রাজশাহীতে চিকিৎসকদের ধর্মঘট স্থগিত

মার্চ ২৯, ২০১৪

rajshahiঢাকা জার্নাল : রাজশাহীতে চিকিৎসকদের ধর্মঘট রবিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক শেষে ধর্মঘট স্থগিতের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

শুক্রবার রাতে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সাবেক মেয়র লিটন। লিটন জানান, রবিবারের মধ্যে ক্লিনিক মালিক শিমুলের মুক্তির আশ্বাস দিয়েছি। ওই সময়ের মধ্যে শিমুল মুক্ত হলে তারা আর ধর্মঘট করবেন না। আশা করি, রবিবারের মধ্যে শিমুলকে মুক্ত করতে পারব।

ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএমএ রাজশাহীর সভাপতি ডা. এস আর তরফদার, বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ডা. আব্দুল মান্নান।

‘ভুল চিকিৎসায়’ রোগীর মৃত্যুর মামলায় স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা ডাক্তার শামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুলকে কারাগারের পাঠানোর প্রতিবাদে চিকিৎসকদের সাতটি সংগঠন বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে অনির্দিষ্ট কালের এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।

চিকিৎসকদের ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়ে রাজশাহীর চিকিৎসাসেবা, বন্ধ থাকে সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রাজশাহী মেডিকলে কলেজ হাসপতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলো খোলা থাকলেও সেখানে চিকিৎসক ছিলেন না।

এদিকে চিকিৎসার অভাবে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশরাফুল ইসলাম (৩৫)। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে তিনি মারা যান।

আশরাফুলের ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ধর্মঘটের কারণে চিকিৎসক না থাকায় নার্সরা তার ভাইয়ের চিকিৎসা করেছেন। এ অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে আশরাফুল মারা গেছেন।

তবে ওই ওয়ার্ডের ইন্টার্নি চিকিৎসক তাহামিনা সুলতানা তমা বলেন, সিনিয়র ডাক্তার না থাকলেও চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে না। প্রয়োজনে সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

ধর্মঘট ডেকে রোগীদের জিম্মি করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ও নার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মকলেসুর রহমান বলেন, আমরা রোগীদের জিম্মি করতে চাই না। তবে ধর্মঘটে যেতে হয়েছে আমাদের, এটিই বাধা।

তিনি বলেন, চিকিৎসাকালীন একজন রোগী মারা যেতেই পারেন। কিন্তু হত্যা মামলা দিয়ে ডা. শিমুলের মতো একজন নামী চিকিৎসককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর মামলা দিলে আমাদের আপত্তি থাকত না। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে জানান মকলেসুর রহমান।

ডলফিন ক্লিনিকে অপারেশনের সময় একজন রোগীর মৃত্যুর মামলায় বৃহস্পতিবার রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক বিশ্বনাথ চন্দ্র মণ্ডলের কাছে জামিনের আবেদন করেন শিমুল। বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেন।

এর প্রতিবাদে রাজশাহীর সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন মালিকরা। বিএমএর রাজশাহী শাখা তাদের এই ধর্মঘট সমর্থন করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়।

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা চাঁপাইনবাগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শেখটোলা গ্রামের আজগর আলীর ছেলে ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হককে (৩৫) পিটিয়ে তার পা ভেঙে দেয়। গত ২৯ জানুয়ারি ডা. শিমুলের ডলফিন ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে পায়ে অস্ত্রোপচার করার জন্য চেতনানাশক ইনজেকশন দেয়ার পর তিনি মারা যান। এর আগেও ওই ক্লিনিকে আরও দুজন রোগী চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা যান বলে অভিযোগ আছে।

ভুল চিকিৎসায় স্বামীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে ক্লিনিকের মালিক ডা. শিমুলসহ দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত ব্যবসায়ী আনোয়ারুলের স্ত্রী শারমিন আক্তার।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৮, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.