স্বাভাবিক গরু চিনবেন কী করে

অক্টোবর ২, ২০১৪

Bogra_Cow_Bazar_7_494689028ঢাকা জার্নাল: কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। এ উপলক্ষে নগরীর স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুরহাটে অনেকের হয়তো কুষ্টিয়ার এনামূল হক ও কাছেদের ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা মূল্যের বাহাদুর ও কালুর (গরুর প্রতীকী নাম) প্রতি নজর যেতে পারে।

কিন্তু পশু মোটাতাজাকরণে Prednisolone ট্যাবলেট, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও নিষিদ্ধ রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।

মোটাতাজা গরু কিনে অনেকে ঝ‍ুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই স্লিম গরু কেনা অনেকটাই নিরাপদ বলে মনে করেন ভেটেরিনারি সার্জন।

তাদের মতে মোটাতাজা গরু কেনার সময় পশুর রক্ত ও ইউরিন পরীক্ষা করা ভালো।

ভেটেরিনারি সার্জনদের মতে পশুটি যদি অতিরিক্ত ঝিমানো, পায়ের পাতা ফোলা, শরীরে ব্যথা, ক্ষ্যাপাটে ভাব, শরীরে শক্তি কম, মুখ দিয়ে লালা পড়া, জিহ্বা বের হয়ে থাকা, চোখের পাতা ফোলা, শরীরে স্পর্শ করলে আঙ্গুল বসে যাওয়া ও শরীর ফুলে যায় তবে সেক্ষেত্রে মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে।

ইনজেকশন ব্যবহারের ফলে পশুর কিডনি বিকল হয়ে যায় এবং তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই গরু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানান সার্জনরা।

ভেটেরিনারি সার্জন আমিনুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত ঝিমানো, পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া, শরীর ব্যথা, শক্তি কমে যায়, মুখ দিয়ে লালা পড়া, জিহ্বা বের হয়ে যাওয়া, শরীরে স্পর্শ করলে হাতের আঙ্গুল বসে যায় সাধারণভাবে এসব পশু কেনার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে ফার্মাসিউটিক্যালস ল্যাবের মাধ্যমে পশুর রক্ত ও ইউরিন পরীক্ষা করে নিতে হবে। অনেক সময় পশুর শারীরিক অবস্থা দেখে বিষয়গুলো শনাক্ত নাও করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, মোটাতাজা গরু কিনে ঝুঁকিতে পড়ার চেয়ে স্লিম গরু কেনা ভালো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির মোটাতাজাকরণ গরু ঢাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে Prednisolone নামে এক ধরণের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। যাতে করে মোটাতাজা গরু ঢাকায় প্রবেশের পরও স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।

নতুন স্থানে আসার পর গরু সাধারণত কিছু খেতে চায়না। এছাড়া অনেক মানুষ দেখলে ভয় পায়। এতে করে গরুর স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। গরুর স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্যই গরু প্রতি ৮-১০টি Prednisolone ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় বলে জানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক চিকি‍ৎসক। এ ট্যাবলেটের কাযর্কারিতা ৮-১০ দিন থাকে।

ট্যাবলেটটি অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে গরুর কিডনি বিকল হয়ে যায়, ম‍ুখ দিয়ে লালা পড়ে ও ঝিমানিভাব হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ আজমত আলী জানান, আমরা দেখেছি সাধারণত পশু মোটাতাজাকরণে ঢাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে Prednisolone নামক এক ধরণের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। যাতে করে মোটাতাজা গরুটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।

কোন ধরনের গরু কেনা নিরাপদ এমন প্রশ্নের জবাবে আজমত জানান, একটু স্লিম, গরুর পাশে গেলে লাথি দিতে চায়, সব সময় চঞ্চল, দড়ি দিয়ে আটকানো যায় না, তিন-চার জন ধরতে গেলেও সবাইকে ফেলে দিয়ে পালাতে চায় এমন স্লিম চঞ্চল হাইপার গরু কেনা বেশি নিরাপদ।

Prednisolone, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও নিষিদ্ধ রাসায়নিকও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে নানা ধরণের রোগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে কিডনির সমস্যা, লিভার, ব্রেইন স্ট্রোক, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক, পেটের পিড়া ও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা গরু সাধারণত অসুস্থ হয়। এসব পশুর মাংসে প্রচ‍ুর পরিমাণে চর্বি থাকে। সেক্ষেত্রে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে কিডনির সমস্যা, লিভার ড্যামেজ, ব্রেইন স্ট্রোক, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক, পেটের পিড়া ও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।

তাই কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা, চকচকে গরু ক্রয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা মানেই অসুস্থ গরু। আর এ ধরনের গুর‍ুর ‍মাংস খেলে অসুস্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ২, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.