৩৮২ দিন পর জয় পেল বাংলাদেশ

নভেম্বর ২২, ২০১৪

SAKIB-1416582739ঢাকা জার্নাল: চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে : ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর। ওই দিন ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ৩-০তে বাংলাওয়াশ হন সফকারীরা। সে-ই শেষ?   এর পর এক বছর পেরিয়ে গেল, অথচ জয় নামক সোনার হরিণটি মুশফিকের হাতে ধরা দেয়নি। এ সময়ে ১৩টি ওয়ানডে খেলা হলেও জয় নেই একটি ম্যাচেও। অবশেষ জয় ধরা দিল। আবারও হুংকার দিলেন টাইগাররা। ৩৮২ দিন পর জয় পেল বাংলাদেশ।

নতুন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার হাত ধরে চলতি বছরে প্রথম জয় পেল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। মাশরাফির সাজানো মঞ্চে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি আর বল হাতে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক সাকিব আল হাসান।   টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে সাকিবের ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৮১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ১৯৪ রানে আটকে যায় জিম্বাবুয়ে। ৮৭ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।  

ব্যাট ও বল হাতে সমান তালে পারফরম করে অনন্য এক রেকর্ডও গড়েছেন সাকিব। ক্রিকেট ইতিহাসের দশম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে চার উইকেট ও সেঞ্চুরির মালিক বাংলার সাকিব আল হাসান।   টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৮১ রান সংগ্রহ করে। এটি এই মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।   সাকিব আল হাসানও ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় শতক তুলে নেন।

২০১০ সালের পর এটি সাকিবের প্রথম শতক। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে ১০৬ রান করেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। কামুনগোজির বলে আউট হওয়ার আগে ৯৯ বলে ১০টি বাউন্ডারিতে ১০১ রান করেন সাকিব।   সাকিব ছাড়াও অর্ধশতকের দেখা পান মুশফিকুর রহিম। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৭তম অর্ধশতক। অর্ধশতকের পর ১৫ রান যোগ করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। অবশ্য ব্যক্তিগত ১৬ রানে চিগুম্বুরা ও ৬০ রানে টেলর মুশফিকের ক্যাচ ছাড়েন।

এ ছাড়া ৫৫ রানে ক্যাচ দিলেও নো বলের কারণে বেঁচে যান টেস্ট অধিনায়ক।   পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান ১৪৮ রানের জুটি গড়েন, যা পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ২০০৮ সালে ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৯ রান করেন সাকিব ও রকিবুল হাসান। অবশ্য ইনিংসের শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেন স্বাগতিকরা। ঘরের ছেলে তামিম ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ করেন। পানিয়াঙ্গারার বলে বোল্ড হওয়ার আগে এক বাউন্ডারিতে মাত্র ৫ রান করেন। এরপর এনামুল হক বিজয় শট খেলতে গিয়ে ১২ রানে চাতারার বলে চিগুম্বুরার হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ফর্মে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এরপর স্বাগতিক দর্শকদের আরো হতাশ করেন। ৯ বলে ১ রান করে চাতারার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন।    

এরপর চতুর্থ উইকেটে মুমিনুল ও সাকিব ৪৮ বলে ৩৯ রানের জুটি গড়েন। টেস্ট সিরিজে ফর্মে থাকা মুমিনুল ওয়ানডেতেও নিজের জাত চেনাচ্ছিলেন। কিন্তু দলীয় ৭০ রানে নিয়াম্বুর বলে অফস্ট্যাম্পে বাইরে এসে মারতে গিয়ে বোল্ড হন কক্সবাজারের এই তারকা।  ৪৬ বলে ২ বাউন্ডারিতে  ৩১ রান করেন বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।   এরপর ম্যাচের ভাগ্য পাল্টে দেন সাকিব ও মুশফিক। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করে এই দুই ব্যাটসম্যান ১৪২ বলে ১৪৮ রান করেন। এ সময়ে সাকিব শতক ও মুশফিক অর্ধশতক তুলে নেন।  

শেষ দিকে ১১৩তম ওয়ানডে ক্যাপ পরা সাব্বির রহমান রুম্মনের ২৫ বলে ঝোড়ো ৪৪ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ২৮১ রানের সংগ্রহ পায়। ৩টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকান মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। সাব্বিরের সঙ্গে ১ রানে অপরাজিত থাকেন আরাফাত সানী। এর মাঝে মাশরাফি ১ রানে সাজঘরে ফেরেন।   জিম্বাবুয়ের হয়ে পানিয়াঙ্গারা ৩ উইকেট নেন। ২টি নেন চাতারা। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নেন নিয়াম্বু ও কামুনগোজি।  

জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ৭.২ ওভারে ৪৭ রান তুলে নেন। এর পরই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন সাকিব। ওভারের তৃতীয় ও পঞ্চম দলে সিকান্দার রাজা ও ভুসিমুজি সিবান্দাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান সাকিব। তৃতীয় উইকেটে মাসাকাদজা ও টেলর ৪৫ রানের জুটি গড়ে সাকিবের ধাক্কা সামাল দেন। কিন্তু অন্য প্রান্তে জোড়া আঘাত হানেন মাহমুদুল্লাহ। মাসাকাদজাকে ৪২ ও চাকাবাকে ৯ রানে সাজঘরে পাঠান তিনি। বিপদে পড়া জিম্বাবুয়েকে আরো চাপে ফেলেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথমে টেইলরকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তিনি।

উইকেটের পেছনে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ ধরেন মুশফিক। এরপর চিগুম্বুরাকে সাজঘরে ফেরান ১৫ রানে। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। সফরকারী শিবিরের শেষ দুই উইকেট তুলে নেন আরাফাত সানী ও সাকিব। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন চাতারা।   এখন পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে বাংলাদেশ।   

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ২১, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.