বাদ্যযন্ত্রের পরিচয়

অক্টোবর ১৭, ২০১৩

2_17335ঢাকা জার্নাল: বাদ্যযন্ত্র সঙ্গীতোপযোগী শষ্ফ সৃষ্টিকারী যন্ত্র। এগুলি ক্মঠসঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীতের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে খননকার্য ও প্রাচীন সাহিত্য থেকে অতি উন্নতমানের এক সাঙ্গীতিক সভ্যতার পরিচয় পাওয়া যায় এবং সেই সূত্রে বিভিন্ন বাদ্যযন্যেরও পরিচয় মেলে।

সিন্ধুসভ্যতায় বেণু, বীণা ও মৃদঙ্গের ব্যবহার ছিল বলে জানা যায়। বৈদিক যুগে দুন্দুভি, ভৃমি-দুন্দুভি, বেণু, বীণা প্রভৃতি বাদ্যযন্যের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। গঠন ও উপাদানগত দিক থেকে বাদ্যযন্ত্রসমূহ তত, শুষির, ঘন ও আনদ্ধ এই চার শ্রেণীতে বিভক্ত। ততযন্ত্র তারসংযুক্ত, ফুঁ দিযে় বাজানো হয় যেগুলি সেগুলি শুষির, ধাতুনির্মিত যন্ত্র ঘন এবং চামড়ার আচ্ছাদন দিযে় তৈরি যন্ত্রের নাম আনদ্ধ।

imagesতত ও শুষিরযন্ত্র সঙ্গীত বা অন্য যন্ত্রের সঙ্গেও বাজানো যায়, আবার এককভাবেও বাজানো যায়। তাই এগুলির অপর নাম স্বয়ংসিদ্ধ যন্ত্র, যেমন সেতার, সরোদ প্রভৃতি। কিন্ম ঘন ও আনদ্ধ যন্ত্র কেবল গান বা অন্য যন্ত্রেরর সঙ্গেই বাজানো যায়; এগুলির একক কোন প্রযে়াগ নেই; গায়ক ও বাদকের তাল ও ছন্দ ঠিক রাখাই এগুলির কাজ। তাই এগুলির অপর নাম অনুগতসিদ্ধ, যেমন তানপুরা, মৃদঙ্গ প্রভৃতি; ক্মঠসঙ্গীতের সঙ্গে এগুলির সমপর্ক ঘনিষ্ঠতর। পণ্ডিতদের ধারণা, ডণ্টামাদি আনদ্ধ বাদ্য সর্বাগ্রে আবিষ্কৃত হয়; পরে মানুষ তত জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার আয়ত্ত করে। শুষির ও ঘন জাতীয় যন্যের উদ্ভব হযে়ছে আরও পরে। তত জাতীয় যন্ত্রগুলি দুপ্রকারের: অঙ্গুলিত্র মিজরাব, গুটি বা জওয়া দিযে় বাজানো হয় এবং ধনুস্তত বা ধনুযন্য ছডে়র সাহায্যে বাজানো হয়। বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে ততযন্ত্রই বেশি। এগুলির সৃষ্টির পেছনে ধনুকের অবদান রযে়ছে বলে অনুমান করা হয়। ধনুকে সংযোজিত তার বা গুণ ছোট বা বড় হলে সুরের তারতম্য ঘটে।

তাছাড়া তারে অধিক টান দিলে স্বর চডে়, ঢিল দিলে নামে। স্বরের এই ওঠা-নামা থেকেই প্রথমত বেশ কযে়ক প্রকার বাদ্যযন্ত্রের সৃষ্টি হয়। কযে়কটি বাদ্যযন্ত্রের নমুনা টিউনারসর্, এসরাজ বোসুরবাহারবীণা সানাইবাঁশি, তানপুরা সেতাররবাব ভায়লিনবো তবলা-বাঁয়াহারমোনিয়ামপাখোয়াজ খোল সুরম্অতীতে বঙ্গদেশে যেসব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হতো সেসবের অনেকগুলিই বর্তমানে বিলুপ্ত বা অব্যবহৃত; আবার বর্তমানে অনেক নতুন যন্ত্রেরও আবির্ভাব ঘটেছে। অতীত ও বর্তমানের সেসব যন্ত্রকে সাধারণভাবে চারটি ভাগে ভাগ করা যায় লোক, উপজাতীয়, উচ্চাঙ্গ ও আধুনিক। লোকবাদ্যযন্ত প্রধানত ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। হিন্দুদের পূজা-পার্বণে ঢোল-কাঁসর-শঙ্খধগ্ধনি অত্যাবশ্যক। কোন কোন দেবতার মূর্তিকল্পনায়ও বাদ্যযন্যের যোগসূত্র লক্ষ্য করা যায়। শঙ্খধারী ব্পিু, ডমরূধারী শিব, মুরলীধারী কৃ্প এবং বীণাধারিণী সরস্বতীর মূর্তি এভাবেই কল্পিত হযে়ছে। বাদ্যযন্ত্রের প্রভাবে সরস্বতী ‘বীণাপাণি’ এবং কৃ্প ‘মুরলীধর’ নামে পরিচিত। মুসলমানদের বিবাহানুষ্ঠানে সানাই বাজানো হয়, আর হিন্দুবিযে়তে বাজানো হয় সানাই, শঙ্খ, ঢোল, কাঁসর ইত্যাদি। শুধু তা-ই নয়, হিন্দুদের মধ্যে শঙ্খধগ্ধনি ও উলুধগ্ধনি দিযে় বধূবরণ ও নবজাতকের আবির্ভাব ঘোষণা করা হয়। এছাড়া শবযাত্রা, শোভাযাত্রা এবং যুদ্ধযাত্রায়ও শঙ্খধগ্ধনির প্রযে়াজন হয়; কাড়া-নাকাড়া, শিঙ্গা, দামামা, বিউগল প্রভৃতি যুদ্ধের বাদ্যযন্য। অতীতে ঢোল-সহরত করে সরকারি নির্দেশ জারি করা হতো।

কতক পেশায় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার অঙ্গাঙ্গিভাবে জডি়ত। যেমন সাপুডে়রা তুবডি় বাজিযে় সাপের খেলা এবং বাজিকররা ডুগডুগি বাজিযে় বানর-ভল্লুকের খেলা দেখায়। ফেরিওয়ালা ও সার্কাসের জোকাররা পাযে় ঘুঙুর বেঁধে যথাক্রমে পণ্য ফেরি করে ও তামাসা দেখায়; জুডি় ও খঞ্জনি বাজিযে় ব্পৈব-বৈরাগী ও ভিখারিরা ভিক্ষা করে। বাদ্যযন্যকে কেন্দ্র করে বাংলার লোকসমাজে নানা আচার-সংস্কারও প্রচলিত আছে। শঙ্খ ও সানাই মাঙ্গলিক বাদ্যযন্ত্র হিসেবে গণ্য হয়; আবার রাতে বাঁশি বাজানো অমঙ্গলজনক বলে সাধারণ লোকের মধ্যে একটি সংস্কারও প্রচলিত আছে। বাংলাদেশে লোকবাদ্যযন্যের ব্যবহার বহৃ প্রাচীন। খ্রিষ্টীয় পম্ফম শতকে বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়ান প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র দেখে এ দেশকে সঙ্গীত ও নৃত্যের দেশ বলে আখ্যাযি়ত করেন। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে নির্মিত পাহাড়পুর-ময়নামতীর প্রস্তরফলক ও পোড়ামাটির চিত্রে নৃত্য ও বাদ্যরত মনুষ্যমূর্তি পাওয়া গেছে। এতে কাঁসর, করতাল, ঢাক, বীণা, মৃদঙ্গ, বাঁশি, মৃৎভাণ্ড প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের চিত্র দেখা যায়। ঢাক, ডমজ্ঞ, ডমরূ প্রভৃতি আনদ্ধ এবং শিঙ্গা, বাঁশি, তুবডি় প্রতৃতি শুষির যন্যকে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর অবদান বলে মনে করা হয়। নবম-একাদশ শতকে রচিত বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে গীত-নট-নৃত্য-বাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। চর্যার তিনটি পদে মোট সাতটি বাদ্যযন্যের নাম আছে বীণা, পটহ, মাদল, করণ্ড, কসালা, দুন্দুভি ও ডমবরূ। এগুলির মধ্যে পটহ, মাদল, করণ্ড, কসালা ও দুন্দুভি বিবাহোৎসবে বাজানো হতো। এতে বীণা সমবন্ধে বলা হযে়ছে যে, শুকনো লাউযে়র খোলের সঙ্গে তাঁতের (সুতার) তার দিযে় তৈরি এ যন্ত্র ‘সারি’ বা ছড় দিযে় বাজানো হয়। আনুমানিক ত্রযে়াদশ শতকে রচিত ধর্মপূজার গ্রন্থ শূন্যপুরাণে বিয়াল্লিশ প্রকার যন্ত্রের উল্লেখ আছে, যেমন: ঢাক, ঢোল, কাড়া, মৃদঙ্গ, মন্দিরা, ডমবরূ, দুন্দুভি, বরঙ্গ, ভোর, ধীরকালি, শঙ্খ, শিঙ্গা, ঘ্ম্টা, জয়ঢাক, দামামা, খমক প্রভৃতি। এগুলির অধিকাংশই ধর্মপূজা উপলক্ষে বাজানো হতো। মধ্যযুগে বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য (খ্রি ১৩শ-১৮শ শতক) গীতাকারে পরিবেশিত হতো। ঐসব কাব্য এবং চৈতন্যজীবনী গ্রন্থে ততাদি চার শ্রেণীর ৬৬টি বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ আছে, যথা: তত রবাব, সপ্তস্বরা, স্বরমণ্ডল, রূদ্রবীণা, মধুস্রবা, খমক, দোতারা, পিণাক, পিণাকী ইত্যাদি; শুষির সানাই, শিঙ্গা, মুহরী (মধুকরিকা), উপাঙ্গ, করনাল, বিষাণ, শাঁখ (শঙ্খ), তুরি, বেণু ইত্যাদি; ঘন করতাল, মন্দিরা, ঘ্ম্টা, ঝাঁঝর, কাঁসর ইত্যাদি এবং আনদ্ধ দুন্দুভি, ডিণ্ডিম, মৃদঙ্গ, জয়ঢাক, বীরঢাক, কাড়া, ডমরূ, পটহ, দগড়, পাখোয়াজ, ডমজ্ঞ, ভেরি, ঢাক, ঢোল, মর্দল, জগঝমপ, ডমবুরূ, খঞ্জরি ইত্যাদি। মঙ্গলকাব্যের যুগশেষে বিভিন্ন সমযে় বিভিন্ন সঙ্গীতজ্ঞের প্রচেষ্টায় বীণা, সারিন্দা, তানপুরা, এসরাজ (আশুরঞ্জনী), চন্দ্রসারং, মনোহরা, সরোদ, একতারা, সেতার, সুরমণ্ডল, সুরবাহার, বাঁশি, খটতাল, করতাল, কাঠকরতাল, তবলা-বাঁয়া, কলিজা খাউডি়, ঢোলক, শ্রীখোল প্রভৃতি বাদ্যযন্যের উদ্ভব ঘটে। চৌদ্দ শতকের ব্পৈবকাব্য শ্রীকৃ্পকীর্তনে মুরলী বা মোহনবাঁশি ছাড়াও করতাল ও মৃদঙ্গের কথা আছে; শেষের দুটিকে কৃ্পের নাচের তালবাদ্য বলা হযে়ছে। ষোলো শতকে চৈতন্যদেবের প্রবর্তনায় কীর্তন জনপ্রিয় হযে় ওঠে, যার প্রধান বাদ্যযন্ত্র ছিল খোল, করতাল ও মন্দিরা। মধ্যযুগে ভারতীয় সঙ্গীতকলায় মুসলমানদের অবদান অনেক।

