বিএনপির কারণে মহীসোপানে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি

জুলাই ১৩, ২০১৪

pmঢাকা জার্নাল: বিগত বিএনপির সরকারের কারণে মহীসোপানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার সকালে সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী এ অভিযোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা ’৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনেকগুলো এগিয়ে রেখে যাই। আমাদের আশা ছিল, পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা কাজ এগিয়ে নেবেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্য আমাদের! তারা (বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার) কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তিনি বলেন, তারা (বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার) সময় মতো পদক্ষেপ নিলে মহীসোপানে যে নির্দিষ্ট জায়গা, আমাদের অধিকার সেটা সুনির্দিষ্ট হয়ে যেতো এ রায়ের সঙ্গে সঙ্গে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো কিছুরই একটা সময় থাকে। সে সময়ে তারা সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি বলে আমরা পিছিয়ে গেছি। আসলে তাদের এ নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনাই ছিল না। আমরা আমাদের পুরো অধিকার হারাতাম, যদি ১০ বছরের মধ্যে আবারও দাবিনামা পেশ করতে না পারতাম!

সমুদ্রে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের সফলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কাজটা অত সহজ ছিল না। আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে; অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা আইন করে গেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, ২১ বছর তারা ক্ষমতায় ছিল। দুই দুইটা মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় ছিল। তারা কেউ কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আবার উদ্যোগ নিই। কেবিনেটে বিষয়টি রেটিফাই করি, জাতিসংঘে অনুস্বাক্ষরের ব্যবস্থা করি।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জনগণের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করবেন। মনে রাখবেন, সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর; যার মধ্যে ছয় মাস চলে গেছে। সাত মাস চলছে। আর বাকি আছে চার বছর পাঁচ মাস। এ সময়ের মধ্যে আমাদের সব কাজ শেষ করতে হবে।

সবাই সততা, কর্মদক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে দেশকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা হবে। কিন্তু তার আগেই আমরা এটা করতে পারবো। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার সব ধরনের বিশৃঙ্খলা মোকাবেলা করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার এটা করতে সক্ষম হয়েছে, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারার কারণে।

মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ৯৬ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, আগে গ্রামের মানুষ ভাত-কাপড় চাইতো। সত্যি কথা বলতে কী, এখন তারা চায় বিদ্যুৎ। তারা বলে, আমাদের বিদ্যুৎ দেন। ইন্টারনেটের গতি কম কেন, এ প্রশ্নেরও জবাব দিতে হয়। মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষ আর্থিকভাবে সফলতার মুখ দেখছে। মানুষের সঞ্চয় বাড়ছে। এখন আর সুদের জন্য ঘরের চাল টেনে নিচ্ছে না কেউ।

প্রতিটি জেলায় কেউ যাতে গৃহহীন না থাকে, কেউ থাকলে তাদের খুঁজে বের করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

৪৮ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যের বেশিরভাগ সময়ই প্রধানমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও এর মাধ্যমে মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং সফলতার কথা তুলে ধরে বলেন, শুধু ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সেবা গ্রহণ করছেন।

তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার মহাখালী, রাজশাহী, চট্রগ্রাম ও বরিশালে আইসিটি ভিলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি আইটি ভিলেজ বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রফতানি করে ১২৫ মিনিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে জানান তিনি।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ট্রেনিং ও ভাষা শিক্ষা। সরকার এ লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ‘বাড়ি বসে বড় লোক’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে আরো বক্তব্য রাখেন, মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।

এ সময় সচিব আবু বকর সিদ্দিকসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন।

ঢাকা জার্নাল: জুলাই ১৪, ২০১৪

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.