুটি ব্লক ধরা পড়লে, সার্জারি করা হয় এর দুদিন পর। একটি রিং কেনা হয় বাইরে থেকে। বাকি রিংটি সরবরাহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু রফিকুল ইসলামের শরীরে লাগানো রিংয়ের বিশেষ স্টিকারে দেখা যাচ্ছে, এটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত বছরের মে মাসে। রফিকুলের মতো আরো অনেকের শরীরে মেয়াদ পার হওয়া রিং পড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও হাসপাতাল পরিচালকের দাবি, মেয়াদাত্তীর্ণ রিং রোগীর কোন ক্ষতি করবে না।

তবে, রিং এর নির্দেশিকায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে মেয়াদ পার হলে এটি কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরাও এই বিষয়টিকে অনৈতিক মনে করছেন।

কম খরচে বা বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে যান নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু কম খরচের নামে এরকম অবহেলার শিকার হতে হবে কেন, সেই প্রশ্ন অনেকেরই।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.