সুফি সাধকদের সাধন-ভজনে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছিল। রাজসভায়ও বিনোদনমূলক নৃত্য-গীত-বাদ্যের ব্যবস্থা ছিল এবং তাতে অনেক বাদ্যযন্য ব্যবহৃত হতো; মুসলমান রচিত কাব্য, বিশেষত রাগতালনামায় এর বর্ণনা আছে। ডফ, সানাই ও নহবত জাতীয় যন্ত্র মুসলমানদেরই আবিষ্কার। ইংরেজদের আগমনের পরে এদেশে পাশ্চাত্য সঙ্গীত ও বাদ্যযন্যের ব্যাপক প্রভাব পডে়। হারমোনিয়াম, বেহালা, গিটার, ফ্লুট, বিউগল, বেঞ্জু ইত্যাদি পাশ্চাত্যের বাদ্যযন্ত্র। শহর-গ্রাম সর্বত্র হারমোনিয়াম এখন একটি সাধারণ বাদ্যযন্ত্র এবং এ দিযে়ই সঙ্গীতশিক্ষার হাতেখডি় হয়। লোকবাদ্যযন্ত্রের উপকরণ নিতান্তই সাধারণ এবং এর গঠন-প্রণালীও সহজ-সরল। লাউযে়র খোল, বেল বা নারিকেলের মালা, বাঁশ, কাঠ, নল, পাতা, মাটি, লোহা, পিতল, সুতা, তার, শিং, শঙ্খ প্রভৃতি দেশজ উপাদান দিযে় বাদ্যযন্য নির্মিত হয়। সুতা, ঘোড়ার লেজের লোম, ধাতব তার দিযে় একতারা, দোতারা, বেনা জাতীয় ততযন্ত্র; বাঁশ ও নল দিযে় বাঁশি ও তুবডি় জাতীয় শুষিরযন্ত্র; কাঁসা, পিতল প্রভৃতি ধাতব পদার্থ দিযে় খঞ্জনি, ঘ্ম্টা জাতীয় ঘনযন্য এবং গরূ, ছাগল ও সাপের চামড়া দিযে় ঢাক, ঢোল, মাদল জাতীয় আনদ্ধযন্য নির্মিত হয়। কতক বাদ্যযন্ত্রে প্রাকৃতিক উপাদান প্রায় অবিকৃত থাকে, যেমন শঙ্খ ও শিঙ্গা। তালপাতা দিযে় পাতবাঁশি তৈরি হয়। মাটির সাধারণ হাঁডি় বা ছোট কলসিও তালবাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কচি আমের আঁটি ঘষে ভেঁপু তৈরি করা হয়। নিমেক্ত কযে়কটি উল্লেখযোগ্য লোকবাদ্যযন্ত্রের বিবরণ দেওয়া হলো: ততযন্য এ শ্রেণীর বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে একতারা ও দোতারা বিখ্যাত। একতারা প্রধানত বাউল, ব্পৈব বৈরাগী ও মুসলমান ফকিররা মরমি গানের সঙ্গে ব্যবহার করেন; আর দোতারা ব্যবহৃত হয় ভাওয়াইয়া, মুর্শিদি ও কবিগানে। দোতারার ‘কোরডং’ ধগ্ধনির সঙ্গে ভাওয়াইয়া গানের সুরের নিকট-সাদৃশ্য থাকায় ভাওয়াইয়ার অপর নাম হযে়ছে ‘দোতারার গান’।

বেনা যন্ত্রের গঠন ও বাদনরীতি কিছুটা বেহালার মতো। নারিকেলের অর্ধাকার একটি মালা বাঁশের দণ্ডের সঙ্গে বেঁধে এটি তৈরি করা হয়। মালার ওপরের দিকে থাকে চামড়ার ছাউনি এবং ছাউনির ওপরে ‘ঘোড়া’র সাহায্যে একগোছা তার দণ্ডের মাথায় কানের সঙ্গে বাঁধা হয়। ঘোড়ার লেজের চুলের তৈরি ধনুকসদৃশ ছড় দিযে় বেনা বাজানো হয়। রংপুর-দিনাজপুরে কুশান ও কেচ্ছা গানে এ যন্যের ব্যবহার আছে। সারিন্দা সাধারণত মুর্শিদি, বিচার ও কেচ্ছা গানে অন্যান্য যনেত্রর সঙ্গে বাজানো হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলায় ছাদ পেটানো ও খেত নিড়ানো গানেও এর ব্যবহার লক্ষণীয়। খমক যন্যটি আনন্দলহরীর অপর নাম। ভক্তিমূলক গানে এটি বাজানো হয়। শূন্যপুরাণ ও মঙ্গলকাব্যে গান ও নাচের বাদ্য হিসেবে খমকের উল্লেখ আছে।

