পদত্যাগ করে সম্মান বাঁচান: রওশনকে খালেদা

মার্চ ২৯, ২০১৪

Khaledaঢাকা জার্নাল : সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বর্তমান বিরোধীদল নেতা রওশন এরশাদকে সময় থাকতে পদত্যাগ করে নিজেদের সম্মান বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়া রওশন এরশাদকে উদ্দেশ করে বলেন, বিরোধীদল নেতা বলে যিনি নিজের পরিচয় দেন, তিনি বলেছেন, চাপের মুখে পড়ে নির্বাচনে গেছি। চাপতো আমাদেরও ছিল! আমরা তো নির্বাচনে যাইনি! জনগণের কথা ভেবেছি। তাহলে কী চাপে গেছেন?

তিনি এ সময় রওশন এরশাদের সমালোচনা করে বলেন, নিশ্চয়ই কোনো অপকর্ম আছে। তার জন্য ব্যবস্থাও নিশ্চয়ই হবে ইনশাল্লাহ। এখনও সময় আছে, যেহেতু বলছেন, নির্বাচন করবেন না। তাই, অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিজেদের অবশিষ্ট সম্মান বাঁচান।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে বাংলাদেশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন-২০১৪’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সমালোচনা করেন।

খালেদা সরকারের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। এর কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের জনপ্রিয়তা দেখতে নির্বাচন দিন।

তিনি বলেন, এখন সংসদে বিরোধীদল নেই। তারা গৃহপালিত বিরোধীদল। সরকারেও আছে, বিরোধীদলেও আছে। তারা কীভাবে বিরোধীদলের ভূমিকা নেবে!

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কখনো গুলি চালাইনি। তাদের নামে মিথ্যা কোনো মামলা দেইনি। তাদের নেতাকর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে, পিকনিকও করেছে।

তিনি বলেন, তাদের মহিলারা পুলিশের হাতে কামড়ও দিয়েছে। এতেই তাদের চরিত্র বোঝা যায়!

খালেদা বলেন, আওয়ামী লীগ বার বার গণতন্ত্র হত্যা করেছে।

এরশাদ, মঈনুদ্দিন, ফখরুদ্দিনসহ বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক সরকার আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

খালেদা বলেন, আমার কাছে অনেকবার বহু প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আমি বলেছি, এ সবের মধ্যে আমি নেই। সংগ্রাম করে গণতন্ত্র এনেছি। তোমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা আপস আমি করবো না।

প্রয়োজনে আবারও জেলে যাবেন বলে জানান খালেদা।

খালেদা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা বলেছিলাম, একদলীয় এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যাবে না। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ সেদিন ভোট দিতে যায়নি। বিএনপি এবং জনগণ সফল হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, ১৫৩টি সিটে কোনো লোকই পায়নি। তাই, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।

খালেদা বলেন, সংবাদপত্রের ছবিতে এসেছে প্রিজাইডিং অফিসার ঘুমাচ্ছে। কুকুর বসে আছে, সিল মারছে। এ সব পত্রিকার প্রত্যেকটি আমাদের কাছে আছে।

তিনি বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) এরপর উপজেলা নির্বাচন দিল। ভেবেছিল, বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু, আমরা জানি, জনসমর্থন আমাদের আছে। আমরা যখন এগিয়ে আছি দেখতে পেলো, তখন শুরু হলো শয়তানী!

তিনি বলেন, এখন ভোট হয় না। সকাল আটটা সাড়ে আটটার মধ্যেই ভোট শেষ। আগে থেকেই বাক্স ভরা থাকে। এরপর সিল মারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র মৃত। দেশে কোনো সরকার নেই। দেশে এখন অবৈধ সরকার। অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় এসেছে, মানুষের ওপর অত্যাচার-জুলুম চালাচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টান্ত দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সাংবাদিকদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, দেশে এখন কী অবস্থা! সংবাদ প্রকাশ যাদের পেশা, সেই সাংবাদিকদের ২৩ জনকে এই সরকার হত্যা করেছে। কোনো পেশার মানুষ এই সরকারের কাছে নিরাপদ নয়। তাই, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা আজ জরুরি।

তিনি বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এ সরকার কথায় কথায় বলে দেশের উন্নতি নাকি করেছে। দেশের উন্নতি কী হয়েছে? উন্নতি হয়েছে ঢেঁকি! উন্নতি হয়েছে, আওয়ামী লীগ পরিবারের। সব টাকা লুটপাট করে তারা বিদেশে পাচার করেছে।

সাবেক বিরোধীদল নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আজ নামেমাত্র বাংলাদেশ। পরিচালিত হচ্ছে, অন্যদেশের দিয়ে। অনেক বিদেশিরা দেশে কাজ করছেন। একবার পারমিট নিয়ে দেশে কাজ করে চলেছেন।

তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ মুখে মুখেই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। তারা মুক্তিযুদ্ধ ও রণাঙ্গণ দেখেনি।

খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশের কথা তুলে ধরে বলেন, সেদিন যারা সেখানে অংশ নিয়েছেন, তারাই সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধা নেই। তারা শরণার্থী মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি বলেন, কথায় কথায় তারা রাজাকারের কথা বলেন। নিজেদের দলে রাজাকার রেখেছেন। এতদিন যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তিনিও ছিলেন রাজাকার।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টামহলেও বিতর্কিত লোক রয়েছেন বলে ইঙ্গিত করেন খালেদা জিয়া।

তিনি সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্টদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে হবে। নইলে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে না। কারণ, এ সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় বসে আছে।

সংগঠনের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজে’র সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।

এর আগে সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, সাংবাদিকদের প্রতি অকথ্য নির্যাতন অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এই সরকার গণমাধ্যমের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।

তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে ২ থেকে ৫ শতাংশ মানুষ অংশ নিয়েছে।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রকাশ করেন রুহুল আমিন গাজী।

ডিইউজে সভাপতি আবদুল হাই শিকদার সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনিও জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ বলে উল্লেখ করলে খালেদা জিয়া মাথা নেড়ে সায় দেন।

সত্যিকারের স্বাধীন গণমাধ্যমের দিন ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সবুজ বলেন, মানুষের মনে এই সরকারের পতন হয়েছে। সরকার হিংস্র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ভিন্নমতের মানুষদের সরাসির গুলি করছে, কারাগারে প্রেরণ করছে। সরকার বিরোধীমতকে ভয় পায়। নির্বাচনে বিরোধীদলকে দেখতে চায় না।

মঞ্চের সামনে অতিথিদের কাতারে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান প্রমুখ।

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়া মঞ্চে নিজ আসনে এলে কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।

মাঝে মাঝে স্লোগান দিতে থাকলে কোনো রাজনৈতিক স্লোগান না দিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বার বার আহ্বান জানানো হয়।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৯, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.