খালেদাকে ক্ষমা চাইতে হবে: সুরঞ্জিত

মার্চ ২৮, ২০১৪

Suranjit senজিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করায় খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, এনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় ‘ভিত্তিহীন’ ওই দাবি তুলেছেন।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সুরঞ্জিত বলেন, “সম্প্রতি আকস্মিকভাবে মা-পুত্র একজন লন্ডন থেকে, আরেকজন ঢাকা থেকে নতুন এক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এই দাবি যেমন উদ্ভট, তেমনি হাস্যকর।

খালেদাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “সমস্ত জাতি যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে তখন জাতিকে দ্বিখণ্ডিত করার জন্য আপনি এইসব উদ্ভট দাবি করছেন। এটা অপরাধ এবং আমি আহ্বান জানাব, আপনি এই অপরাধের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন।”

বিএনপি চেয়াপারসনের বড় ছেলে ও দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তারেক রহমান গত ২৬ মার্চ লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, জিয়াউর রহমানই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

এর একদিন পর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াও নিজের স্বামী জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে দাবি করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “এতোদিন তারা বলেছেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযু্দ্ধের সেনাপতি, স্বাধীনতার ঘোষক- এ টুকু না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু তাই বলে তাদের এই ধরনের দাবি অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং মিথ্যাচার; যার না আছে কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি, না আছে কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি।”

জিয়াউর রহমান নিজেও কখনো এমন দাবি করেননি বলে মন্তব্য করেন সুরঞ্জিত।

“তিনি কোথাও কখনো বলেননি যে তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। বিচিত্রায় যে আর্টিকেলটি তিনি লিখেছিলেন, সেখানে বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।”

১৯৭১ সালে মুজিবনগরে গঠিত দেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের পটভূমি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পালাবদলের এক পর্যায়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের একজন জিয়া। সামরিক আইনের বলে শাসনের পর রাষ্ট্রপতিও হন তিনি।

বিএনপি জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করলেও তা না বলার নির্দেশ রয়েছে বাংলাদেশ হাই কোর্টের।

একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের উষালগ্নে জিয়ার পাঠ করা স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি প্রয়াত বেলাল মোহাম্মদের ভাষ্য, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়া।

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সুরঞ্জিত বলেন, “সম্ভবত তিনি বুঝতে পেরেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে বাদ দিয়ে, রাজাকারের প্রতিনিধিত্ব করে এই দেশে রাজনীতি করা যাবে না। এ কারণেই তিনি তার স্বামীকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেছেন।”

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসিত করার জন্য জিয়াকেই দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

খালেদাকে উদ্দেশ্য করে সুরঞ্জিতও বলেন, “আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান যখন বারবার আপনাকে চট্টগ্রামে যেতে বলছিলেন, তখন তার নির্দেশ উপেক্ষা করে আপনি পাকিস্তানিদের অধীনে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন কেন?

“আপনি এবং আপনার স্বামী সমস্ত রাজাকারদের পুনর্বাসিত করেছেন। তারপরও কীভাবে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন?”

নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত এ আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মিজি, সাম্যবাদী দলের নেতা হারুন চৌধুরী ও কৃষক লীগের নেতা মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.