শুষির এ শ্রেণীর বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে বাঁশি সবচেযে় জনপ্রিয়। সব সমপ্রদাযে়র সব শ্রেণীর মানুষই বাঁশি বাজাতে কিংবা শুনতে পছন্দ করে। বাঁশির সুর গানের বাণীকেও ফুটিযে় তুলতে পারে। সারি, ভাওয়াইয়া, যাত্রা, ঘাটু, কবি প্রভৃতি লোকসঙ্গীতের নানা ধারায় অন্য যন্যের সঙ্গে বাঁশি বাজানো হয়; এটি এককভাবেও বাজানো যায়। বাঁশির উপকরণ অতি সাধারণ। সাধারণত এক-দেড় ফুট লমবা চিকন বাঁশ দিযে় এটি তৈরি করা হয়। বর্তমানে কোন কোন বাঁশির দৈর্ঘ্য এর চেযে় বেশিও হযে় থাকে। মাথার দিকে একটি গিঁট রেখে বাঁশ কাটা হয়, যাতে ওপরের দিকটা বন্ধ থাকে; এর অপর প্রান্ত থাকে খোলা। গিঁটের কাছে একটি গোল ছিদ্র করা হয়; এটিকে বলে ফুৎকাররন্ধত্থ। এর নিচে থাকে পরপর ছয়টি গোল ছিদ্র; এগুলিকে বলে তাররন্ধত্থ। ফুৎকাররন্ধেত্থ মুখ রেখে আড়াআডি়ভাবে বাঁশিটি ধরে অপর ছিদ্রগুলিতে দুই হাতের তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকা দিযে় বায়ু নিয়ন্ত্রণ করে এটি বাজানো হয়। আকার ও প্রকারভেদে বাঁশির বিভিন্ন নাম আছে, যেমন: আড়বাঁশি, কদবাঁশি, টিপরাবাঁশি, হরিণাবাঁশি ইত্যাদি। এগুলির মধ্যে আড়বাঁশি সর্বাধিক প্রচলিত। এর অপর নাম মুরলী, মোহনবাঁশি, বেণু প্রভৃতি। শ্রীকৃ্পকীর্তনে কৃ্পের মুরলী বা মোহনবাঁশিকে আড়বাঁশি বলা হযে়ছে। কৃ্প এই বাঁশির সুরেই রাধার চিত্ত হরণ করেছিলেন বলে কথিত হয়। ময়মনসিংহের একটি লোকসঙ্গীতেও একথা বলা হযে়ছে: ‘আষ্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশী মধ্যে দিয়া ছেঁদা/ নাম ধরিয়া ডাকে বাঁশী কলব্জিনী রাধা’ কদবাঁশির মাথা তেরছাভাবে কেটে কাঠের পাতলা খিল আঁটা হয় এবং সেখানে ঈষৎ ছিদ্রপথে ফুঁ দিলেই এটি বাজে। এর নিচে চার কোনাকার একটি উন্মুক্ত বায়ুরন্ধত্থ থাকে। অঞ্চলভেদে কদবাঁশির বিভিন্ন নাম আছে, যেমন: মুখের মধ্যে পুরে বাজাতে হয় বলে উত্তরবঙ্গে ‘মুখাবাঁশি’, মুখের কাছে খিল থাকে বলে ফরিদপুরে ‘খিলবাঁশি’ এবং মুখ কলমের মতো দেখায় বলে ‘কলমবাঁশি’ বলা হয়। আদিবাসীরা একে বলে ‘লয়বাঁশি’। জলপাইগুডি়র মুখাবাঁশি কিছুটা ভিন্ন। বাঁশের ছোট-বড় ব্যাসের কযে়কটি চোঙা পরস্পরের মুখে পুরে লমবা করা হয়। অতঃপর ওপরের সবচেযে় সরূ চোঙাটিতে ফুঁ দিলেই এটি বেজে ওঠে। টিপরাবাঁশির উভয় মুখ খোলা এবং এতে আটটি ছিদ্র থাকে। কদবাঁশির মতো মাথায় ফুঁ দিযে় এটি বাজানো হয়; তবে উভয় প্রান্ত খোলা থাকে বলে এর বাদনে বিশেষ কৌশল ও অভিজ্ঞতার প্রযে়াজন। হরিণাবাঁশি প্রকৃতপক্ষে হরিণ শিকারের বাঁশি। প্রায় এক ফুট দীর্ঘ এ বাঁশির উভয় প্রান্ত খোলা এবং গাযে় কোন ছিদ্র থাকে না। এতে ফুঁ দিলে হরিণশিশুর ডাকের মতো আওয়াজ হয়; এ থেকেই এর নাম হযে়ছে হরিণাবাঁশি।তুবডি় যন্ত্রের আম্ফলিক নাম ‘বীণ’।

এটি প্রধানত সাপুডে়রা সাপধরা ও সাপখেলার কাজে ব্যবহার করে। তাই এর অন্য নাম ‘নাগিন বীণ’।

শঙ্খ বা শাঁখ একটি অতি পরিচিত শুষির যন্য। সমুদ্র থেকে আহৃত শঙ্খের ভেতর-বাইর পরিষকার করে এবং তার নাভি কেটে সেখানে ফুঁ দিযে় বাজানো হয়। শঙ্খ হিন্দুদের পূজা-পার্বণ, বিবাহ ইত্যাদি মাঙ্গলিক ও প্রাত্যহিক অনুষ্ঠান এবং সব্জেতজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া শাঁখ ও ঘ্ম্টা বাজিযে় সন্ধ্যারতি এবং গৃহে প্রবেশের পূর্বে নতুন বর-বধূকে শঙ্খ ও উলুধগ্ধনি দিযে় বরণ করা হয়। প্রকৃতিদত্ত এ বাদ্যযন্যটির ব্যবহার বহৃ প্রাচীন বলে মনে করা হয়। শিঙ্গা বা শৃঙ্গ মহিষ-শৃঙ্গের অবয়ববিশিষ্ট একটি শুষির যন্য। অতীতে মহিষের শিং থেকে এটি তৈরি হতো; বর্তমানে ধাতু নির্মিত শিঙ্গা ব্যবহৃত হয়। শিবের ত্রিশূলের গাযে় ডমরূ ও শিঙ্গা ঝুলতে দেখা যায়। এককালে হিন্দু সাধু-সন্ন্যাসীরা শিঙ্গা ব্যবহার করতেন। ময়মনসিংহ অম্ফলে শিরালিদের মন্যপাঠ ও শিঙ্গা বাজিযে় মেঘ তাড়াতে ও শিলাবৃষ্টি রোধ করতে দেখা যায়। প্রাচীনকালে শিঙ্গা যুদ্ধের বাদ্যযন্য ছিল, একে বলা হতো রণশিঙ্গা। বড় আকারের শিঙ্গাকে বলা হয় রামশিঙ্গা; এগুলি পেতল বা তামার তৈরি। রামশিঙ্গা অতি প্রাচীন যন্য। ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো দীর্ঘ এর অবয়ব। এটিও অতীতে রণক্ষেত্রে বাজানো হতো। ভেরী পেতলের তৈরি বাঁশি জাতীয় যন্ত্র; পূর্বে রণক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। ভেঁপু অব্জুর গজানো আমআঁটির খোসা ছডি়যে় জোড়াবিচি তেরছাভাবে সামান্য ঘষে তৈরি করা হয়। তেরছা অংশ মুখে পুরে ফুঁ দিলে পুঁ পুঁ ধগ্ধনি সৃষ্টি হয়, এ থেকেই এর নাম হযে়ছে ভেঁপু। গ্রামের শিশুদের এটি প্রিয় বাদ্যযন্ত্র। ঘনযন্ত্র এ শ্রেণীর যন্ত্রের মধ্যে কাঁসর প্রধান। এটি কংসনির্মিত ঈষৎ কানাতোলা থালার আকৃতিবিশিষ্ট একটি বাদ্যযন্ত্র। এর এক প্রান্তে দুটি ছিদ্র করে দডি় বেঁধে বাঁহাতে ঝুলিযে় ডান হাতে কাঠির সাহায্যে বাজানো হয়। হিন্দুদের পূজামণ্ডপে ঢোলের সঙ্গে কাঁসরও বাজে। আকারে ঈষৎ ছোট অনুরৃপ যন্ত্রকে বলে কাঁসি। এর ধগ্ধনি অপেক্ষাকৃত তীব্র। বিভিন্ন লোকসঙ্গীতে ঢোলের সঙ্গে কাঁসি বাজানো হয়। ঘ্ম্টা দুই রকমের; লোহা বা পেতলের তৈরি পুরূ থালার মতো ঘ্ম্টা মন্দির ও বিদ্যালযে় সময় নির্দেশ করতে বাজানো হয়। হাতুডি় দিযে় আঘাত করলে এতে ঢং ঢং শষ্ফ হয়, যা বহৃ দূর থেকে শোনা যায়। ধুতরা ফুলের মতো দেখতে আর এক ধরনের ঘন্টা আছে, যা বাজিযে় পূজারীরা দেবতার আরতি করে। খ্রিষ্টানদের গির্জাতেও এ জাতীয় বড় আকারের ঘ্ম্টা বাজে। ধাতুর তৈরি ঐ কাঠামোর ভেতর দিকে ঘডি়র পেন্ডুলামের মতো একটি ছোট দণ্ড ঝোলানো থাকে; ওপরের চৃড়া ধরে নাড়া দিলে এটি যন্ত্রের ভেতরের গাযে় আঘাত করে ধ্বনি সৃষ্টি করে।

