‘রসিক কালাচাঁন’ প্রেম জানে

জানুয়ারি ২৭, ২০১৫

IMG_20150124_195314 (3)এস এম আববাস, ঢাকা জার্নাল: ভাওয়াইয়ার কিংবদন্তি আব্দুল করিমের ‘প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁন’ গানের সুরের যাদুতে বিমোহিত সবাই। প্রখ্যাত ভাওইয়াশিল্পী নাদিরা বেগমও সুরের মূর্ছনায় মাথা নাড়ছেন।

আর ভাওয়াইয়া গানের জন্য প্রাণের টানে ছুটে আসা স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাও যেনো কিছু সময়ের জন্য রংপুরের গ্রামে ফিরে গেছেন।

শনিবার রাতে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে স্ত্রীর পাশপাশি বসে দীর্ঘ সময় গান শুনে পার করছেন শত ব্যস্ত থাকা এই মানুষটি।

আব্দুল করিমের এই গানের পর ধীরেন্দ্রনাথ, হরলাল রায়, একেএম আব্দুল আজিজ এবং কছিম উদ্দিনের বিখ্যাত ভওয়াইয়া গানগুলো একটার পর একটা শুনলেন জাতীয় পার্টির এই নেতা।

দীর্ঘ সময় স্ত্রীর পাশে বসে তাকে একমনে গান শুনতে দেখে একজন সাধারণ দর্শক মন্তব্য করলেন ‘রসিক কালাচাঁন প্রেম জানে। তাই তো স্ত্রীর সঙ্গে বসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে একমনে গান শুনছেন।

প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী, গবেষক, মিডিয়াকর্মী আর শ্রোতা-কলা কুশলীরা পর্যন্ত অপেক্ষায়। তিন মাসের অন্বেষণ আর চর্চার ফলাফল হাতে পাওয়ার অপেক্ষা প্রশিক্ষণ নেওয়া শিল্পীদের।

ranga 8সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অপেক্ষার অবসান ঘটে। তখন মিলনায়তনে কানায় কানায় দর্শক ভর্তি। সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা আর সাদা চপ্পল পরে সস্ত্রীক ঢুকলেন প্রধান অতিথি। মঞ্চের সামনের সারিতে পাশাপাশি বসলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং তার স্ত্রী। স্ত্রীর বাম পাশে প্রখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী নাদিরা বেগম এবং ভাওয়াইয়া গবেষক ড. জেসমিন বুলি।

মিলনায়তনে পৌঁছার পর মশিউর রহমান রাঙ্গা কুশল বিনিময় করলেন শিল্পী, গবেষক এবং দর্শকদের সঙ্গে। স্ত্রীকে নিয়ে দর্শক গ্যালারির সামনের সারিতে পাশপাশি বসেই পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন দু’জন।

সাংস্কৃতির অনুষ্ঠান শুরুর আগে ভাওইয়া গান সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রসারের লক্ষ্যে আয়োজিত শিল্পী অন্বেষণ  কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রাঙ্গা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী নিজে জানালেন তিনিও গান শিখতেন এক সময়। সঙ্গীত তার প্রিয় বিষয়। তবে বর্তমানে যে গান বাজারে সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে তার সমালোচনা করে বলেন, গানের গলার চেয়ে ড্রামের শব্দই বেশি জোরে শোনা যায়। তিনি দেশীয় গানের চর্চার পরামর্শও দেন প্রশিক্ষণার্থী শিল্পীদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী তার সমাপনী বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করেন। শিল্পীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার উদাহরণ তুলে ধরেন।

তবে বর্তমান রাজনীতির নামে সহিংসতার কথা উল্লেখ করে লিয়াতক আলী লাকী বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তারা সঙ্গীত ভালবাসে না। যে সুর ভাল বাসে না সেই তো অসূর। অসূর যতই লম্পঝম্প করুক একদিন হারিয়ে যাবে। সাপও সঙ্গীত ভালবাসে, যোগ করেন লাকী।

ভাওয়াইয়া গানের প্রখ্যাত শিল্পী নাদিরা বেগম বলেন, গানের এই ধারাটির শুন্যতা চলছে। আমরা ভাওয়াইয়ার কিংবদন্তি শিল্পী আববাস উদ্দিনের কাছাকাছি কেউ পৌঁছাতে পারছি না।

তবে আশার কথাও শোনান এই শিল্পী। বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, কর্মশালার জন্য শিল্পীই হয়তো পাবো না। কিন্তু একশ দশজনকে সনদ দিতে পারছি। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, এরা চর্চা করলে আমরা ভাওয়াইয়ার প্রসার ঘটাতে পারবো। ভাওয়াইয়া তুলে ধরতে পারবো বিশ্ব দরবারে।

ছায়ানটের শিক্ষক ও ভাওয়াইয়া গবেষক ড. জেসমিন বুলি বলেন, ভাওয়াইয়া গান শুধু সঙ্গীত নয়, ইতিহাসের ধারা সংস্কৃতির অংশ। এই মনি-মুক্তাকে যদি লালন করতে পারি তাহলে আমরা বিশ্ব দরবারে তা উপস্থাপন করতে পারবো।

উদ্বোধনী আলোচনায় আরো অংশ নেন বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, বাংলা একাডেমীর প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক মো. শাওকাত ফারুক।

তারাও আশাবাদী ভাওয়াইয়া শিল্পী অন্বেষণ এবং এব বিকাশে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের কাছে ভাল কিছু পাওয়া যাবে। তিন মাসব্যাপী কর্মশালার অভিজ্ঞতায় তেমনটি আভাস মিলেছে বলে জানান তারা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হলে প্রতিমন্ত্রী আবার দর্শক গালারির ওই নির্দিষ্ট চেয়ারে এসে বসেন স্ত্রীর পাশে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়, আব্দুল করিমের ‘প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁন’ গান দিয়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা শেষ হয় রাত সাড়ে আটটার দিকে। প্রায় দুই ঘণ্টা টানা বিনোদনে কাটান প্রতিমন্ত্রী।

অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর কাছেও শিল্পীরা সরকারি সহায়তার আশ্বাস চান। তিনিও শিল্পীদের সহায়তার আশ্বাস দেন।  সৌজন্যে বাংলানিউজ।

 ঢাকা জার্নাল, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.