‘পা’ নেই তো রাস্তায় বের হইছিস কেন?’

মার্চ ৩১, ২০১৪

policeঢাকা জার্নাল : দুপুর তখন পৌনে একটা। চারিদিকে চৈত্রের খা খা রৌদ্দুর। শারীরিকভাবে অক্ষম এক ব্যক্তিকে নিয়ে রাজধানীর আসাদগেট পার হচ্ছিল একটি রিকশা। এমন সময় হুংকার দিয়ে ছুটে আসলেন একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট। রিকশাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই কোথায় যাস? কেন যাস? রিকশাওয়ালা বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দিল, সংসদ ভবন। অসুস্থ লোক তাই নিয়ে যাচ্ছি। এরপর ট্রাফিক সার্জেন্ট বললেন, ১০ টাকা দে। রিকশাওয়ালা কেন স্যার বলতেই সার্জেন্ট রিকশার ডান চাকার হওয়া ছেড়ে দিলেন।

সোমবার ট্রাফিক সার্জেন্ট মহিদুল যখন এই অমানবিক ঘটনাটা ঘটাচ্ছিলেন তখন রিকশাযাত্রী ও রিকশাওয়ালা দুজনেই বারবার অনুরোধ করেও তাকে নিবৃত্ত করতে পারননি। এরপর সার্জেন্ট রিকশাওয়ালাকে গালিগালাজ করতে করতে গিয়ে দাঁড়ালেন আসাদ গেটের আইল্যান্ডের উপর। রিকশা থেকে নেমে ওই যাত্রী লাঠিতে ভর দিয়ে কৃত্রিম পায়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে দাঁড়ালেন ট্রাফিক সার্জেন্টের সামনে। নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলেন, এমন করলেন কেনো? সার্জেন্ট উত্তর দিলেন যা করেছি, ভালো করেছি।

যাত্রী বললেন, একটু অমানবিক হয়ে গেলো না? সার্জেন্ট উত্তর দিলেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এই রাস্তায় রিকশা চলে না। এতে অমানবিকতার কি? যাত্রী বললেন, আমি তো দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর থেকে গত দুই বছর একইভাবে মোহাম্মদপুর থেকে সংসদ ভবনে যাওয়া-আসা করছি। সার্জেন্ট ক্ষেপে গিয়ে বললেন, সেটা আমার দেখার বিষয় না। উপরের নির্দেশ আছে। অফিসাররা কোনো কথা শুনতে চান না। আপনি সংসদে যাবেন, কি যাবেন না, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।

অসহায় ব্যক্তিটি কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর রিকশাওয়ালাকে ভাড়া মিটেয়ে অন্যান্য পথচারীদের সহায়তায় রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এমন সময় পিছন দিক থেকে সার্জেন্ট টিপ্পনী কাটলেন, ‘পা’ নেই তো রাস্তায় বের হইছিস কেন?’ এরপর সবাই হতবাক। বলে কি ওই পুলিশ! অবশ্য ওই যাত্রী শুনেও না শোনার ভান করে সংসদ ভবনের দিকে হাঁটতে থাকলেন। আর রিকশাওয়ালা জব্বার আলী ফিরে গেলেন মোহাম্মদপুর টাউন হলের দিকে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.