শেকলবাঁধা ঘন্টা বাংলার স্থাপত্যশিল্পের একটি মোটিফ বলে গণ্য হয়। অতীতে ডাকঘরের রানার রাতে চলার সময় ঘন্টা ব্যবহার করত। গরূ, ছাগল এমনকি হাতির গলায়ও ঘন্টা বাঁধা হয়। জুডি় কংসনির্মিত দুটি বাটি। এর মাঝখানে ছিদ্র করে মোটা সুতায় বেঁধে দুহাতে ধরে পরস্পরের মুখে টোকা দিযে় বাজানো হয়। বাটির গা স্পর্শ করা যায় না; কারণ তাতে জুডি়র ধ্বনি অস্পষ্ট ও বিকৃত হয়। জুডি় একাধারে তাল, লয় ও ছন্দ নিরৃপণে সাহায্য করে। লোকসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে জুডি়র ব্যবহার আছে। ব্পৈব বৈরাগীরা জুডি় বাজিযে় গান গেযে় ভিক্ষা করে। জুডি়র অপর নাম মন্দিরা। এটি কাঁসার তৈরি; আকৃতি ছোট বাটির মতো। দুটি বাটি পরস্পরের আঘাতে বাদিত হয়। তাল, লয় ও ছন্দ নিরৃপণে মন্দিরা বিশেষ উপযোগী। করতাল পেতলের তৈরি থালার আকৃতিবিশিষ্ট একটি যন্ত্র; এর বাদনরীতি জুডি়র মতোই। করতালের সুতা বা দডি় তর্জনীতে জডি়যে় হাতের তালুতে চাপ ও ছাড় দিযে় এটি বাজাতে হয়। হাতের এই চাপ-ছাডে়র ওপরই করতালের ধগ্ধনির উচ্চতা ও মৃদুতা নির্ভর করে। কীর্তনে খোলের অনুষঙ্গ হিসেবে করতাল অপরিহার্য যন্ত্র। ‘যত ছিল নাড়াবুনে, হল সব কীর্তনে/ কাস্তে ভেঙ্গে গড়ায় কত্তাল।’ এই প্রবাদে কীর্তনে করতালের গুরূত্ব স্বীকৃত হযে়ছে। অম্ফলবিশেষে এটি খঞ্জনি নামেও পরিচিত। খড়তাল জোড়-ধরা দুটি কাঠের ফেত্থম; অনেকটা ছুতার মিস্ত্রির রেঁদার মতো দেখতে। একই হাতের আঙ্গুলে ধরে এটি বাজাতে হয়। ভজনাদি গানে তালবাদ্য হিসেবে এর ব্যবহার আছে। প্রেমজুডি় তাঁতযন্ত্রের মাকুর আকৃতিবিশিষ্ট কাঠের দুফালি টুকরার সাহায্যে নির্মিত হয়। হাতের আঙ্গুলে ধরে পরস্পরের গাযে় আঘাত করে এটি বাজাতে হয়। কাঠের ফেত্থমের ভেতরে লোহার ছোট ছোট গুটি ভরা থাকে; এতে কাঠ ও ধাতুর মিশ্রধ্বনি সৃষ্ট হয়। অম্ফলবিশেষে এটি খুনজুডি় ও চটি নামেও পরিচিত। জিকির, কেচ্ছা, ফকিরালি প্রভৃতি গানে প্রেমজুডি় ব্যবহৃত হয়। তাল কাঁসার তৈরি এটি বাদ্যযন্য; দুটি গোলাকার তাল পরস্পরের সঙ্গে আঘাত করে এই যন্ত্র বাজানো হয়। ঝাঁঝ বা ঝাঁঝর পেতলের তৈরি; এটি মধ্যমাকৃতি ও বৃহদাকৃতি দুপ্রকারের হযে় থাকে। মধ্যমাকৃতির ঝাঁঝ পরস্পরের আঘাতে এবং বৃহদাকৃতি ঝাঁঝ কাঠি দিযে় বাজানো হয়। জলতরঙ্গ কতগুলি চীনা মাটির বাটির সমন্বযে় তৈরি। বিভিন্ন আকারের বাটিগুলি বড় থেকে ছোট ক্রমানুসারে সাজিযে় তাতে পানি নিযে় সুর নির্ধারণ করা হয় এবং দুটি কাঠির সাহায্যে বাটিতে আঘাত করে বাজানো হয়। এটি গানের অনুষঙ্গে অথবা এককভাবেও বাজানো যায়।নূপুর চরণবাদ্য। পেতল বা তামার তৈরি বক্রাকার ফাঁপা নল দিযে় এটি তৈরি হয়। এটি মলের মতো করে পাযে় পড়তে হয়। নূপুর প্রধানত নাচের তালবাদ্য। ঘুঙুর পেতলের ছোট ছোট এক গুচ্ছ বল বা ঘন্টা মোটা সুতায় গেঁথে তৈরি করা হয়। এটিও একটি চরণবাদ্য এবং পাযে়র গোড়ালির ওপরে পরা হয়। প্রধানত নাচের তালবাদ্য হিসেবে ঘুঙুরের ব্যবহার আছে, তবে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সার্কাসের জোকার, বহৃরৃপী, ফেরিওয়ালা ও খেমটাওয়ালারাও ঘুঙুর ব্যবহার করে। আনদ্ধযন্ত্র এ শ্রেণীর বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে দুন্দুভি অতি প্রাচীন।

অতীতে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, জয়যাত্রা ও দেবালযে় দুন্দুভি বাজানো হতো। এর প্রকারভেদ ভৃমি-দুন্দুভি যুদ্ধে বিপদের আশব্জায় এবং বিভিন্ন উৎসব ঘোষণায় ব্যবহৃত হতো। ডিণ্ডিম বাজালে ‘ডিম্ধসঢ়; ডিম’্ধসঢ়; আওয়াজ হয় বলে ধগ্ধনির অনুকরণে এর এরৃপ নামকরণ করা হযে়ছে। ঢাক আন্ধ জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে প্রধান। ঢাকের ব্যবহার অতি প্রাচীন। প্রথমেই বলা হযে়ছে যে, পাহাড়পুরের পোড়ামাটির ফলকে ঢাকাদি বাদ্যযন্ত্রের চিত্র আছে। বড় আকারের কাঠের খোলের উভয় মুখে পুরূ চামড়ার ছাউনি দিযে় ঢাক তৈরি করা হয়। খোলটি আনুমানিক এক হাত ব্যাস ও দুই হাত দীর্ঘ হযে় থাকে। মোটা ফিতার সাহায্যে বাম কাঁধে কোল বরাবর ঝুলিযে় দুই হাতে কাঠির সাহায্যে এটি বাজাতে হয়। বাংলায় ঢাক একটি জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র, তাই একে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে অনেক প্রবাদবাক্যের সৃষ্টি হযে়ছে, যেমন: ‘ধর্মের ঢাক আপনি বাজে’, ‘নিজের ঢাক নিজেই পেটানো’, ‘ঢাক থুযে় চণ্ডী পাঠ’ ইত্যাদি। ‘গাজনের নাই ঠিক ঠিকানা/ ডাক দিযে় কয় ঢাক বাজা না।’ মালদহে প্রচলিত এই প্রবাদে গম্ভীরা নাচ-গানে ঢাক বাজানোর কথা আছে। ঢাকের ব্যবহার আজও বাংলার সর্বত্র অক্ষুণক্ত আছে। বিশেষত হিন্দুদের পূজামণ্ডপে ঢাক ও কাঁসর বাদ্য আবশ্যিক। বড় আকারের ঢাক জয়ঢাক বা বীরঢাক নামে পরিচিত; এগুলি অতীতে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো।ঢোল ঢাকের চেযে় আকারে ছোট। চর্মাচ্ছাদিত এই যন্যটির ব্যবহার অধিক। সঙ্গীত ও নৃত্যকলায় তালবাদ্য হিসেবে ঢোলের ব্যবহার ব্যাপক। কবি, যাত্রা, জারি, গম্ভীরা, আলকাপ প্রভৃতি গানে অন্যান্য যন্ত্রের সঙ্গে ঢোলও বাজে। পূজা, বিবাহ, মুহররমের শোভাযাত্রা, লাঠিখেলা, কুস্তির আখড়া সর্বত্র ঢোল বাজানো হয়। কিছুকাল আগে পর্যন্ত গ্রামেগঞ্জে ঢোল বাজিযে় সরকারি পরোয়ানা জারি করা হতো। একে বলা হতো ঢোল-সহরত। দক্ষ ঢুলি বাদনের কৌশলে ঢোলে বিশেষ বোল তুলতে পারে। ঢোলক হচ্ছে ঢোলের ক্ষুদ্র সংস্করণ। এটি মেযে়লি গীত, খেমটা নাচ-গান এবং কোন কোন ভিক্ষোপজীবীর গানে ব্যবহৃত হয়। ঢোল ও ঢোলক প্রযে়াজন অনুযায়ী বসে বা দাঁডি়যে় বাজানো যায়। ঢামসা চর্মাচ্ছাদিত এই যন্যটির একদিকে মুখ থাকে এবং মুখটি প্রশস্ত। গলার সঙ্গে সামনে ঝুলিযে় দুই হাতে কাঠির সাহায্যে এটি বাজাতে হয়। অতীতে এটি যুদ্ধের বাদ্য ছিল; এখন শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত হয়। খোল সাধারণত মাটির তৈরি; আগুনে পুডি়যে় একে শক্ত করা হয। মাটির তৈরি বলে খোলের শাস্যীয় নাম ‘মৃদঙ্গ’ (= মৃৎ + অঙ্গ)।

এটি একটি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। মোচাকৃতির লমবা খোলের উভয় মুখে চামড়ার ছাউনি থাকে এবং ছাউনির মাঝখানে গাবের তাপ্পি লাগানো হয়। খোলের ডাইনামুখ ছোট এবং বাঁয়ামুখ অপেক্ষাকৃত বড়। ফিতার সাহায্যে গলায় ঝুলিযে় অথবা মাটিতে রেখে বসে খালি হাতে এটি বাজানো হয়। কীর্তন গান ও মণিপুরী নৃত্যের সঙ্গে খোল বা মৃদঙ্গ বাজানো হয়। মধ্যযুগের ভক্তিরত্নাকর কাব্যে খোল-করতালকে শ্রী্কচতন্যের সমপত্তি বলা হযে়ছে।শ্রীখোল মৃত্তিকা নির্মিত একটি আনদ্ধ যন্য, এর গঠন-প্রণালী মৃদঙ্গের মতো। বাংলাদেশের গ্রামাম্ফলে এই বাদ্যযন্যটির প্রচলন বেশি দৃষ্ট হয়। মাদল মাটির খোলের তৈরি স্থৃলাকার একটি যন্য; পল্লী অম্ফলে উৎসবের সময় এটি বাজানো হয়। আদিবাসী সাঁওতালদের মধ্যে এবং ঝুমুর নাচ-গানে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা হয়।বাঁয়া বাটির আকারবিশিষ্ট একটি যন্ত্র। এর মুখে চামড়ার ছাউনি থাকে। বাউলরা বামপাশে কোমরের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে বাম হাতের তালু ও তর্জনী দিযে় এটি বাজায়। এ সময় তাদের ডান হাতে থাকে একতারা। কোন কোন অঞ্চলে এটি ‘ডুগি’ নামেও পরিচিত। একে তবলার লৌকিক সংস্করণ বলা যায়।ডুগডুগি সাধারণত শিবের গাজন, সাপখেলা, বানরনাচ ও ভল্লুকের খেলায় ব্যবহৃত হয়। এর বড় সংস্করণের নাম বিষম ঢাকি। দুটির মধ্যে পার্থক্য হলো, ডুগডুগির মতো এতে গুলতিযুক্ত সুতা বাঁধা থাকে না এবং খাড়াখাডি়ভাবে রেখে হাতের তালু ও তর্জনী দিযে় এটি বাজাতে হয়। পশ্চিমবঙ্গে মনসার ভাসান বা ঝাঁপান গানে বিষম ঢাকি বাজানোর রীতি আছে।কাড়া ধামার মতো দেখতে কাঠের ফ্রেমের একদিকে শক্ত চামড়ার ছাউনি দিযে় তৈরি হয়। ফিতার সাহায্যে গলায় ঝুলিযে় দুহাতে দুটি সরূ কাঠি দিযে় এটি বাজানো হয়। প্রাচীনকালে কাড়া-নাকাড়া যুদ্ধের বাদ্যযন্ত্র ছিল। কাড়া বাজিযে় রাজাদেশ ঘোষণার কথা জানা যায় ঘনরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্যে: ‘কাড়াসোরে কি কথা কোটাল কয় ফুটে।’ ব্রিটিশ আমলেও এর প্রচলন ছিল। খঞ্জরি তালবাদ্য; জারি ও ঘাটু নাচ-গানের আসরে ঢোলের সঙ্গে এটি বাজানো হয়। খঞ্জরির অনুরৃপ আরেকটি যন্য আছে যা ডফ বা ডমজ্ঞ নামে পরিচিত। তবে ডফ আকারে অপেক্ষাকৃত বড়। ডফ ফারসি শষ্ফ; জিপসিদের নাচ-গানে এটি ব্যবহৃত হয়। মুসলমানরা এদেশে ডফ আমদানি করে। ষোলো শতকের কবি মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলে ডমজ্ঞ যন্ত্রের উল্লেখ আছে: ‘প্রমথপতি কাছে/ ত্রিদশ পতি নাচে/ ডমজ্ঞ ধিক ধিক ধিঙ্গা ’ ফরিদপুর অঞ্চলে এটি ‘ডোম্ধসঢ়;ফা’ এবং সিলেটে ‘ডপকি’ নামে পরিচিত। বেদেরা ভোজবাজির খেলায় ঢোলের সঙ্গে ডফ বাজায়। এগুলি ছাড়া পাইল্যা নামে এক ধরনের লোকবাদ্যযন্ত্র আছে। এটি আসলে একটি সাধারণ মৃৎপাত্র, যার নাম পাতিল এবং আঞ্চলিক উচ্চারণে একে বলা হয় পাইল্যা। লোকসঙ্গীতে তালবাদ্যরৃপে এটি ব্যবহৃত হয়। বাদনকৌশলে পাইল্যার পেটে তবলা এবং মুখে বাঁয়া সদৃশ ধ্বনি তোলা হয়। এজন্য একে তবলা-বাঁয়ার লৌকিক সংস্করণ বলা যায়। পাইল্যা একই আঙ্গিকে ঘন ও শুষির যন্যের প্রযে়াজন সিদ্ধ করে। [ওয়াকিল আহমদ] উপজাতীয় বাদ্যযন্ত্র বিশেবর প্রায় সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীই নৃত্যগীতপ্রিয়। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় যে কোন উৎসব-অনুষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র সহকারে তারা একক বা বৃন্দ নৃত্যগীতি পরিবেশন করে। বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহও তাদের এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রবহমান রেখেছে। উত্তরাঞ্চলের সাঁওতালদের নৃত্যগীতে ব্যবহৃত হয় তন্ধসঢ়;দা, টামাক, ডান্ধসঢ়;ডা, ঢাক, ঢোল, বাঁশি, সিঙ্গা, মাদল প্রভৃতি যন্ত্র। বৃহত্তর সিলেটের গারো এবং পার্বত্য চল্টগ্রামের আদিবাসী বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, যেমন: চাকমা, ত্রিপুরা, তঙ্চগ্যা, ম্রো, বম্ধসঢ়;, উসুই, পঙ্খো, খুমি, লুসাই, চাক প্রভৃতি স্ব-স্ব উৎসব-অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্য বাজিযে় থাকে। মারমা ঢোলক মারমা বাঁশি উপজাতীয়দের যন্যগুলি স্থানীয়ভাবে নির্মিত। সেগুলির মধ্যে কতিপয় যন্ত্র বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া বাজানো নিষেধ। ঢোল, বাঁশি ও বেহালার ব্যবহারই উজাতীয়দের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বাঁশি জাতীয় যন্ত্রের মধ্যে রযে়ছে প্লুং, তু, বাজি, শিমুর, শিঙ্গা ও ক্লাওনেট। প্লুং ঐতিহ্যগতভাবে ম্রো ও খুমি জনগোষ্ঠী ব্যবহার করে তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পূজাপার্বণে। ম্রো ভাষায় প্লুং শষ্ফের অর্থ বাঁশি। পাহাডে় উৎপন্ন একপ্রকার তিতা লাউযে়র খোল এবং সরূ বাঁশের নল দ্বারা ম্রো এবং খুমি জনগোষ্ঠী নিজস্ব কারিগরি কলাকৌশলে প্লুং তৈরি করে। নলের সংখ্যানুসারে ম্রো সমাজে এর চার প্রকার নাম প্রচলিত আছে, যেমন: ১. নিচে তিনটি ও ওপরে দুটি নল থাকলে তার নাম তিনতেং প্লুং বা তুলেরূম প্লুং; ২. নিচে দুটি ও ওপরে দুটি থাকলে তাকে বলে প্লুংকে; ৩. নিচে দুটি ও ওপরে একটি থাকলে বলে প্লুংমা এবং ৪. নিচে পাঁচটি ও ওপরে চারটি থাকলে তার নাম হয় রিনাপ্লুং। ম্রো এবং খুমি সমাজে কোনকিছুর জন্য মানত করার বিশেষ অনুষ্ঠানে প্লুং এবং কলেরা, মহামারী অথবা দৈব-দুর্বিপাকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানে কেবল রিনাপ্লুং ব্যবহার করা হয়। বাঁশিকে চাকমা জনগোষ্ঠী বলে বাজি। বিভিন্ন মাপের পাহাডি় বাঁশ দিযে় বাজি তৈরি করা হয়। বাজিতে কিছু কারূকার্যও করা থাকে। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বাঁশির নাম শিমুর। বাঁশের তৈরি সাধারণ বাঁশির চেযে় শিমুর কিছুটা লমবা ও অধিক ছিদ্রযুক্ত। ত্রিপুরাদের ‘পরাইয়া নৃত্য’ ও পূজাপার্বণে এ বাঁশি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত চাকমা ও তম্ফংগ্যা জনগোষ্ঠীর লোকেরা চার-পাঁচ হাত লমবা বাঁশ দিযে় শিঙ্গা তৈরি করে। ঢোল জাতীয় বাদ্যযন্যের মধ্যে রযে়ছে খাইং, খা-অম, বুঙ্গ, পেহ্ধসঢ়; ও গঙ্গ বা দারখোয়াং। উসুই জনগোষ্ঠীর ঢোলের নাম খাইং। দৈর্ঘ্যে দুহাত থেকে আড়াই হাত এবং প্রস্থে এক হাতের বেশি এই বাদ্যযন্যটি বাঘ বা ছাগলের চামড়া এবং হালকা গামারি জাতীয় কাঠের ফেত্থম দিযে় তারা নিজস্ব কারিগরি কৌশলে তৈরি করে। খা-অম খাইং-এর মতোই ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঢোল জাতীয় বাদ্যযন্য। গরাইয়া পূজা ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে খা-অম বাজানো অপরিহার্য। মারমা জনগোষ্ঠীর ছোট আকারের ঢোলকে বলা হয় বুঙ্গ। এটি দৈর্ঘ্যে দশ ইম্ফি এবং প্রস্থে সাত ইম্ফি পর্যন্ত হযে় থাকে। কাঠ ও বন্য পশুর চামড়া দিযে় বুঙ্গ তৈরি করা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অন্য যন্যের পাশাপাশি বুঙ্গও বাজানো হয়। কাঠ ও চামড়ার তৈরি পেহ্ধসঢ়; সাধারণত দুই ফুট লমবা ও এক ফুট চওড়া হয়। এতে কাঠি দিযে় ঢোলের বোল তোলা হয়। অষ্টধাতুর তৈরি চাকতির মতো গোলাকার গঙ্গ বা মঙ্গকে পঙ্খো ভাষায় বলা হয় দারখোয়াং। এর মাঝখানটা থাকে উঁচু; সেখানে কাঠের দণ্ড দিযে় আঘাত করলে ঘ্ম্টার মতো আওয়াজ হয়। ম্রো এবং খুমিদের গোহত্যা অনুষ্ঠানে, শিবপূজারি পঙ্খোদের শিকার ও যুদ্ধনৃত্যে এবং চাকমা, মারমা ও চাকদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে এই বাদ্যযন্য ব্যবহৃত হয়।খেং খরং, বে-আনা, ধুধুক, ক্রি-চয়, ফকির দাঙ্গাইস, সেঁদা, চং প্রেই এবং একতারা হলো বেহালা জাতীয় বাদ্যযন্য। খেং খরংকে মারমারা বলে খ্রে খ্রং এবং ত্রিপুরারা বলে সাংমুঙ্ধসঢ়;। চাকমা, তম্ফংগ্যা, মারমা এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বাঁশের কম্ফি দিযে় এটি তৈরি করে বিভিন্ন আনন্দ-উৎসবে বাজিযে় থাকে। তবে চাকমাদের মধ্যে এর ব্যবহার বেশি। বেহালার মতোই বাঁশ ও কাঠ দিযে় নিজস্ব কারিগরি দক্ষতায় নির্মিত বে-আনাকে চাকমা ভাষায় বলা হয় বেলা, মারমা ভাষায় বেয়াঁজ এবং ম্রো ভাষায় ত্র। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বাঁশনির্মিত এ জাতীয় বেহালার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিল্পকর্ম আদিবাসীদের শিল্প্কনপুণ্যের পরিচয় বহন করে। বেহালা জাতীয় বাদ্যযন্য হিসেবে ধুধুক চাকমা, তম্ফংগ্যা ও ত্রিপুরাদের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত। এ বাদ্যযন্যকে চাকমা ও তম্ফংগ্যারা বলে তুত্ধসঢ়;রূমাও এবং ত্রিপুরারা বলে টুটু-আ। দুপ্রান্ত বন্ধ দুহাত লমবা এক খণ্ড বাঁশের ঠিক মাঝখান বরাবর একটি গোলাকৃতি ছিদ্র করা হয়। তারপর বাঁশের পিঠ থেকে বেত তোলার মতো করে সরূ দুটি বাখারি বের করে বেহালার মতো তৈরি করা হয়। মারমাদের বেহালা জাতীয় বাদ্যযন্য ক্রি-চয়। কাঠ ও কাঁসার সাহায্যে তৈরি এই বাদ্যযন্যে কাঠের গোল চাকতির ওপর পনেরো-বিশটি তার সংযুক্ত থাকে। দুটি কাঠির সাহায্যে এতে সুর তোলা হয়। এদের আর একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্যের নাম দুংমং। ফকির দাঙ্গাইস হলো ত্রিপুরা ও উসুইদের একতারা বিশেষ। কাঠ খোদাই করে একতারার মতো তৈরি করে ঠিক মাঝখানে লমবালমিবভাবে একটি তার স্থাপন করা হয়। কাঠি বা হাত দিযে় তারে সুর তোলা হয়। উসুই নির্মিত ব্যতিক্রমধর্মী গিটার হল সেঁদা। দেখতে অনেকটা ঘুঘু পাখির বাসার মতো। দুই-তিন হাত লমবা ও দেড় হাত চওড়া এক খণ্ড কাঠ খোদাই করে এটি নির্মিত হয়। এর ফাঁপা স্থানটি চামড়া দিযে় আচ্ছাদিত থাকে। এতে তিনটি তার সংযুক্ত করা হয়। চং প্রেই উসুইদের আর একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্য। প্রায় আড়াই হাত লমবা কাঠ খোদাই করে গিটারের মতো তিনটি তার সংযুক্ত করা হয়। এর প্রথম তারটি দিযে় বেশি সুর তোলা হয়। তাই এর নিচে পাঁচটি ছোট কাঠি মোম দিযে় আটকে রাখা হয়। ম্রো এবং খুমি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত একতারা লাউযে়র কিংবা নারিকেলের খোলের সাহায্যে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।

আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহের নৃত্যগীতের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে এসব বাদ্যযন্য আবহমান কাল থেকে ব্যবহৃত হযে় আসছে। এগুলির সঙ্গে তাদের হৃদযে়াৎসারিত আবেগ, সঙ্ঘবদ্ধ জীবনাচরণ, জীবনজীবিকা এবং ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ধ্যানধারণা মিলেমিশে একাকার হযে় আছে। [মোমেন চৌধুরী] উচ্চাঙ্গবাদ্যযন্য এ শ্রেণীর যন্যগুলি সাধারণত রাগসঙ্গীত বা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে ব্যবহৃত হয় এবং এর বেশির ভাগই তত জাতীয়, যেমন: সেতার, সরোদ, এসরাজ, সুরবাহার, বীণা, তানপুরা, দিলরূবা প্রভৃতি। তবে অন্য তিন প্রকার যন্যসমূহের কোন কোনটিও এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন: বাঁশি, সানাই, তবলা ইত্যাদি। প্রথম দুটি আবার লোকবাদ্যযন্যের মধ্যেও গণ্য। ততযন্য সমস্ত ততযন্যই বীণা পর্যায়ভুক্ত, অর্থাৎ তত আর বীণা সমার্থক। বীণা একটি অতি প্রাচীন ও আলাপযোগ্য যন্য। এতে চামড়া ও লোহা উভয় প্রকারের তন্যী ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত বাদ্যযন্যসমূহের মধ্যে বীণা শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃত, কারণ এতে এমন কতগুলি সুর ও গমকের কাজ দেখানো যায় যা অন্য কোন যন্যে সম্ভব নয়। বীণার সুর মধুর, তবে ক্ষণস্থায়ী এবং বেশি দূর পর্যন্ত শোনা যায় না। বিভিন্ন সমযে় বিভিন্ন প্রকার বীণার প্রচলন ছিল এবং সেগুলির গঠন ও সুরে বৈচিত্র্যও ছিল, যেমন: মহতী, আলাপিনী (মেঘতন্যের তাঁত, কার্পাস বা রেশমের সুতা ব্যবহার্য), উদুমবরী, একতন্যী, কিন্নরী, কুষ্ঠিকা, কচ্ছপী, কুমিকা, ঘোষবতী, চিত্রা (সপ্ততন্যী), জয়া, জ্যৈষ্ঠা, তুমবুরূ (তমবুরা), ত্রিতন্যী, ত্রিস্বরী, দক্ষিণী, নকুল (দ্বিতন্যী), নকুলোষ্ঠী, নাদেস্বর, নারদীয়, নিঃশব্জ, পরিবাদিনী, পিণাকী, পোন, প্রসারিণী, বল্লকী, বিপম্ফী (নবতন্যী), ব্রহ্ম, ভরত, মত্তকোকিলা (একবিংশতিতন্যী), রঞ্জনী, রাবণহন্তক, রূদ্র (রবাব), শততন্যী, শারদীয় (সরোদ), শ্রূতি (দ্বাবিংশতিতন্যী), ষট্ধসঢ়;কর্ণ, সারঙ্গ (সারেঙ্গী), সুর (সুরশৃঙ্গার), স্বর ও হন্তিকা। এগুলির অধিকাংশই এখন বিলুপ্ত। কোন কোনটি আবার নতুন নামে প্রচলিত আছে। মহতী বীণা এ শ্রেণীর যন্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য। এরই প্রচলিত নাম বীণা। মীড়-গমক-মূর্ছনার অনুরণনে সুর-লহরীর আবেশময় রৃপ কেবল বীণাযন্যেই ফুটিযে় তোলা সম্ভব। বীণা আদি ও মৌলিক যন্য। পরবর্তীকালের রবাব, সেতার, সুরবাহার, সুরশৃঙ্গার প্রভৃতি ততযন্য বীণা থেকেই উদ্ভৃত। তানপুরা প্রাচীন তমবুরারই নবীন সংস্করণ। এটি এককভাবে বাজানো যায় না, তবে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত ও যন্যসঙ্গীতের ক্ষেত্রে এর প্রযে়াজনীয়তা অপরিহার্য। তানপুরার তারগুলি থেকে যে মধুর স্বর নির্গত হয় তা শ্রোতাদের মনে এক অপূর্ব আবেশের সৃষ্টি করে। রূদ্রবীণা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে বেশ খ্যাত ছিল। স্বরোদীয় বীণা রূদ্রবীণারই উন্নত সংস্করণ। এর ওপরের অংশ সরোদের অনুরৃপ। বর্তমানে এর প্রচলন নেই। স্বরবীণা বা সুরবীণা যন্যটিও দেখতে রূদ্রবীণার মতো। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা আছে, তবে বর্তমানে যন্যটি লুপ্তপ্রায়।

মধ্যযুগে প্রচলিত বীণাগুলির মধ্যে পিণাকী, বল্লকী ও রূদ্রবীণা বিশেষ প্রসিদ্ধ। পিণাকী বীণার আকৃতি ধনুকের মতো, ছডে়র সাহায্যে বাজানো হতো। এর মতো বল্লকী বীণাও বাংলায় বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিল। সপ্তস্বরা নামে একটি যন্যও তখন প্রচলিত ছিল। পূর্বে স্বরমণ্ডল যন্যটি বীণাযন্য নামেই অভিহিত হতো, কিন্ম বর্তমানে স্বরমণ্ডল একটি পৃথক যন্য। ধুসরী বা দুসরী নামে আরেক প্রকার বীণার প্রচলন ছিল, কিন্ম তার সঠিক বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে প্রাচীনকালে ধুসারেকা নামে এক প্রকার বীণা প্রচলিত ছিল। ধুসরী ও ধুসারেকা একই গোত্রের বীণা। কপিলাস বীণা বেশ জনপ্রিয় ছিল। এই যন্যটিকে কপিলাসিকা, কৈলাস বা আদ্যবীণা নামেও অভিহিত করা হতো। কচ্ছপী বীণা কাছূয়া সেতার নামে পরিচিত। এটি একটি পুরাতন ও প্রিয় বাদ্যযন্য। ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতবিদ আমির খসরূ এর আবিষকর্তা। সপ্ততন্যী বীণা দেখতে কচ্ছপী বীণার অনুরৃপ। আমির খসরূ সৃষ্ট ত্রিতন্যী তিন তারবিশিষ্ট বীণা। মহতী, কচ্ছপী ও রূদ্র এই তিনটি বীণার মিশ্রণে সৃষ্টি করা হয় সুরশৃঙ্গার বীণা। তানসেন বংশীয় প্রসিদ্ধ বীণকার জাফর খাঁ ও প্যার খাঁ এ যন্যের উদ্ভাবক। ময়ূরী বীণার নিচের অংশ ময়ূরের আকৃতি বিশিষ্ট; তাই এর নাম ময়ূরী বীণা। এটি তাউস নামেও অভিহিত হতো। সুরবাহার বীণা ধ্রূপদ অঙ্গের যন্য। বর্তমানে এটি শুধু সুরবাহার নামেই প্রচলিত। লক্ষেক্কৗ নিবাসী সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ ওমরাও খাঁ তাঁর শিষ্য গোলাম মোহাম্মদ খাঁর জন্য এ যন্যটি উদ্ভাবন করেন। মধুস্রবা নামে একপ্রকার বীণা মধুস্যন্দী নামেও পরিচিত ছিল। এর সুর খুব মিষ্টি বিধায় নাম হযে়ছে মধুস্রবা। যন্য নামে এক প্রকার বীণার প্রচলন ছিল। মুগল আমলে এই যন্যের সংস্কার সাধন করা হয়।

সেতার উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে ব্যবহৃত বাদ্যযন্যগুলির মধ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। আমির খসরূ এর উদ্ভাবক। সেতার ত্রিতন্যী বীণার উন্নত সংস্করণ। পারস্য ভাষায় ‘সে’ মানে ‘তিন’; তিনটি তারের সমন্বযে় তৈরি বলে আমির খসরূ এর নামকরণ করেন সেতার। প্রাচীনকালে সেতার তিনটি তার সহযোগে বাজানো হতো, কিন্ম যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর রৃপ পাত্র্টাতে থাকে। বর্তমান সেতারে তিনটির পরিবর্তে আঠারোটি পর্যন্ত তার ব্যবহার করা হয়। সেতার দুই প্রকার- সাধারণ ও তরফদার। সাধারণ সেতারে সাতটি তার থাকে। প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা এ ধরনের সেতার ব্যবহার করে। তর্জনীতে মিজরাব লাগিযে় তারে আঘাত করে সেতার বাজাতে হয়। ‘মিজরাব’ আরবি শষ্ফ। আরবি ভাষায় আঘাত করাকে বলে ‘জর্ব’, এ থেকেই মিজরাব হযে়ছে। তরফদার সেতারে সাধারণ সেতারের মতো সাতটি তার ছাড়াও আরও এগারোটি তার সংযুক্ত থাকে। এগুলি অনুরণনের জন্য ব্যবহৃত হয়। মেঘনাদ সেতার গোত্রীয় আলাপের বাদ্যযন্য। এর আওয়াজ বেশ গুরূগম্ভীর। মন্দ্রস্বরের জন্য মেঘনাদ ব্যবহৃত হযে় থাকে। এটি সুরবাহারের চেযে় খানিকটা ছোট, কিন্ম সেতারের চেযে় বড়। র্সুকচন সেতারের অনুরৃপ আরেকটি বাদ্যযন্য। অনেকটা তরফহীন সেতারের বড় সংস্করণ। এ যন্যেও আলাপ বাজানো হযে় থাকে। সরোদ অঙ্গুলিত্র গোষ্ঠীর একটি জনপ্রিয় বাদ্যযন্য। রবাব ও দোতারার সংমিশ্রণে এর উৎপত্তি। রবাব পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের যন্য, আর দোতারা বাংলাদেশের লোকযন্য। প্রকৃতপক্ষে রবাব থেকেই সরোদের উৎপত্তি বলে স্বীকৃত। ‘সেহ্ধসঢ়;রূদ’ শষ্ফ থেকে সরোদের নামকরণ করা হযে়ছে। এসরাজ একটি তত বাদ্যযন্য; এটি আশুরঞ্জনী নামেও পরিচিত। এসরাজ মিষ্টি সুরের যন্ত্র।

সারিন্দা, সেতার ও সারেঙ্গী এই তিনটি যন্যের মিশ্রণে এর জন্ম। এসরাজ এককভাবে এবং গানের সঙ্গে অনুগামী যন্য হিসেবেও বাজানো যায়। তারসানাই দেখতে এসরাজ যন্যের অনুরৃপ। ঊভযে়র গঠনপ্রণালী অভিন্ন। যন্যটির বিশেষত্ব হলো এর প্রধান বা নায়কী তারে একটি সাউণ্ড বক্স থাকে। তারসানাইযে়র সুর বেশ সূপ্ত ও করূণ। দিলরূবা এসরাজ জাতীয় অপর একটি বাদ্যযন্য। গঠনপ্রণালীতে কিছুটা ভিন্নতা আছে। এর খোল এসরাজের মতো গোলাকার নয়, চ্যাপটা। মনোহরা এসরাজ গোত্রেরই তত যন্য। ওস্তাদ আযে়ত আলী খাঁ এর স্রষ্টা। এর সুরের মাধুর্য খুবই আকর্ষণীয়। মন্দ্রবাহার এসরাজ জাতীয় একটি ধনুযন্য। এসরাজের চেযে় এর আকৃতি বড়। মন্দ্রবাহারের আওয়াজ বেশ গম্ভীর ও মন্দ্র। এটি আলাপ বা অনুগামী যন্য। নাদতরঙ্গ এসরাজ গোত্রের ততযন্য; এসরাজের মতো ছড় দিযে় বাজানো হয়। নাদতরঙ্গ সম্মেলক বা ঐকতান যন্যসঙ্গীতে ব্যবহৃত হয়। সুরমণ্ডল বহৃতারবিশিষ্ট একটি ততযন্য। এর তারগুলি জোড়া সুর হিসেবে বাঁধা হয় এবং তিন সপ্তকের সুরে বেঁধে দুটি কাঠি দিযে় জোড়া তারের ওপর আঘাত করে বাজাতে হয়। সুরমণ্ডল এককভাবেও বাজানো যায়, আবার অনুগামী যন্য হিসেবেও বাজানো যায়। সন্মর সুরমণ্ডল জাতীয় বাদ্যযন্য; এর গঠন-প্রকৃতি ও বাদ্যরীতি সুরমণ্ডলের ন্যায়। এটি একক বা ঐকতান যন্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সারেঙ্গী অনুগত যন্য হলেও বর্তমানে স্বতন্য যন্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে এর বিশেষ ব্যবহার আছে। অর্ধচন্দ্রাকৃতি ছড় দিযে় যন্যটি বাজাতে হয়। সারেঙ্গীর আওয়াজ মিষ্টি। গজল, খেয়াল, টপ্পা, কাওয়ালি, ঠুংরি ইত্যাদি গানের সঙ্গে সারেঙ্গী বহৃলভাবে ব্যবহৃত হয়। মন্দ্রনাদ মন্দ্রস্বরের একটি অনুগতসিদ্ধ বাদ্যযন্য। এর উদ্ভাবক ওস্তাদ আযে়ত আলী খাঁ। সুররবাব বাজাবার নিয়ম সুরশৃঙ্গারের মতো।

স্বরসংগ্রহ যন্যের দণ্ডটি এসরাজের মতো, কিন্ম খোলটি সরোদের মতো। অশবগুচ্ছযুক্ত ছড় দিযে় এটি বাজানো হয়। এর উদ্ভাবক ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁ। যন্যটি ‘বীণরাজ’ নামেও পরিচিত। মেঘডমবুর আফতাবউদ্দিন উদ্ভাবিত আরেকটি যন্য। এক তারবিশিষ্ট এ যন্যটি দেখতে ধনুকের মতো। অর্ধচন্দ্রাকার ছড় দিযে় এটি বাজাতে হয় এবং এর সুর খুব মিষ্টি।শুষিরযন্য এ জাতীয় যন্যের মধ্যে সানাই প্রধান। এটি বাঁশি গোত্রের একটি যন্য। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের পাশাপাশি লোকসঙ্গীতের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার আছে। এর ‘সানাই’ নামকরণ হযে়ছে ফারসি শষ্ফ শাহ্ধসঢ়;নাই থেকে, যার অর্থ বড় নল। যে শুষিরযন্যের নলটি বড়, সেটাই সানাই। মুসলিম বিজযে়র পর যন্যটি বাংলাদেশে আসে। ধুতরা ফুলের মতো পেতলের তৈরি যন্যটি ফুঁ দিযে় বাজানো হয় এবং নলের ছিদ্রে দুই হাতের আঙুল দিযে় স্বর নিয়ন্যণ করা হয়। সানাই যন্যটি সাধারণত এককভাবে বাজানো হয় না। এক প্রকার সানাই আছে যাতে একটানা ষড়জ (সা) স্বরটি বাজানো হয়; তার সঙ্গে ছোট টিকারা যন্যে সঙ্গত করা হয়। এই তিনটি যন্য সমবেতভাবে বাজালে তাকে বলে রৌশনচৌকি, যার প্রচলিত নাম নহবত। পূর্বকালে নহবত বাজানোর জন্য রাজপ্রাসাদের প্রধান তোরণের উপরিভাগে নহবতখানা নির্মাণ করা হতো। সেখানে প্রতি প্রহরান্তে নহবত বাজাবার রীতি ছিল। হিন্দু-মুসলমান উভয় সমপ্রদাযে়র বিবাহাদি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে সানাই বাজে; পুরূলিয়ার ছৌ-নাচে সানাই ব্যবহৃত হয়। ন্যাসতরঙ্গ নামে ধাতুর তৈরি আর এক প্রকার শুষিরযন্য আছে; শবাস-প্রশবাসের সাহায্যে এ থেকে সুর বের করতে হয়।ঘনযন্য উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে ঘনযন্যের তেমন ব্যবহার নেই।

আনদ্ধযন্য এ শ্রেণীর যন্যের মধ্যে পাখোয়াজ উল্লেখযোগ্য। এটি প্রাচীন মৃদঙ্গ থেকে সৃষ্ট এবং কাঠের তৈরি। ‘পাখোয়াজ’ শষ্ফটি ফারসি শষ্ফ ‘পাখ-আওয়াজ’ (যা থেকে পবিত্র ধগ্ধনি নিঃসৃত হয়) থেকে গৃহীত হযে়ছে। এর আওয়াজ মধুর ও গম্ভীর। মৃদঙ্গের সঙ্গে পাখোয়াজের আকৃতিগত পার্থক্য আছে। বীণা, সুরবাহার, ধ্রূপদ, ধামার প্রভৃতির সঙ্গে পাখোয়াজ বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। ওস্তাদ আমির খসরূ পাখোয়াজকে দুভাগে ভাগ করে তবলা-বাঁয়ার সৃষ্টি করেন। তবলা-বাঁয়া সঙ্গীতের তাল ও মাত্রা নির্দেশক যন্য। এটি মূলত অনুগামী যন্য এবং যুদ্ঞ্চভাবে বাজানো হয়; তবে স্বয়ংসিদ্ধ যন্য হিসেবেও এর ব্যবহার আছে। আধুনিক বাদ্যযন্য এ শ্রেণীর বাদ্যযন্য বলতে সাধারণত সেগুলিকেই বোঝায়, যেগুলির উদ্ভব ভারতবর্ষে নয় এবং আধুনিককালে পাশ্চাত্য থেকে এদেশে এসেছে। হারমোনিয়াম, বেহালা, গিটার ইত্যাদি এই শ্রেণীর যন্য। হারমোনিয়াম এক ধরনের শুষির যন্য। সংযুধসঢ়;ক্ত বেলোর সাহায্যে বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে প্রযে়াজনমতো রিড চালনা করে এটি বাজানো হয়। এতে তিন ধরনের স্বরবিভাজন থাকে উদারা, মুদারা ও তারা। ক্মঠসঙ্গীতে এর ব্যবহার অপরিহার্য। বেহালা ইউরোপীয় যন্য হলেও বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। ইংরেজরা একে ‘ভায়লিন’ এবং ইতালীয়রা ‘ভিয়ালো’ বলে। ‘ভিয়ালো’ শষ্ফের অপভ্রংশ হিসেবে ‘বেহালা’ শষ্ফটি প্রচলিত হযে়ছে। মুগল আমলে পাশ্চাত্য বণিকরা এ যন্য এদেশে নিযে় আসে এবং ক্রমে তা জনপ্রিয়তা লাভ করে।

রাগসঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত উভয় ক্ষেত্রেই বেহালা বাদিত হয়। বেহালায় হালকা কাঠের তৈরি চ্যাপ্টা বাদনপ্রকোষ্ঠের সঙ্গে একটি ক্রমশ সরূ ও ক্ষুদ্র বাদনদণ্ড থাকে। চার তারবিশিষ্ট এই যন্যের দুটি তার তাঁত, একটি লৌহ এবং অপরটি নিকেল নির্মিত। লোমের তৈরি ছডি় দিযে় এতে সুর তোলা হয়। বেহালার সুর মানুষের ক্মঠস্বরের মতো মনোহর। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে বাংলায় আখড়াই গানে এর বিশেষ ব্যবহার ছিল। একক বা সম্মিলিত বাদনে এটি ব্যবহৃত হয়।গিটার ছয় তারবিশিষ্ট তত জাতীয় যন্য। এটি দেখতে প্রায় বেহালার মতো, তবে আকারে বেহালার চেযে় বড়। গিটার দুই প্রকার স্প্যানিশ ও হাওয়াইন। বর্তমানে সঙ্গীতক্ষেত্রে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি বাদ্যযন্য। যন্যটি একক কিংবা ঐকতানে বাদিত হয়; গানের সঙ্গে রাগালাপেও এটি ব্যবহৃত হযে় থাকে।

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ১৭, ২০১৩।

তথ্যসূত্র- বাংলাপিডিয়া, মোবারক হোসেন খান-গ্রন্থপঞ্জি, নীহাররঞ্জন রায়ের, বাঙ্গালীর ইতিহাস (আদি পর্ব), কলকাতা, ১৯৪৫; রাজেশবর মিত্রের, বাংলার সঙ্গীত (মধ্যযুগ), কলকাতা, ১৯৫৫; জিতেন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত’র, ভারতীয় বাদ্যযন্য ও যন্ত্রসাধক, কলকাতা, ১৯৫৮; মোবারক হোসেন খান, বাদ্যযন্য প্রসঙ্গ, ঢাকা, ১৯৮২; জাফর আহমদ হানাফীর উপজাতীয় নন্দন সংস্কৃতি, বাংলাদেশ শিল্প একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯৩;

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.